
JAIBB Exam - সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা (সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতি):
আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও এর মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্য
অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের সুবিধা ও অসুবিধা
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য
কার্যসন্তুষ্টি ও তার প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান
কার্যসন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতা
মানসিক চাপ, মানসিক চাপের কারণ ও লক্ষণ
মানসিক চাপ ও কার্য ক্ষমতার সম্পর্ক
মানসিক স্বাস্থ্য ও তা উন্নয়নের উপায়
মানসিক চাপ ও কার্য ভারের প্রভাব বিস্তার /মানসিক চাপের মাত্রা ও ব্যক্তিত্ব
সাংগঠনিক আচরণ ও এর প্রকৃতি
সাংগঠনিক আচরণের মূল চালিকা শক্তি
সাংগঠনিক আচরণের মডেলসমূহ
নেতৃত্ব ও নেতৃত্বের লক্ষণ/ বৈশিষ্ট্য, নেতৃত্বের উপাদান, গুরুত্ব:
নেতৃত্বের প্রকারভেদ ও দক্ষতাসমূহ
তত্তাবধান পরিসর ও কাম্য তত্তাবধান পরিসরের নির্ধারক
গ্রেকিউনাসের সুত্র
সা বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থাপনা
উদ্দেশ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও এর সুবিধা-অসুবিধা
ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থাপনা
ব্যবস্থাপনার আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের উপাদান
ব্যস্থাপনায় পরিবেশের গুরুত্ব/ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হলো পরিবেশ
পরিকল্পনা, পরিকল্পনার গুরুত্ব
উত্তম পরিকল্পনার গুণ/বৈশিষ্ট্য
সময় ব্যবস্থাপনা ও সময় ব্যবস্থাপনার মূল উপাদান/দক্ষতাসমূহ
সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নত করার কৌশল
কার্যকর নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকীয় উপাদান
ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব
নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বা প্রক্রিয়া
নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল
বাজেটারী নিয়ন্ত্রণ ও এর সুবিধা-অসুবিধাসমূহ
টাইম ইভেন্ট নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
দলীয় সংযোগশীলতা/ সংহতি
উৎপাদনশীলতা ও কার্য সন্তুষ্টির উপর দলীয় সংযোগশীলতার প্রভাব
আনুষ্ঠানিক সংগঠন:
যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটা প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তাকে সংগঠন বলে।
সাধারণ অর্থে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যে সংগঠন গঠিত হয় তাকে আনুষ্ঠানিক বলে।
ব্যাপক অর্থে, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পিত ও সঠিকভাবে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দায়দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ, কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের কাঠামো নির্ধারণপূর্বক ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিগত প্রয়াসকে আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলা হয়। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিকলক্ষ্য অর্জনেরজন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর উপরথেকে নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গেরমধ্যে সংগঠনিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে সংগঠন কাঠামো দাঁড় করানো হয় তাকে আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলে।
ম্যাক্স ওয়েবার এর মতে আনুষ্ঠানিক সংগঠনগুলো আইন দ্বারা এক সংস্থাভুক্ত একটি দল।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য/মূলনীতি:
১) নীতি ও পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত ২) শ্রম বিভাজন ৩) আন্তঃসম্পর্ক ৪) সুচিন্তিতভাবে তৈরী ৫) অব্যক্তিক সম্পর্ক ৬) স্থিরতা ৭) সুগঠিত ৮) স্থায়ীত্ব ৯) কঠোর আদেশের শৃঙ্খল
অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ:
সুবিধা: ১) দ্রুত যোগাযোগ ২) সামাজিক চাহিদা পূরণ ৩) সঠিক ফলাবর্তন ৪) সম্পর্কের উন্নয়ন ৫) দলীয় ঐক্য ৬) আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ৭) অঙ্গীকার সৃষ্টি ৮ ) সৃজনশীলতার প্রসার ৯) শীর্ষ ব্যবস্থাপকের কার্যভার লাঘব:
অসুবিধা: ১) অবাধ্যতা ২) গুজব ছড়ায় ৩) কোন পদ্ধতিগত কাঠামো নেই ৪) নেতিবাচক ফলাফলের সম্ভাবনা ৫) চাপ সৃষ্টি ৬) পরিবর্তনে বাধা ৭) বিশেষায়নের অভাব
কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা ও পরিধির চাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সুসংগঠিত সংগঠন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যে সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো যত বেশি ক্রিয়া কৌশলী সে সংগঠন তত বেশি কার্যকরভাবে টিকে থাকে।
সংগঠনের কাজের ধরণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য বিদ্যমান । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সংজ্ঞাগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন সংগঠনকে বুঝায় যেটি কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হয়ে থাকে । এসব সংগঠনের পিছনে আইন প্রক্রিয়ার সমর্থন থাকে।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এসব সাংগঠনিক কাঠামোকে বুঝায় যেখানে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষত্রুটি পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়ন করতে চেষ্টা করা হয়।
২. কাঠামোগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ সংগঠন আইনি কাঠোমোর বাইরে গিয়ে কোনো কার্যক্রম সম্পাদন করে না। আনুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রতিটি ধাপেই সুনির্দিষ্ট কাঠামোর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠোমো নেই। এ জাতীয় সংগঠন কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে বিধায় এর কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই।
৩. উৎপত্তিগত :সাধারণত কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সংগঠন জন্ম লাভ করে। এ ধরনের সংগঠন কতিপয় সুপ্রতিষ্ঠিত বিধি বিধানের আলোকে পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে জন্মলাভ করে । এটি অনেকাংশে মানুষের মনের কোনো আকস্মিক আবেগগত সম্পাদনের লক্ষ্যে উৎপত্তি লাভ করেছে।
৪. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্ব নির্ধারিত এবং মূলত মুনাফা অর্জন ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেও তা হঠাৎ অর্জনের জন্য নয়, বরং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়।
৫. কর্তৃত্বের বিচার : সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সর্বদা পদসোপান নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে এ জাতীয় সংগঠনে প্রতিটি কর্মী সুনির্দিষ্ট কর্তৃত্বের অধিকারী।
পক্ষান্তরে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সর্বদা মাঠ পর্যায় থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয় বিধায় এখানে ব্যক্তি কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো কর্তৃত্ব লাভ করে না।
৬. কর্মীদের আচরণ : কর্মীদের আচরণগত দিক থেকেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা সংগঠনের নিয়মনীতির আওতাধীন থেকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে বিধায় আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ অনেকটা প্রশংসিত।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় তা দলীয় আচরণ হিসেবে পরিগণিত হয় ।
৭. নমনীয়তা: সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠন যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে কর্মী সংগঠনের জন্য কঠোর ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়িত হয় বিধায় এখানে ব্যবস্থাপনা অতটা জোরালো হয় না।
৮. আইনগত ক্ষেত্রে ভিন্নতা : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ আইনগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে সব কার্যক্রম আইনগতভাবে সম্পাদিত হয়।
অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই এবং তা প্রচলিত রীতিনীতির
ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
৯. সংগঠনের পূর্ণাঙ্গতায় : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে পরিচালিত হয় বিধায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কথা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা থাকে না বিধায় তা অপূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
১০. নিয়ন্ত্রণগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। কেউ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না ।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে আইনগত দিকের চেয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাংগঠনিক কাঠামো ক্ষমতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। বিভিন্ন বিচারে কতিপয় পার্থক্য থাকলেও এই দুই ধরনের সংগঠন প্রশাসনিক কর্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
* (Courtesy: rkraihan.com)
ব্যস্থাপনায় পরিবেশের গুরুত্ব/ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হলো পরিবেশ:
