কিভাবে চিন্তামুক্ত থাকবেন


আপনি কিভাবে চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করবেন


মানুষ কখনো তার ভাবনার বাইরে যেতে পারবে না। মানুষের ব্রেন সবসময় কোন না কোন কিছু নিয়ে বিশ্লেষণ করতে থাকে, তারপর বিশ্লেষিত তথ্য থেকে খুব দ্রুত প্রক্রিয়া করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। যদি তাই না হত, তাহলে আমি আপনি কোন সড়ক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনে নদী পেলে নদীর মধ্যে গিয়েও হাঁটতে থাকতাম। মস্তিষ্ক সিগনাল দেয় বলেই আমাদের সম্পূর্ণ অঙ্গ প্রতঙ্গ সেই অনুযায়ী কাজ করে। তেমনিভাবে হাঁটতে হাঁটতে যখন পেছন থেকে বাস, ট্রাকের হর্ণ শুনতে পাই, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে সাইড দিয়ে নিজেকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নেই। এই যে “আমি” শব্দটা কীবোর্ডে লিখলাম সেজন্য টাইপ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট “আ” বাটনের ‍দিকে হাত বাড়ালাম, এটাও মস্তিষ্ককে চিন্তা করতে হয়েছে।

আবার সারাদিনের কথাবার্তায় অন্য কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সাথে সাথে আমরা তার প্রাসঙ্গিক উত্তরটাই দিয়ে ফেলি। আর এরকম উত্তর দিতে গেলেও মস্তিষ্ককে চিন্তা করতে হয়। আমরা ঘুমের মধ্যে থাকলেও মস্তিষ্ক কাজ করে তার সমস্ত শরীরকে চালায়। ভাবনা গুলোও ঘুমের মধ্যে প্রসেস হতে থাকে। স্বপ্ন তারই নীরব প্রতিফলন।

তাই আপনি আপনার অপ্রত্যাশিত চিন্তাকে বন্ধ করতে না চেয়ে চিন্তাগুলোকে অন্য কোন চিন্তা দিয়ে প্রতিস্তাপন করতে পারেন। আর এটাই দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ। একটা উদাহরণ দেই, ধরুন আপনার প্রেমের সম্পর্কটা সম্প্রতি ব্রেকআপ হয়ে গেছে, আর কিছুতেই আপনার গার্লফ্রেন্ড/ বয়ফ্রেন্ডকে সম্পর্কে ফেরানো সম্ভব নয়। মস্তিষ্ক তখন দীর্ঘ দিনের অভ্যাস জনিত ক্রিয়া কলাপ গুলো আর প্রসেস করার জন্য পাচ্ছে না। যেমন: আপনি তার সঙ্গে একসাথে খাচ্ছেন, হাঁটছেন, বিভিন্ন ভাল লাগা, মন্দ লাগা অনুভুতিগুলো শেয়ার করছেন , সব প্রিয় কথার ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকতেন ফোনালাপ করতে, এমনকি সে এটা বললে আপনি ওটা বলবেন, সে এরকম কথা বললে আপনি ওরকম উত্তর দিবেন এসব নিয়েও জল্পনা কল্পনা করতেন। এতদিন আপনার ব্রেইনের প্রোগ্রামে এসব টাস্কসমুহ প্রসেস হতে হতে সে এগুলোকে তার দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে ধরে নিয়েছে।

ব্রেনকে যদি একটা সফটওয়ার হিসেবে ধরেন, তাহলে তার প্রগ্রামিং থেকে এসব টাস্কগুলোকে সরাতে হবে। সেখানে আপনি অন্য কোন কাজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যস্ত রাখতে হবে যত দিন আগের অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া কাজগুলো তার স্ক্রিপ্ট থেকে রিমুভ না হয়। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে নতুন নতুন কিছু কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে। অথবা পুরনো কাজের সাথে নিজেকে বেশি করে জড়িয়ে ফেলতে হবে। যাতে ব্রেন আগের রিমুভ করা স্থানে নতুন কিছু প্রক্রিয়া করার সুযোগ পায়, আর তাই নিয়ে ভাবতে পারে। আর এটা না করতে পারলে মস্তিষ্ক শুধু পুরনো এলগরিদম এর কারণে প্রাক্তনের ক্রিয়াকলাপের অভাবে ভুগবে এবং এমন কেন হল কেন হল, সে কেন এমন করে চলে গেল ভাবতে থাকবে।

এতক্ষণ যন্ত্রের ভাষায় কথাগুলো বর্ণনা করলেও এখন সহজ কথায় আসি। আপনি চিন্তা মুক্ত হতে চান মানে ধরে নিতে হবে চিন্তাকে থামিয়ে দেয়া নয়, যা চাইছেন না তা বাদ দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে যাতে আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। আর এজন্য নিজেকে কর্ম ব্যস্ত করে তুলতে হবে। সেটা হতে পারে কোন আউটডোর খেলা ধুলা, কোন উপার্জনের কাজ। নিজেকে ব্যস্ত রাখাই হলো দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ। একটা বিষয় বলে ইতি টানব, একজন কুলি বা একজন মাটি কাটে এমন পরিশ্রমি মানুষকে একদিন পর্যবেক্ষণ করুন। দেখবেন কাজ শেষে ঘরে ফিরে তার মস্তিষ্ক কতটা রিল্যাক্স ফিল করে, কারন ব্রেন অনেক প্রসেস করেছে, এখন সে একটু থামতে চায়, শান্তির ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়ে দুই তিন ঘন্টার মধ্যেই ।

No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)