ব্যবসায়িক পরিবেশ হল অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকেউপাদানের সংমিশ্রণ যা একটি ব্যবসার পরিচালনাকে প্রভাবিত করে। ব্যবসায়িক পরিবেশ সামাজিক, অর্থনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থার যেমন- কর্মচারী, গ্রাহক, স্টেকহোল্ডার, অন্যান্য সংস্থা, নীতি বা সম্পদ ইত্যাদি সাথে জড়িত হতে পারে। যদিও এমন এমন কিছু কারণ আছে যেগুলো ব্যবসায়িক পরিবেশে অবদান রাখে কিন্তু তা একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য একটি সংগঠনের জন্য তার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কোন সংগঠনের বিকাশ, বৃদ্ধি এবং স্বার্থক উন্নতিতে এবং ব্যবসার প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সাড়াদানের জন্য তার ব্যবস্থাপক এবং বিশ্লেষকগণকে অবশ্যই ব্যবসায়িক পরিবেশ অধ্যয়ন করতে হবে।
ব্যবস্থাপনার পরিবেশে সম্পর্কে ওযাকিবহাল থাকার গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
১. সংগঠনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ২. সংগঠনের বিকাশ ঘটে: ৩. ব্যবসায়ের সম্ভাবনা তৈরী: ৪. ব্যবসায়ের ঝুঁকি চিহ্ণিত করে: ৫. উদ্ভাবন: ৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ৭. অভিযোজনযোগ্যতা ৮. সুনাম ও কর্পোরেট ইমেজ তৈরীতে সহায়তা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হলো পরিবেশ।
https://www.indeed.com/career-advice/career-development/business-environment-importance
কার্য সন্তুষ্টি:কার্য সন্তুষ্টি বহুমাত্রিক বিষয়ের প্রতি কর্মীর আবেগীয় প্রতিক্রিয়ার সমন্বিত ধারণা। কেননা, কার্য বা কর্ম সন্তুষ্টি কাজ ও কাজের পরিবেশ সম্পর্কিত নানা বিষয়ের প্রতি কর্মীর অন্তরস্থ অনুভুতি। কাজ ও তার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে কর্মীর অনুভূতি ধনাত্বক বা ঋণাত্বক হতে পারে । কর্মীর প্রত্যাশা এবং কাজের বিনিময়ে গৃহীত পুরষ্কার যখন সামঞ্জস্যপূর্ণ তখন কার্য সন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ কার্য সন্তুষ্টি কাজ ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়াদি র কর্মীর অভাব ও চাহিদা মেটানোর ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং কাজ, কার্য পরিবেশ ও অন্যান্য পারিপার্শিক অবস্থার প্রতি কর্মীর অন্তস্থ অনুভুতিকে কার্য সন্তুষ্টি বলে।
কার্য সন্তুষ্টির নির্ধারকসমূহ বা প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান:
ব্যক্তিক উপাদান: ১) বেতন ২. বয়স ৩. লিঙ্গ ৪. শিক্ষাগত স্তর ৫. পেশাগত স্তর ৬. কার্য পরিবেশ ৭. চাকরির নিরাপত্তা ৮. সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক ৯. অভিজ্ঞতা ১০. দক্ষতার ব্যবহার ১১. বুদ্ধিমত্তা
কর্ম সম্পর্কিত উপাদান: ১. বেতন ২. চাকরির নিরাপত্তা ৩. চ্যালেঞ্জিং কাজ ৪. সহায়ক সহকর্মী ৫. উন্নতির সুযোগ ৬. অনুকূল তত্তাবধান ৭. স্বায়ত্ত শাসন ৮. দায়িত্ব ও কর্তব্য
কার্য সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা:
কাজের সন্তুষ্টি হল একজন কর্মী তার কাজ দ্বারা কতটা পরিপূর্ণ বোধ করছেন এবং তিনি তার পেশাগত অবস্থানে কতটা সন্তুষ্ট আছেন তার পরিমাপ। মুরগি এবং ডিমের মতো - সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা ইতিবাচকভাবে একে অন্যকে চক্রাকারে উৎসাহিত করে। যখন আমরা উত্পাদনশীল কিছু সম্পন্ন করি (উদাহরণস্বরূপ, আমাদের করণীয় তালিকায় একটি কাজ শেষ করা) তখন আমাদের মস্তিষ্ক পুরস্কার হিসাবে ডোপামিনের মতো ভাল-অনুভূতির রাসায়নিক নির্গত করে, যা আমাদের সন্তুষ্ট এবং আনন্দিত করে। আমরা যখন সন্তুষ্ট এবং খুশি বোধ করি, তখন আমাদের অন্য কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ আমরা জানি যে কাজটি শেষ করে উঠতে পারলে আমাদের মন ভাল বোধ করবে।
অন্যদিকে, উৎপাদনশীলতার সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা (আমাদের মতে) হল যে ব্যস্ত থাকাটা উৎপাদনশীল হওয়ার মতোই। প্রকৃতপক্ষে, অনেক বেশি করণীয় কাজের তাগিদ থাকা আসলে সিদ্ধান্তের ব্যপক জটিলতার কারণে উত্পাদনশীলতার উপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি খুব বেশি অভিভূত হয়ে পড়লে এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে তা মানসিক চাপের কারণ ঘটাতে পারে।
বাস্তব ক্ষেত্রে কার্য সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনের সম্পর্ক খুবই জটিল। অওনক কর্মীর প্রাপ্ত পারিশ্রমিক দ্বারা এটা প্রভাবিত হয়। কোন কর্মীর প্রাপ্ত পুরষ্কার তার কার্য সম্পাদনের উপর নির্ভর করে। আর এ কারণেই মাঝে মাঝে কার্য সন্তুষ্টি এবং কার্যফলের মধ্যে কিছুটা সহ সম্পর্ক দেখা দেয়। এ থেকে ধারণা জন্মাতে পারে যে কার্যসন্তুষ্টি কার্ফরের দিকে ধাবিত হয় কিনা। অধিক উৎপাদন কিভাবে কার্যসন্তুষ্টি আনে তা প্রকাশ করার জন্য পোর্টার এবং ললার একটি মডেল প্রদান করেছেন। তাদের মতে উৎপাদনশীলতা কার্যফরের দি ধাবিত হয়। আবার কার্যফল পারিশ্রমিকের দিকে ধাবিত হয়।
মডেলটিকে নিম্নোক্তভাবে দেখানো যায়:
কার্যসম্পাদন > পুরষ্কার > উপলব্ধিকৃত আনুপাতিক মজুরি > কার্যসন্তুষ্টি
উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, কর্মীর কার্যফলের উপর তার সন্তুষ্টি নির্ভর করে। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কর্মী কাজ করে। এই পারিশ্রমিক আবার দুই ধরণের হতে পারে: আভ্যন্তরীণ পুরষ্কার ও বাহ্যিক পুরষ্কার। কর্মী সর্বদা আত্মতৃপ্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আবার পুরষ্কার বা পারিশ্রমিক নেতিবাচকও হতে পারে। তবে এরুপ ক্ষেত্রে কর্মী কাজে অসন্তুষ্ট হয়।
পদ্ধতিগত ধারণা অনুযায়ী কার্যসন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতার সম্পর্ক চক্রাকার। এদের একটি অপরটিকে প্রভাবিত করে। এ মডেলে অনুমান করা হয় যে কার্ফলের পুরষ্কার কার্যসন্তুষ্টির দিকে ধাবিত হয়। এতে কর্মী অধিক উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের জন্য বেমি প্রচেষ্টা ব্যয় করে। ফলে উচ্চ প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়। এই উচ্চ প্রচেষ্টা কার্যকর দক্ষতার দিকে ধাবিত হয়। এটি পূনরায় চক্রাকারে সম্পর্কের সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত হয়। এই মডেল থেকে এটাই প্রতিপন্ন হয় যে, কার্যকর নেতৃত্ব বজায় রেখে উচ্চ কার্যসন্তুষ্টি উৎপাদনশীরতাকে বৃদ্ধি করে।
সুতরাং উচ্চ মাত্রার কার্যসন্তুষ্টি থাকলে ঐ সমস্ত কর্মী দ্বারা উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য:
একজন কর্মীর শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষনের যথাযথ প্রকাশ তথা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার মানসিক সুস্থতাকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলে। শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিক শক্তির ব্যবহারের সক্ষমতার উপর ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে। প্রকৃতিগত ও অর্জিত সকল মানসিক সম্ভাবনাসমূহের মুক্ত ও পূর্ণ প্রকাশের ক্ষমতাকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলে।মানসিক চাপ:
কারো জীবনে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার কারণে ব্যক্তির মধ্যে যে চাপ বা উদ্বিগ্নতা তৈরী হয় তাকে মানসিক চাপ বলে।কর্মী যখন তার চাহিদা সাফল্যের সাথে সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তখন সে মানসিক চাপ অনুভব করে।
গ্রিফিন এর মতে, “শক্তিশালী উদ্দীপকের প্রতি কোন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াকে মানসিক চাপ বলে।”
পরিশেষে বলাযায়, প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড, কাজের প্রকৃতি, কার্যধারা, উচ্চ শব্দ, ক্রমাগত অতিরিক্ত কাজ, প্রাপ্তির চাহিদা ও প্রতিবন্ধকতা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে কর্মীর উপর যে শারীরিক মানসিক নিষ্পেষণ সৃষ্টি হয় তাকে মানসিক চাপ বলে।
মানসিক চাপের কারণ: Dec -23
মানসিক চাপের প্রধান কারণ ৩ টি, যথা: ১) পরিবেশগত ২) সাংগঠনিক এবং ৩) ব্যক্তিগত উপাদান।
পরিবেশগত কারণ: ১) অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ২) রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ৩) প্রযুক্তিগত অনিশ্চয়তা
সাংগঠনিক কারণ: ১) কাজের প্রত্যাশা ২) দায়িত্ব কর্তব্যের দাবি ৩) আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ৪) সাংগঠনিক কাঠামো এবং ৫) সাংগঠনিক নেতৃত্ব ৬) সংগঠণের জীবনকাল
ব্যক্তিগত কারণ: ১) পারিবারিক ইস্যু ২) অর্থনৈতিক সমস্যা ৩) ব্যক্তিত্ব
তীব্র মানসিক চাপ বা বার্ন আউট:
বার্ণ আউট হল একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। যখন একজন ব্যক্তি শারীরিক , মানসিক এবং তার সম্পূর্ন মনোবল হারিয়ে ফেলে তখন তার এই অবস্থাকে বার্ন আউট বলে। এটা এমন এক অব্ষত্ যেকান থেকে একজন মানুষ উত্তরনের পথ খুঁজে পায় না এবং কর্মী তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এবং এধরণের চাপের কারণে অনেক কর্মী দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির স্বীকার হয়।
মানসিক চাপের লক্ষণ:
১) স্বাস্থ্যগত সমস্যা: ২) আবেগজনিত সমস্যা: ৩) মূল্যবোধের পতন ৪) নৈতিকতা ও বিশ্বাসের ঘাটতি:
৫) আচরণে পরিবর্তন ৬) মনোভাবে পরিবর্তন ৭) অন্যান্যদের সাথে সম্পর্কের অবনতি
মানসিক চাপের সাথে কর্মক্ষমতার সম্পর্ক (Relationship between Stress and Job Performance): Dec '23
মানসিক চাপ কাজের কর্মক্ষমতার জন্য সহায়ক না ক্ষতিকর তা নির্ভর করে এর স্তরের উপর। যখন চাপ একেবারেই অনুপস্থিত থাকে, তখন এটি কাজের চ্যালেঞ্জকে সীমাবদ্ধ করে এবং কর্মক্ষমতা কম হয়। মানসিক চাপ ধীরে ধীরে বাড়লে, কাজের ক্ষমতাও বাড়তে থাকে, কারণ মানসিক চাপ একজন ব্যক্তিকে কাজের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ এবং ব্যবহার করতে সহায়তা করে।
গঠনমূলক চাপ কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ যোগায় এবং তাদের বিভিন্ন কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। অবশেষে, একটি সময় আসে যখন চাপ তার সর্বোচ্চ সম্পৃক্ততার বিন্দুতে পৌঁছে যা কর্মচারীর প্রতিদিনের কার্যক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিন্দুর বাইরে, চাপ কর্মক্ষমতার উন্নতিতে আর কোন লক্ষণ দেখা যায় না।
অবশেষে, চাপ খুব বেশি হলে, এটি একটি ক্ষতিকারক শক্তিতে পরিণত হয়। একই সাথে অতিরিক্ত চাপ কর্মক্ষমতার উপর কুপ্রভাব পড়ায় কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। একজন কর্মচারী কাজের চাপ মোকাবেলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় এবং অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করে। যদি মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে তবে এটি একটি সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে যায়। এই সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন কর্মচারী খুবই বিপর্যস্ত এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়। শীঘ্রই সে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে ও কর্মক্ষমতা শূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থায় কর্মী আর তার নিয়োগকর্তার জন্য কাজ করতে উৎসাহ পায় না, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। অবশেষে সে চাকরি ছেড়ে দেয় বা তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
সুতরাং মানসিক চাপ খুব বেশি বা খুব কম হওয়া উচিত নয়। এটি অবশ্যই কর্মচারীর সহনীয় ক্ষমতা, তার কর্মক্ষমতা স্তরের পরিধি এবং সীমার মধ্যে হতে হবে। সীমার মধ্যে থাকা নিয়ন্ত্রিত মানসিক চাপ অনিয়ন্ত্রিত মানসিক চাপের চেয়ে সর্বদাই উপকারী এবং উৎপাদনশীল।
মানসিক স্বাস্থ্য/মানসিক চাপ উন্নয়নের বা ব্যবস্থাপনার উপায়: Dec-23
১) মানসিক চাপের কারণ অনুসন্ধান: ২) পরিস্থিতির উন্নয়ন: ৩) পরামর্শ:
৪) গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ: ৫) সামাজিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: ৬) কর্ম পরিবেশ ও শর্তাবলি পরিবর্তন:
৭) কর্মীদের কল্যাণে কর্মসূচি গ্রহণ ৮) সুস্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা ৯) শারীরিক ব্যায়াম অনুশীলন
১০) কর্মীদের প্রত্যাশা ও মনোভাবের পরির্তন ১১) কর্মশালা ও আলোচনা অনুষ্ঠান ১২) শ্রান্তি বিনোদন ( sabbaticals)
১৩) দায়িত্ব অর্পন ১৪) ইতিবাচক থাকা ১৫) স্বীয় সীমারেখা নির্ধারণ ১৬) শ্বাস নেয়া
১৭) বায়োফিডব্যাক বা স্নায়ু পর্যবেক্ষণ : এটি নিউরোফিডব্যাক নামেও পরিচিত। এর মাধ্যমে প্রকৃত সময়ের ভিত্তিতে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করা হয়। বায়োফিডব্যাক রোগীদের অস্বাভাবিক মস্তিষ্কের প্যাটার্নের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে সাহায্য করতে ব্যবহার করা হয়, যা উদ্বেগজনিত ব্যাধি, প্যানিক অ্যাটাক, বিষণ্নতা এবং অনিদ্রার লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। ১৮) পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:
মানসিক চাপ ও কার্য ভারের প্রভাব বিস্তার /মানসিক চাপের মাত্রা ও ব্যক্তিত্ব (Vulnerability):
মানসিক চাপ একই কাজ কর্মীর কার্য ক্ষমতাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের উপর মানসিক চাপ ভিন্নভাবে কাজ করে। মানসিক চাপের প্রভাবকে নিম্নোক্ত দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
১) মানসিক চাপের সুত্রপাত: মানসিক চাপের ক্ষেত্রে এর সুত্রপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক চাপের নেতিবাচক অনুভূতিতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে একজন কর্মী কতটা চাপ নিতে পারে তা কর্মীর নিজস্ব দক্ষতার উপর নির্ভর করে। কিছু ব্যক্তির মানসিক চাপের শুরুটা কম হয়। এবং ছোট ছোট চাপের ফলে তাদের দৈনন্দিন কাজ কম বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে কার্য দক্ষতায় তেমন প্রভাব পড়ে না।
২) অনুভূতির নিয়ন্ত্রণ : দ্বিতীয় অভ্যন্তরীণ কারণ হল সংগঠনের কাজ এবং কাজের পরিবেশের উপর কর্মীর অনুভূত নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ। অর্থাৎ একজন
কর্মচারী পরিবেশের প্রতিকূল অবস্থার আঘাতসমূহ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে
তার মাধ্যমে তার মানসিক চাপ প্রভাবিত হয়। যে সব কর্মীর যথেষ্ট পরিমাণ
কাজের স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীকার আছে তারা
কাজের চাপকে আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারে।
প্রথম শ্রেনীর লোকেরা আক্রমণাত্মক ও প্রতিযোগিতামূলক, উচ্চ মান সেট করে, নিজেদের এবং অন্যদের সাথে অধৈর্য হয়, এবং চলমান সময়ের চাপের মধ্যে বিরাজ করে। এ ধরণের ব্যক্তিরা মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত শারীরিক অসুস্থতার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যেমন- হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা আরও প্রফুল্ল এবং উদ্বেগহীন দেখায়। তারা লড়াই করার পরিবর্তে পরিস্থিতিকে গ্রহণ করে প্রতিদ্বন্দিতার সাথে কাজ করে। এই শ্রেনীর ব্যক্তিরা বর্তমান সময়ের সাথে নমনীয়তা দেখায়, তাই তারা মানসিক চাপের শিকার কম হয়।
সাংগঠনিক আচরণ: De-23
সাংগঠনিক আচরণ হলো আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়নের একটি ক্ষেত্র। সামাজিক ভাবেই মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্থ। এ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সংগঠিত সমাজব্যবস্থা। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় মানুষের সব উদ্যম, উদ্যোগ ও কর্মকান্ড কোনো না কোনো ধরনের সাংগঠনিক পরিবেশের মধ্যেই পরিচালিত হয়। সাংগঠনিক আচরণ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আস্থা, কর্মতৃপ্তি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়।
সাংগঠনিক আচরণ বলতে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত জ্ঞানের অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োগকে বুঝায়।
Dec-23 সাংগঠনিক আচরণের মূল চালিকা শক্তি বা প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ (Key Forces):
১) মানুষ ২) কাঠামো, ৩) প্রযুক্তি ৪) পরিবেশ, ৫) সামর্থ্য
৬) দলীয় সদেস্যদের উপর আন্তঃনির্ভরশীলতা ৭) সাংগঠনিক সংস্কৃতি ৮) উপলব্ধি বা অনুভূতি ৯) মূল্যবোধ ১০) সংস্কৃতি ১১) বিদ্যমান সংগঠনের দুর্বলতা ১২) প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ১৩) প্রেষণা ১৪) কর্মশক্তির ধরণ ১৫) ব্যক্তিত্ব
সাংগঠনিক আচরণের প্রকৃতি/বৈশিষ্ট্য (Nature):
১) অধ্যয়নের ক্ষেত্র ২) মানবীয় আচরণের পূর্ব ধারণা ৩) আন্তঃশাস্ত্রীয় শাখা (Interdisciplinary approach ) ৪) বহুমুখীতা ৫) বিজ্ঞান ও কলা ৬) নিয়ম নীতির বিজ্ঞান ৭) মানবতাবাদ ও আশাবাদ ৮) সংগঠনের লক্ষ্য কেন্দ্রিক ৯) সামগ্রিক ব্যবস্থা মতবাদ (Total System approach) ১০) ব্যাপকতা ১১) স্থায়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন ১২) মানিয়ে চলা
সাংগঠনিক আচরণের প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন (Apply or Implementation):
১) লক্ষ্য নির্ধারণ ২) আচরণের লক্ষ্যমাত্রা সুস্পষ্টকরন ৩) লক্ষ্যের সংখ্যাগত পরিমাপ ৪) সমস্যা সম্পর্কে ধারণা ৫) সমাধানের পন্থা নির্ধারণ ৬) সংখ্যাগত মূল্যায়ন
সাংগঠনিক আচরণের মডেলসমূহ:
১) সৈরতান্ত্রিক মডেল (custodial ): এই মডেলের মৌলিক ভিত্তি হল ক্ষমতা। এখানে কর্মীদেরকে শুধু শৃঙ্খলা ও আদেশ পরিপালনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
২) রক্ষণাবেক্ষণ /তত্তাবধানমূলক মডেল (custodial ): সংগঠনের ভেতর ন্যয়সঙ্গত মজুরি ও সুযোগ সুবিধা কর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্দি করে। তত্তাবধানমূলক কৌশল কর্মীদের উপর ব্যবস্থাপকের আধিপত্য সীমিত করে রাখা হয় এবং কর্মীদেরকে সংগঠনের প্রতি নির্ভরশীলতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করতে উৎসাহিত করে। এই মডেলটি মূলত পুরস্কার ভিত্তিক।
৩) সমর্থনমূলক মডেল (supportive ): এই মডেল কর্মীদেরকে শুধু অর্থ শক্তির দিকে ধাবিত না করে কাজের দিকে ধাবিত করে। এতে কর্মীর মনস্তত্ব উদ্দীপনা, কাজের প্রতি আগ্রহের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হল কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া কলাপকে শক্তিশালি করা।
৪) অংশীদারিত্বের মডেল (collegial) : এটি সমর্থনমূলক মডেলের বিস্তৃত রূপ। এই মডেল কর্মী ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে উভয় পক্ষ একটি দল হিসেবে কাজ করে এবং এক অন্যকে সম্মান করে। এটি ঐতিহ্যগতভাবে কর্মী ও নিয়োগকারীর পারস্পরিক অবদানের মূলনীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
৫) পদ্ধতিগত মডেল (system model): এটি সবচেয়ে সমসাময়িক মডেল। এই মডেলে সংগঠনের সার্বিক কাঠামো ও দলীয় পরিবেশের উপর আলোকপাত করে। এই তত্তে ধরা হয় যে প্রত্যেক কর্মীর লক্ষ্য, প্রতিভা ও সামর্থ্য আলাদা। পদ্ধতিগত মডেলে ব্যক্তি ও সংগঠনের লক্ষ্যমাত্রার বারসাম্য বজায় রাকতে সচেষ্ট হয়।
কর্মজীবনের মান উন্নয়ন পরিমাপের মানদন্ড/ বিবেচ্য বিষয় (Key Issues/ Criteria for Quality of Worklife):
QWL কর্মসূচি হল মানব সম্পদের অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে কোন সংগঠন কতৃক গৃহীত কার্যক্রমের সমাহার, যার মাধ্যমে সংগঠনে একজন কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতা প্রভাবিত হয়।
১) অবাধ যোগাযোগ ২) পুরস্কার ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার সমতা ৩) নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ৪) পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ ৫) স্বামর্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ ৬) কর্মক্ষেত্রে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ৭) কাজের নিরাপত্তা ৮) নিয়মতান্ত্রিকতা ৯) কর্ম ও জীবনের মান উন্নয়ন ১০) সামাজিক মূল্যবোধের প্রাসঙ্গিকতা
কর্মজীবনের গুণগতমান উন্নয়নের কৌশল (Strategy of Improving QWL Program):
১) নমনীয়/বিকল্প কার্যসূচী: নমনীয় সময়, সুবিন্যস্ত কর্মঘন্টা, সঙ্কুচিত কর্ম সপ্তাহ (Staggered Hours), খন্ডকালীন কর্ম সম্পাদন, কাজের বিনিময়, গৃহে বসে কর্ম সম্পাদন ইত্যাদি সুবিধা দেয়া
২) কার্য সমৃদ্ধি বা কাজকে ঢেলে সাজানো: কার্য সমৃদ্ধি হল এক একাধিক কৌশল যা নিয়োগকর্তারা তাদের কোম্পানিতে কর্মচারীদের মনোবল বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন। কাজের সমৃদ্ধি ব্যক্তিকে তাদের সত্যিকারের দক্ষতা এবং লুকানো সম্ভাবনার বিকাশ এবং আবিষ্কারের আরও সুযোগ করে দেয়।
৩) কাজের বিস্তৃতি: কোন কাজের দুটি দিক আছে- প্রশস্ততা ও গভীরতা। কোন কাজ সংক্ষিপ্ত পরিসরে শেষ করে আরো কয়েকটি কাজ সম্পাদন করলে একঘেয়েমি লাঘব হয়।
৪) কাজের ঘুর্ণায়মানতা: কিছু দিন পর পর কাজ পাল্টে নতুন কিছু করার সুযোগ করে দেয়া ৫) পেশাগত উন্নয়ন ৬) স্বায়ত্ব শাসিত কর্মী দল তৈরী ৭) ব্যবস্থাপনায় কর্মীর অংশগ্রহণ ৮) কাজের নিরাপত্তা ৯) সাম্য ও ন্যয় বিচার
কর্মজীবনের গুণগতমান কার্যক্রম বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা (Limitations/Drawbacks):
১) দুর্বল কর্ম পরিবেশ : কষ্টকর ও অনিরাপদ কাজের অবস্থা, অপর্যাপ্ত আলো বাতাস, কোলাহলপূর্ণ, অধিক তাপমাত্রা ... ২) অপর্যাপ্ত পারিতোষিক ৩) পেশাগত উন্নয়নের সুযোগের অভাব
৪) কাজ ও ব্যক্তি জীবনের ভারসাম্যহীনতা: মানসিক চাপবিষন্নতায় ভোগে ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে..
৫) দুর্বল ব্যবস্থাপনার অনুশীলন: অকার্যকর যোগাযোগ, সহযোগীতার অভাব, অতিরিক্ত তদারকি ..কর্মী ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে অবিশ্বাস তৈরী করে
৬) বৈষম্য ও হয়রাণি: লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও যৌণ হয়রাণি কর্ম পরিবেশে বৈরী অবস্থার তৈরী হয়।
৭) ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাব ৮) ব্যয়বহুল ৯) সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য নয় ১০) বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি: সকল কাজে অর্থবহ হয় না ..
কার্য সমৃদ্ধির সুবিধা (Benefits of Job Enrichment):
কার্য সমৃদ্ধি হল প্রেষণা দানের এমন একটি কৌশল যা কাজের মান উন্নত করার মাধ্যমে কর্মীদের কাজকে আরও বেশি অর্থবহ, পরিপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় । এটি কর্মীদের মধ্যে সুপ্ত দক্ষতা ও অন্তর্ণিহিত পূর্ণ সম্ভাবনাসমূহ বুঝতে এবং অর্জন করতে সহায়তা করে। এই উদ্ধেশ্য সাধনের জন্য প্রায়শই তাদেরকে নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বাবলি বন্টন করা হয়। কার্য সমৃদ্ধি কর্মচারীদের এমন কাজ করার সুযোগ দেয় যা মূলত তাদের জন্য বর্ণিত ও নির্ধারিত কাজ থেকে ভিন্ন।
উদাহরণ
স্বরূপ, নিয়োগকর্তারা তাদের কর্মীদের নির্দিষ্ট কাজগুলি সম্পাদন করার
জন্য অধিকতর স্বাধীনতা দিতে পারেন যা তাদের জন্য কার্যকর হতে পারে, যার ফলে
তাদের কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানির সামগ্রিক দক্ষতার উন্নতি
হয়। তারা কর্মীদেরকে তাদের কাজের জন্য অধিকতর দায়বদ্ধতা সৃষ্টির জন্য
তাদের আরও দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে।
সহজভাবে বলা যায়, কার্য সমৃদ্ধি হল কাজের দায়িত্ব, ক্ষমতা, পরিধি, কার্য সন্তুষ্টি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পুনর্বিন্যাস পূর্বক কর্মীকে অধিকতর চ্যালেঞ্জিং কাজে সম্পৃক্ত করা।
![]() |
Org. & Mgt. এর পরবর্তী অংশ |
সাংগঠনিক পরিবর্তন:
সাংগঠনিক পরিবর্তন হচ্ছে, সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এবং নতুন পদ্ধতির বাস্তবায়ন হিসাবে করা হয় যা একটি সংস্থাকে তার ব্যবসায়িক পরিবেশের পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং নতুন ব্যবসার সুযোগগুলি দখল করতে সহায়তা করে। সাংগঠনিক কাঠামোর ব্যবস্থাপনা হল পরিবর্তিত জ্ঞান, সরঞ্জাম এবং সম্পদসমূহের সুসংগঠিত ও পদ্ধতিগত প্রয়োগ যা সংস্থাগুলিকে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
আর এম হজেটস এর মতে, “পরিবর্তন হল বর্তমান অবস্থার সংশোধন বা পরিবর্তিত রূপ।”
পরিবর্তন একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই বলা যায় যে, পরিবর্তন হল যেকোনো গতিশীল বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রতিক্রিয়া যা বর্তমান বাস্তবতাকে পরিবর্তন করে।
পরিবর্তনের শক্তি বা উৎস বা কারণসমূহ:
পরিবেশগত পরিবর্তন: ১. অর্থনৈতিক পরিবেশ ২. রাজনৈতিক পরিবেশ ৩. আইনগত পরিবেশ ৪. সাংস্কৃতিক পরিবেশ ৫. জনসংখ্যাগত পরিবেশ
১. কাঠামোগত পরিবর্তন ২. মনস্তাত্বিক পরিবর্তন ৩. প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ৪. ব্যবস্থাপকীয় পরিবর্তন: ৫. সামাজিক গতিধারা ৬. লক্ষ্য ও মূল্যবোধ ৭. প্রতিযোগীতা ৮. বিশ্ব রাজনীতি
পরিবর্তন প্রবর্তনের কৌশল:
১. পরিবর্তনের উদ্দেশ্য বা চাহিদাগুলো শনাক্তকরণ: ২. সংগঠনের পরিবর্তন আওতাভুক্ত উপাদানসমূহ নির্ধারণ ৩. ফলপ্রসু পরির্তনের পরিকল্পনা ৪. পরিবর্তনের কারণ বা উৎসসমূহের মূল্যায়ন ৫. উর্ধতন ব্যবস্থাপনা হতে শুরু করা ৬. ফলার্তন জানা ও বিশ্লেষণ ৭. ঝুঁকি প্রশমনের প্রস্তুতি গ্রহণ ৯. কার্যকর যোগাযোগ ১০. প্রশিক্ষণ প্রদান ১১. পরিবর্তনে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ: ক) পুরাতন ধ্যান ধারণা মুক্ত করা (unfreezing) খ) পরিবর্তনের প্রয়োগ এবং গ) নতুন শিক্ষা ও পদ্ধতি আকড়ে ধরা (refreezing)
পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া বা বাধাসমূহ:
১. ব্যক্তিগত নেতিবাচক মনোভাব: ব্যক্তিগত ইতিহাস ও কার্য পরিবেশ
২. হথর্ণ প্রভাব : হথর্ণ গবেষণা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলগত স্বার্থ সংরক্ষণে পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এতে দলের বাহিরের প্রত্যেক কর্মী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
৩. দলগত প্রতিক্রিয়া ৪. আভ্যন্তরীণ সাম্য সংরক্ষণ
৫. পরিবর্তন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান ৬. স্বল্প বা অদক্ষ যোগাযোগ
৭. পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় কর্মীদের জড়িত করতে ব্যর্থতা ৮.সাংগঠনিক সংস্কৃতি বদলের প্রতিরোধ
৯. অপর্যাপ্ত সম্পদ বা বাজেট ১০. পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থাপনা সহায়তার অভাব
১১. পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির অভাব ১২. ব্যর্থ পরিবর্তন উদ্যোগের অতীত অভিজ্ঞতা
বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থাপনা (Management style or pattern) :
সংগঠনের সকল ধরণ নির্বিশেষে ব্যবস্থাপনা প্রধানত তিন প্রকার:
১) স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ২) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ৩) অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা (Laissez-faire)
এদের আবার উপ বিভাগ রয়েছে: স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা: ১.কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা: ম্যানেজাররা তাদের অধস্তনদের যা করতে চান ঠিক তা নির্দেশ করে এবং যারা মেনে চলে না তাদের শাস্তি দেয় ।
২. প্ররোচিত ব্যবস্থাপনা: এই ব্যবস্থাপনায়, ম্যানেজাররা তাদের প্ররোচনামূলক দক্ষতা ব্যবহার করে কর্মীদের বোঝান যে ম্যানেজার যে একতরফা সিদ্ধান্তগুলি প্রয়োগ করে তা দল, বিভাগ বা সংস্থার ভালোর জন্য।
৩. পিতৃত্বসুলভ ব্যবস্থাপনা: স্বৈরাচারী ব্যবস্থাপনার উন্নত সংস্করণই হল পিতৃত্বসুলভ ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যদিও, কর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করা হয়, কিন্তু সহযোগিতা বা প্রশ্ন করার জন্য কোন সুযোগ নেই।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা:- ১. উদ্দেশ্যভিত্তিক: মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগ, উপ বিভাগ, দল, ও ব্যক্তিকে কিছু উদ্দেশ্য নির্ধারন করে দেয়া হয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাদ্যমেই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। ২. অংশগ্রহণমূক (y তত্ত্ব) : কর্মীদের কোম্পানি এবং এর লক্ষ্য সম্পর্কে আরও তথ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় এবং সমাধানগুলি উদ্ভাবনের জন্য উত্সাহিত করা হয়। ব্যবস্থাপনা কর্মীদের চিন্তাভাবনা, ধারণা এবং মতামত খোঁজে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কর্মীদের সাথে একসাথে কাজ করে এবং তারপর কোম্পানি এর উপর কাজ শুরু করে।
৩. পরামর্শমূলক: পরিচালকরা তাদের দলের প্রতিটি সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরামর্শ করে তাদের দলের মতামত এবং চিন্তাভাবনা জিজ্ঞাসা করেন। ৪. ব্যতিক্রম ভিত্তিক: এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিজের কাছে রেখে বাকি.. ৫. সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাপনা : ব্যবস্থাপনা সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়মের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ধারণাগুলি ব্যাপকভাবে আলোচনা করার জন্য একটি উন্মুক্ত ফোরাম তৈরি করে। কর্মীদের ফলাফলের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়... ৬. রূপান্তরমূলক ব্যবস্থাপনা : পরিচালকরা তাদের কর্মচারীদের সাথে কাজ করে, ভবিষ্যত সাফল্যের পথ বাড়ানো এবং উন্নত করার নতুন উপায় উদ্ভাবন ও বিকাশের জন্য কর্মীদের উৎসাহিত করে এবং অনুপ্রাণিত করে
৭. কর্মী কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা
অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা:- ১. লাগামহীন ২. অভিযান ভিত্তিক ৩. আলোড়ন ভিত্তিক: কর্মীদের জড়তা ও অলসতা দূর করার জন্য কিছু চমকপ্রদ ব্যবস্থা নেয়া হয়.....
উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা: বস্তুত উদ্দেশ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যর প্রতিফলন। একে সংক্ষেপে Management by Objectives বা MBO বলে। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যর সাথে সংগতিপূর্ণ বিভিন্ন স্তরের সাথে পরস্পর স্মঞ্জস্যপূর্ণ অসংখ্য উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তবায়নই হল উদ্দেশ্যবিত্তিক ব্যবস্থাপনা। এ ব্যবস্তাধীনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য কতিপয় সাংগঠনিক উদ্দেম্য নির্ধারন করা হয়। মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগ, উপ বিভাগ, দল, ও ব্যক্তিকে পরস্পরের পরিপূরক কিছু উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা করে দেয়া হয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। এ প্রক্রিয়াটি সমগ্র প্রতিষ্ঠানব্যাপী সমান্তরাল, উল্লম্ব ও পাশাপাশি বিরাজমান থাকে।
উদ্দেশ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনার সুবিধা: ১. স্বচ্ছ ও সমন্বিত উদ্দেশ্যাবলী প্রতিষ্ঠা: ২. কর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণঃ ৩. বাস্তবধর্মী উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা ৪. আত্ম নিয়ন্ত্রণের সুবিধা ৫. উত্তম ব্যবস্থাপনা ৬. কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি ৭. দলগত প্রচেষ্টার প্রতিফলন ৮. সম্পর্ক উন্নয়ন ৯. মুখ্য দায়িত্বের ক্ষেত্র নির্ধারণ ১০. কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন ১১. ব্যক্তিগত অঙ্গীকারের উন্নয়ন
অসুবিধাসমূহ: ১. মূল দর্শন অনুধাবনে ব্যর্থতা ২. লক্ষ্যমাত্রা প্রতিষ্ঠায় কাঠিন্য ৩. লক্ষ্য বাস্তবায়নকারীকে যথাযথ নির্দেশিকা প্রদানে ব্যর্থতা: ৪. স্বল্পকালীন উদ্দেশ্যের উপর গুরুত্বারোপ ৫. বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ৬. অনমনীয়তা ৭. সাময়িক উদ্দেশ্য সাধনে উপকরণাদির উপর গুরুত্বারোপঃ ৮. ব্যয়বহুল পদ্ধতি ৯. শীর্ষ ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরতা:
ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থাপনা (MBE): ব্যতিক্রম ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা হল ব্যবসায়িক নেতৃত্বের একটি নীতি যেখানে যখন নির্ধারিত পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় শুধুমাত্র তখনই ব্যবস্থাপনাকে হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় । এই পদ্ধতির লক্ষ্য হল ম্যানেজারদেরকে জটিল সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে সক্ষম করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মচারীরা পরিচালনা করতে পারে এমন সমস্যাগুলি এড়িয়ে যাওয়া বা কম মনোযোগ দেওয়া। একটি সমস্যার জটিল দিকগুলি সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা সংক্ষিপ্ত এবং বিশদ প্রতিবেদন পায় । এটি তাদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং সবচেয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করে। MBE অনুমান করে যে যতক্ষণ পর্ন্ত ফলাফলসমূহ নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মচারীরা রুটিন দায়িত্বগুলি পরিচালনা করতে সক্ষম। ম্যানেজারদের শুধুমাত্র ভিন্নতা মোকাবেলায় হস্তক্ষেপ করতে হবে। যখন ফলাফল পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হয়, তখন MBE কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য, একটি সংস্থার একটি বাজেট, রিপোর্টিং ব্যবস্থা এবং ব্যতিক্রম ম্যাট্রিক্স প্রয়োজন।
পরিকল্পনা:
ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অগ্রিম কল্পিত চিত্রকেই পরিকল্পনা বলে। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ভবিষ্যতের অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণই হচ্ছে পরিকল্পনা। মূলত পরিকল্পনা হচ্ছে একটি চিন্তনীয় কাজ। পরিকল্পনার উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভরশীল। সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অধ্যাপক নিউম্যান বলেছেন, “ভবিষ্যতে কি করতে হবে, তার অগ্রিম সিদ্ধান্তকেই পরিকল্পনা বলে।"
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, কোন দৈব শক্তি বা নিয়তির উপর নির্ভর না করে প্রত্যাশিত কার্যফল ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে পূর্ব চিত্র নির্ধারণকে পরিকল্পনা বলে। সাধারণত অতীত অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের উপায়-উপাদানের সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে একাধিক বিকল্পের মধ্য হতে সঠিক বিকল্পটি পরিকল্পনা হিসেবে গৃহীত হয়। এটি একটি অবিরাম প্রক্রিয়া।
![]() |
Org. & Mgt. এর সংক্ষিপ্ত টীকা অংশ |
পরিকল্পনার গুরুত্ব:
১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা (Helps to achieve objective): প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ পরিচালনা করে। পরিকল্পনার প্রধান কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করা।
২. অনিশ্চয়তা দূরীকরণ (Removing uncertainty): প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই কাজ করতে হয়। ভবিষ্যৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, সে সম্পর্কে পরিকল্পনার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়।
৩. উৎপাদনের উপকরণের যথাযথ ব্যবহার (Proper utilization of the factors of production): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য উৎপাদন উপকরণের (ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন) সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।
৪. ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (Development and expansion of business): প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হয়।
৫. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency): দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খল কাজের মাধ্যমে শুধু সমস্যাই বাড়ে।
৬. অপচয় হ্রাস (Minimizing wastage): সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে অতিরিক্ত ব্যয় কমে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুচিন্তিত কাজ করা হলে কাজ সম্পাদনে খরচ অনেক কম হয়।
৭. অন্যান্য ব্যবস্থাপকীয় কাজের ভিত্তি (Base of other managerial function): পরিকল্পনাকে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের কাঠামো নির্ধারণ, কাজের দায়িত্ব বণ্টন এবং নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হয়। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ কাজকে সহজ করে দেয়।
৮. সমস্যা সমাধান (Problem solving): বর্তমানে জটিল ব্যবসায় জগতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সমস্যার কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় বলে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলিতে কোনো বিঘ্ন ঘটে না। বরং, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
৯. ভবিষ্যৎ কাজের রূপরেখা (Outline of future activities): পরিকল্পনাকে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের নকশা বা রূপরেখা বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে। ফলে তারা তাদের করণীয় সম্পর্কে আগে থেকেই জানতে পারেন। এতে কর্মীরা মানসিক প্রস্তুতিসহ কাজ করতে পারেন
১০. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন (Implementing decision): এর মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন বা সম্পর্ক নিশ্চিত করা হয়। ফলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত কার্যাবলির সমন্বয়সাধন সহজ হয়। এতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।
১১. ভবিষ্যৎ দর্শন (Future foreseeing): পূর্বানুমান ও অতীত কার্যক্রমের ভিত্তিতে পরিকল্পনা তৈরি হয়। এর সাহায্যে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি অনুধাবন করা যায়।
১২. ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা দূরীকরণ (Removing risk and uncertainty): যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঝুঁকি অনিশ্চয়তার মধ্যে কাজ করতে হয়। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা দূর করা বা এড়িয়ে চলা যায়।
১৩. প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন (Organizational development): যেকোনো ধরনের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একটি সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে গতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
১৪. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Follow proper course of action): পরিকল্পনা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করে। এর ফলে ব্যবসায়ের পরিবেশ কাম্য অবস্থায় বিরাজ করে ও একজন ব্যবস্থাপক প্রাসঙ্গিক এবং মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করে মুখ্য উদ্দেশ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ:
১. ভবিষ্যৎ সুযোগ সুাবধা সম্পর্কে জানা: > ২. তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ > ৩. উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ধারণ > ৪. পরিকল্পনার পটভুমি প্রতিষ্ঠা > ৫. বিকল্প কর্মপন্থা নির্ধারণ > ৬. বিকল্প কর্মপন্থা মূল্যায়ন ৭. পরিকল্পনাকে বাজেটে রুপান্তর > ৮. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন > ৯. কার্যারম্ভের সময় ও কর্মসূচি নির্ধারণ > ১০. উপযুক্ত কর্মপন্থা বাছািইকরন > ১১. পরীক্ষামূলক প্রয়োগ > ১২. কার্যকারিতা মূল্যায়ন ও সংশোধন ব্যবস্থা গ্রহণ
উত্তম পরিকল্পনার গুণ/বৈশিষ্ট্য:
১. নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিত্তিক (Specific goal and objective): ৩. নির্ভুলতা (accuracy) ৩. ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা (Future guideline): পরিকল্পনা এমন হতে হবে যাতে এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
৪. নিরবচ্ছিন্নতা (Continuity): ৫. পূর্বানুমান (Forecasting): ৬. মিতব্যয়িতা (Economy): পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যয় কমানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭. সহজবোধ্যতা (Easily understandable): পরিকল্পনার বিবরণ বিশদ ও সহজ না হলে কর্মীরা এটিকে সহজভাবে নেয় না। ফলে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং কাজ সম্পাদনে বাধা তৈরি হয়।
৮. নমনীয়তা (Flexibility): ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতির কারণে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে। তাই এটি এমনভাবে প্রণয়ন করা উচিত যাতে প্রয়োজনে পরিবর্তন বা পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা যায়।
৯. বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ (Applying thoughtfulness): .. তাই প্রতিষ্ঠানকে যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনা, দূরদৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা ও কল্পনাশক্তি দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
১০. সৃজনশীলতা (Creativity): গবেষণার মাধ্যমে নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার ও কৌশল প্রয়োগ করা হলো সৃজনশীলতা। ব্যবসায় পরিকল্পনা সৃজনধর্মী হওয়া প্রয়োজন।
১১. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার (Proper utilization of resources): প্রতিষ্ঠানের সম্পদ সব সময় সীমিত থাকে। তাই, সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনার একটি বিশেষ গুণ।
১২. বাস্তবমুখী (Realistic): উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনা সব সময় বাস্তবমুখী হয়ে থাকে। অবাস্তব ধ্যান-ধারণা নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে তা কখনো সাফল্য বয়ে আনে না।
১৩. গ্রহণযোগ্যতা (Acceptability): পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত সব কর্মীর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
১৪. তথ্যনির্ভর (Information based): পরিকল্পনা প্রণয়নে সব সময় সঠিক উপাত্ত ও তথ্য ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে।
১৫. সমন্বয়সাধন (Coordination): পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ও যোগসূত্র রক্ষা করা উচিত।
১৫. ভারসাম্যপূর্ণ (Balancing): প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মূল পরিকল্পনার অধীনে ছোট বা খণ্ড পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। তাই, প্রতিটি কাজ ও পরিকল্পনায় যাতে মিল থাকে, সেদিকে খেয়াল রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। এতে কাজের সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে।
ব্যবসা প্রক্রিয়া ও এর উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা (Need for improving Business Processes):
ব্যবসা প্রক্রিয়া হর ব্যবসা কার্যক্রম ও দায়িত্বসমূহের পর্যায়ক্রমিক সমষ্টি যা একটি সুসংগঠিত উপায়ে কোন ব্যক্তিবর্গ বা পদ্ধতির মাধ্যমে সংগঠিত হয় এবং তা ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখে। উত্তম প্রক্রিয়ার তিনটি আবশ্যিক উপাদান থাকে: পৌণঃপুনিকতা, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা। সহজে বলা যায়, সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহৃত কার্যবলির কতগুলো ধাপের পৌণঃপুনিক সমষ্টিকে ব্যবসায় প্রক্রিয়া বলে।
১. ব্যয় সাশ্রয় ২. উৎপাদনশীলতা ২. দক্ষতা বৃদ্ধি ৩. ঝুঁকি হ্রাস ৪. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ৫. কর্মী সন্তুষ্টি ৬. গ্রাহক সন্তুষ্টি ৭. স্থায়ীত্ব ৯. ফলাফল পরিমাপযোগ্যতা
More
গ্রাহক সেবার মৌলিক ধাপসমূহ (Key Step of Customer Service Process):
১. গ্রাহকের অভিযোগ বা সমস্যা গ্রহণ : গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার (সি আর এম) মাধ্যমে ... ২. গ্রাহকের অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার ৩. দাখিলকৃত অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান : গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম থেকে ৪. সমস্যার সমাধান ৫. বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গ্রাহককে অবহিতকরণ
দলীয় কার্যসম্পাদন উন্নত করার কৌশল (Tips to help team perform better):
১. সময় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২. দলকে ঐক্যবদ্ধ করা ৩. লক্ষ্য নির্ধারণ ও নির্ণয় ৪. প্রশিক্ষণ ও শেখার সুযোগ ৫. দলের মনোবল বৃদ্ধির কার্যক্রম ৬. স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম ৭. অতি ব্যবস্থাপনা পরিহার (micromanagement) ৯. ফলাবর্তন চালু রাখা ১০. কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ ১১. অপ্রয়োজনীয় সভা পরিহার ১২. কাজের শ্রেণী বিভাগকরণ ১৩.দলীয় শক্তির বিচক্ষণ ব্যবহার ১৪. কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ ১৫. সাফল্য উদযাপন এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা ১৬. স্বীকৃতি ও পুরষ্কার
সময় ব্যবস্থাপনা (Time Management):
সময় ব্যবস্থাপনা হল সময়কে উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতার সাথে ব্যবহারের একটি কৌশল। এর অর্থ হল বিভিন্ন কাজের মধ্যে সময়কে কীভাবে ভাগ করা যায় তা সংগঠিত করা এবং পরিকল্পনা করা। সুষ্ঠু সময় ব্যবস্থাপনা হল দক্ষতার সাথে কোন রকম মানসিক চাপ না নিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার জন্য কারো কাছে যথেষ্ট সময় থাকা। সময় ব্যবস্থাপনা
ফলে একজন কর্মী উৎপাদনশীলতার সাথে কাজ করতে পারেন এবং জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি আগে করার জন্য তার সময়কে অগ্রাধিকার দিতে পারেন এবং যেগুলি জরুরী নয়
কিন্তু এখনও গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি অব্যাবহিত সময়ের পরে করতে পারেন। এইভাবে, সময় এবং শক্তিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে নিয়োজিত করা যায়। সহজে বলা যায়, কোন সুনির্দিষ্ট কাজে ব্যয়িত সময়ের পরিমাণকে সচেতনতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করার কাজই হল সময় ব্যবস্থাপনা।
সময় ব্যবস্থাপনার মূল উপাদান/দক্ষতাসমূহ: 💤
অন্যান্য দক্ষতাসমূহ: ৬. তাড়াতাড়ি শুরু করা ৭. প্রতিটি কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন ৮. কার্যভার অর্পণ করা: একজন ব্যক্তি সবকিছু করতে পারে না তাই অন্য কেউ করতে পারে এমন কাউকে কাজের ভার র্অপন করতে হবে ৯. কার্যকর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ ১০. কাজের বাইরে অবস্থানকালীন সতর্কতা (Be Mindful of When You’re Going Off-Track) ১১. সঠিক কাজে সঠিক সময় ব্যয়
সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নত করার কৌশল (Process of improving Time Management):
১. সময়সূচী প্রস্তুত এবং কঠোরভাবে অনুসরণ (Prepare and follow a schedule strictly) : কাজ এবং প্রতিশ্রুতির রূপরেখা দিয়ে একটি দৈনিক বা সাপ্তাহিক সময়সূচী তৈরি করতে হবে।
২. কাজের পরিধি নির্ধারণ : কাজের গুরুত্ব বা লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কাজ বা ক্রিয়াকলাপকে না বলতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বাধা বা বিপত্তি এড়াতে অন্যান্য কাজের স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. চুড়ান্ত সময়সীমা ঠিক করা (fixing Deadline) : ৪. দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্প-মেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ: ... প্রতিটি কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা ....
৪. কার্যকরভাবে ক্যালেন্ডার পরিচালনা : সাক্ষাৎকার, সময়সীমা এবং গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলি তদারকি করতে একটি ক্যালেন্ডার বা একটি ডিজিটাল পরিকল্পনা টুলস ব্যবহার করতে হবে।
৫. কাজের অগ্রাধিকার প্রদান: ন্যস্ত কোন কাজগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন।
৬. কার্যকর প্রতিনিধিত্ব অনুশীলন (Practice effective delegation) : উপযুক্ত মনে হলে অন্যদের কাছে কিছু কাজের ভার অর্পণ করতে শিখতে হবে। অন্য কেউ করতে পারে এমন কাজগুলি চিহ্নিত করে তা বরাদ্ধ করতে হয়।
৭. এক সাথে বহুমুখী কাজ পরিহার (multitasking): যদিও এটি দক্ষ বলে মনে হতে পারে, মাল্টিটাস্কিং প্রায়শই উৎপাদনশীলতা এবং কাজের গুণগত মান হ্রাস করে।
৮. নিয়মিত বিরতি গ্রহণ: দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এতে তীব্র মানসিক চাপ তৈরী হয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করতে পারে।
৯. আত্ম-সচেতন থাকা : কাজের অগ্রগতিসমূহ চিহ্ণিত করে সঠিক পথে এগোতে হবে।
১০. বিক্ষিপ্ততা সরিয়ে ফেলা (Block out Distraction): অন্যকোন দিকে মনোযোগ নিক্ষিপ্ত হলে তা সরিয়ে আনতে হবে
১. দুর্বল যোগাযোগ ২. দীর্ঘসুত্রিতা ৩. না বলতে না পারা ৪. উদ্বেগ বা মানসিক চাপ
৫. বিশৃঙ্খল ব্যক্তিত্ব ৬. দায়িত্ব অর্পণ করতে ব্যর্থতা ৭. মাল্টিটাস্কিং
সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার জন্য স্টিফেন কোবে একটি সময় ব্যবস্থাপনা মেট্রিক্স তৈরী করেন। সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এটি একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব। কোভের এই মেট্রিক্স এ একটি বাক্সকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। যার প্রতিটি ভাগ দেখায় যে সময়ের তাৎপর্য ও প্রয়োজন কোন ভাগে পড়বে।
|
জরুরী |
জরুরী নয় |
গুরুত্বপূর্ণ | ১) কাজসমূহ: - সংকট - তাড়িত সমস্যা - সময়সীমা দ্বারা বাধা প্রকল্প - শেষ সময়ের প্রস্তুতি | ২) কাজসমূহ: - প্রস্তুতি - সম্পর্ক স্থাপন - পরিকল্পনা প্রণয়ন - নতুন সুযোগ সন্ধান |
গুরুত্বপূর্ণ নয় | ৩) কাজসমূহ: - বাধাসমূহ -চিঠিপত্র, সভা আহ্বান -কয়েকটি জায়গায় যাওয়া - জনপ্রিয় কাজ | ৪) কাজসমূহ: - বিস্তারিত - কয়েকটি ফোন কল - সময় ক্ষেপন - বিনোদনমূলক কাজ |
১. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ২. গুরুত্বপূর্ণ কাজে অগ্রাধিকার প্রদান ৩. সুঅভ্যাস তৈরী ৪. উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ
৫. কর্ম ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ৬. পরিকল্পনা প্রনয়নে সুবিধা ৭. মানসিক চাপ হ্রাস
![]() |
Org. & Mgt. এর পরবর্তী অংশ |
কার্যকরী নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকীয় উপাদান (Elements of Effective Controlling) :
১. পরিকল্পনা ও কর্মীর পদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে ২. নিয়ন্ত্রণ বোধগম্য হবে
৩. নিয়ন্ত্রণ বিচ্যুতির দ্রুত সনাক্তকরণে সাহায্য করবে (quick detection of deviations):
৫. নিয়ন্ত্রণ উদ্দেশ্যমুখী হবে ৬. নিয়ন্ত্রণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে ৭. নিয়ন্ত্রণ হবে স্বল্প ব্যয়সাধ্য
৮. নিয়ন্ত্রণ হবে বাস্তবভিত্তিক ৯. নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যৎ দর্শন থাকবে
১০. নিয়ন্ত্রণ সংশোধনীমূলক হবে (Controls should lead to corrective action):
ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব (Importance of
Controlling in Manangement t)
১. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা ২. কর্তৃত্ব অর্পন ৩. লোকসানের ঝুঁকি হ্রাস
৪. সমস্যার কারণ চিহ্নিতকরণ ৫. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ৬. সমন্বয়সাধনে সহায়তা
৭. পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা ৮. অপচয় হ্রাস ৯. ব্যবস্থাপকের সময় ও শ্রম সাশ্রয়
১০. ভুল-ত্রুটি থেকে অব্যাহতি ১১. দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
১২. ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনয়ন (উুহধসরংস রহ সধহধমবসবহঃ)ঃ
নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বা প্রক্রিয়া (Steps or Process of Controlling):
১. মান নির্ধারণ (Setting of standard) t
নিয়ন্ত্রণ কাযের্র প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা। মান হচ্ছে পরিকল্পনার কতকগুলো নির্ধারিত বিন্দু যার দ্বারা ব্যবস্থাপক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা পযর্বেক্ষণ করতে পারেন। প্রত্যেকটি মান সুনির্দিষ্ট হয়।
২. সম্পাদিত কাজের পরিমাপকরণ (Measuring
performance) t দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত মানের বিপরীতে প্রকৃত কার্যফল পরিমাপ করে দেখা হয়। অথার্ৎ এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মোতাবেক কতটুকু কার্য সম্পাদিত হয়েছে তা নিরূপণ করা হয়।
৩. মানের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা (Comparing
performance against standard)t নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় পদক্ষেপে নির্ধারিত মানের সাথে প্রকৃত কাযর্ফলের তুলনা করা হয়। আদর্শ মান বা প্রত্যাশিত ফলাফলের সাথে সম্পাদিত কার্যফলের তুলনা করে কোন রকম বিচ্যুতি থাকলে তাও নিরূপণ করা হয়।
৪. বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ (Determining the causes
of deviation)t আদর্শ মানের সাথে সম্পাদিত কাযর্ফলের কোন বিচ্যুতি বা পার্থক্য দেখা গেলে এ পর্যায়ে সঠিকভাবে তা নিরূপণ করা হয় এবং তা যথাযথ বিশ্লেষণ করে বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ করা হয়।
৫. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ (Taking corrective
actions)t নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে বিচ্যুতি বা ভুল-ত্রুটি শোধরানো। বিচ্যুতি নির্ধারণ ও তার সঠিক কারণ নিরূপণের পর এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, অধস্তনদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, কর্মী বরখাস্তকরণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল (Different Techniques of Controlling) :
১. বাজেট (Budget): পরিকল্পনাকে যখন সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে বাজেট বলা হয়। এ পদ্ধতিতে বাজেটের মাধ্যমে মান নির্ধারণ করা হয় এবং পরে তার সাথে অজির্ত ফলাফল তুলনা করা হয়। কোন বিচ্যুতি বা পার্থক্য থাকলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২. পরিসংখ্যানিক উপাত্ত (Statistical data): সংখ্যাভিত্তিক তথ্য পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে বিচার বিশ্লেষণ করে নিয়ন্ত্রণ কাজ করা যায়। যেমন, বিক্রয় কিংবা ব্যয় শতকরা কতভাগ বৃদ্ধি পেল বা হ্রা স পেল তা পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে বের করা যায়।
৩. বিশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ : কোন নিদির্ষ্ট সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবেদন (report) সহায়তা করে থাকে।
৪. কার্য নিরীক্ষা (Operational audit): ৫. তথ্য প্রযুক্তি:
৬. ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ :প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অধস্তনদের কাজের ভুল-ত্রুটি নিণর্য় করেন।
৭. গ্যান্ট চার্ট (Gantt chart) : Henry L. Gantt নামক একজন ব্যবস্থাপনা বিশারদ ‘সময় ও ঘটনা নেটওয়ার্ক’ (time and events network) বিশ্লেষণের যে চার্ট তৈরি করেন, তা-ই গ্যান্ট চার্ট নামে পরিচিত। এটি পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক কার্য সম্পাদনের নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। এ কারণে কার্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি এক গুরুতপূর্ণ কৌশল।
৮. পার্ট (PERT-
Programme Evaluation and Review Technique): এটি হল একটি কাযর্পণালি মূল্যায়ন কৌশল। এ কৌশলের দ্বারা কাজের বিভিন্ন অংশের সময় ও ব্যয়ের সনাক্তকরণ এবং মূল্যায়ন করা হয়। ফলে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্য সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৯. সমচ্ছেদ বিন্দু বা ব্রেক-ইভেন বিশ্লেষণ (Break-even
point analysis): এটি একটি রেখাচিত্র পদ্ধতি। এর মাধ্যমে আয় ও ব্যয়ের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। সমচ্ছেদ বিন্দু হচ্ছে সেই বিন্দু যেখানে আয় ও ব্যয় সমান হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।
১০. প্রোগ্রাম বাজেটিং (Program Budgeting): বৃহৎ উৎপাদনমূলক প্রতিষ্ঠানে এটি একটি গুরুতপূর্ণ পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল। এ ধরনের বাজেট দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এতে মুনাফার সাথে ব্যয়ের বিষয়টি সঠিক আছে কি-না তা নিণর্য় করা সম্ভব হয়।
বাজেটারী নিয়ন্ত্রণ (Budgetary Control):
অর্জিত ফলাফলকে বাজেটের সাথে তুলনা করে যে নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেটিই বাজেটারী নিয়ন্ত্রণ । বাজেট হচ্ছে পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশ। বাজেটের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কি করা হবে বা কি উদ্দেশ্য অজর্ন করা হবে তা সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কার্য সূচারুরূপে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যভিত্তিক বাজেট (functional budget) প্রণীত হয়। কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজেট আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বাজেটারী নিয়ন্ত্রণের সুবিধাসমূহ (Advantages of Budgetary Control):
১. পরিকল্পনার উন্নতি বিধান: ২. সমন্বয়ে সহায়তা :
৩. স্বত্বস্ফূর্ত নিয়ন্ত্রণ ঃ বাজেট বিদ্যমান থাকলে কর্মীরা বাজেটে উল্লেখিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য তৎপর হয়, কারণ তারা জানে যে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করা তাদের দায়িত্ব। এতে কর্মীদের কার্যক্রম সতঃস্ফূর্তভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
৪. লক্ষ্য অর্জন : ৫. অপচয় হ্রাস : ৬. সিদ্ধান্তগ্রহণঃ ৭. যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনঃ
৮. উত্তম শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক : ৯. দক্ষতা বৃদ্ধিঃ
বাজেটারী নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা/সীমাবদ্ধতাসমূহ (Disadvantages/Limitations
of Budgetary Control):
১. পূর্বানুমানের সমস্যা : ২. নমনীয়তার অভাব: ৩. ব্যয়বহুল : ৫. অধিক নির্ভরতা :
৬. সমন্বয়ের অভাব : বাজেট প্রণয়নের সময় সামগ্রিক কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে কখনও কখনও বিভাগীয় প্রধানগণ নিজ নিজ বিভাগের ব্যয় বরাদ্দ নিয়েই অধিক আগহী থাকেন। ফলে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
৭. ব্যাপক অংশগ্রহণের অভাব : ৮. সময় নির্ধারণে সমস্যা :
টাইম ইভেন্ট নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ: (Time Event Network Analysis):
পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি কৌশল হলো সময়-ঘটনা নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ কৌশল । এ কৌশল উন্নয়নের পূর্বে সময় ও ঘটনার আবহমান পরিবর্তনের কারণে প্রোগ্রামের বিভিন্ন অংশ যৌথভাবে কাজ করে কিনা তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এ কৌশলের মাধ্যমে প্রোগ্রামের বিভিন্ন অংশ কীভাবে সম্পর্কিত ও পরস্পর আন্তঃনির্ভরশীল তা মূল্যায়ন করা হয়। সময়-ঘটনা নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে সাধারণত তিন ধরনের কৌশল ব্যবহৃত হয়:
১. গ্যান্ট চার্ট (Gantt chart): Henry L. নামক একজন ব্যবস্থাপনা বিশারদ সময় ও ঘটনা নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের একটি চার্ট তৈরি করেছেন। তাঁর নামানুসারে এটি গ্যান্ট চার্ট নামে পরিচিত। এ চার্ট উৎপাদন প্রোগ্রামের সময় ও ঘটনার মধ্যকার সম্পর্ক দেখায়। একে বিংশ শতাব্দীর ব্যবস্থাপনার বৈপ্লবিক আবিষ্কার বলে ধারণা করা হয়। এ চার্টের মাধ্যমে উৎপাদন প্রোগ্রামের সময় ও কাজের বর্ণনা থাকে। এটি সঠিক সময়ে পরিকল্পনা মোতাবেক সঠিক কার্যসম্পাদনে কার্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। তাই কার্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গ্যান্ট চার্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
২. মাইলস্টোন বাজেটিং (Milestone Budgeting) : সময়, ঘটনা বা কাজ নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের অন্য একটি কৌশল হলো মাইলস্টোন বাজেটিং। গ্যান্ট চার্টের চেয়ে উন্নত মানের আধুনিক কৌশল হলো মাইল স্টোন বাজেটিং। অনেক প্রজেক্ট ও কার্যের ক্ষেত্রে এ কৌশল অধুনা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশল ও উন্নয়নমূলক প্রজেক্টকে ভেঙ্গে কতকগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য অংশে বিভক্ত করা হয়। তারপর এ অংশগুলোকে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে অনুসরণ করা হয়। এখানে মাইলস্টোন বা মাইলপোস্ট বলতে নিদির্ষ্ট কার্যাংশকে বোঝানো হয়েছে। একটি বৃহৎ প্রজেক্ট কয়েকটি সাহায্যকারী পরিকল্পনা বা সাব-প্রজেক্ট নিয়ে গঠিত হয়। এ পদ্ধতিতে মাইলস্টোনকে সনাক্তকরণযোগ্য বিভাগ (identifiable
segments) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যখন কোনো নিদির্ষ্ট বিভাগের কার্যসম্পাদিত হয় তখন অন্যান্য অংশের ব্যয় ও সহজে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
৩. পার্ট (PERT): এটির পূর্ণরূপ হলো (Program Evaluation and Review Technique)। অর্থাৎ এটি হলো কার্যপ্রণালি মূল্যায়ন ও পরীক্ষা কৌশল । এটি মূলত, গ্যান্ট চার্টেরই একটি উন্নত প্রকাশ। এ কৌশলটি ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিশেষ প্রজেক্ট অফিস উদ্ভাবন করে। এ পদ্ধতি সর্বপ্রথম পোলারাইজড অস্ত্র পদ্ধতির (polarized weapon system) পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে প্রজেক্টের বিভিন্ন অংশ সম্পাদনের সময় তার ব্যয় এবং পন্থা নির্দেশ করা হয়। পার্ট (PERT) চিত্র কতকগুলো বৃত্ত নিয়ে গঠিত। এ বৃত্তগুলো দ্বারা নিদির্ষ্ট কার্যাংশকে বোঝায় যা একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা হয়। এতে তিন ধরনের সময় অনুমান থাকে। যেমন- ইতিবাচক (optimistic), অধিক গ্রহণীয় এবং নেতিবাচক (pessimistic)। এ ধরনের সময়ের গড় করে একক (unit) সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তারপর সংকটপূর্ণ পথ নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে কোনো কাজে সর্বাধিক সময় ব্যয় হবে তা সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এভাবে কার্যাংশের সময় ও ব্যয়ের সনাক্তকরণ ও মূল্যায়নের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কার্য সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উৎপাদনশীলতা ও র্কায সন্তুষ্টির উপর দলীয় সংযোগশীলতার প্রভাব:
দলের সংহতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। একটি দলের র্কমপ্রবাহ সর্ম্পকে আলোকপাত করলে দেখা যায় যে, যদি একজন র্কমচারী বাকি দলের সাথে ঐক্যবদ্ধ না থাকে, এর ফলে সবাই মিলে একসাথে কাজ করার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়। সেই র্কমচারী কোন বিষয়ে সাহায্যর জন্য তার সহর্কর্মীদের কাছে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। অতঃপর পরিহারযোগ্য কিছু ভুলের সৃষ্টি হয় যা একটি প্রকল্পর কাজ সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমাকে র্দীর্ঘায়িত করে। অথবা সংশ্লিষ্ট র্কমচারী কোনো কাজ খুব দ্রুত সম্পাদন করে না কারণ তারা যে দলের সদস্যদের সাথে সমস্যা রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং এটি র্কমপ্রবাহকে ধীর গতি করে দেয়। অন্যদিকে যে দল একসাথে কাজ করতে ভালোবাসে তারা অনেক বেশি উতপাদনশীল। তাদের মধ্যে বিরামমহীন যোগাযোগ চলতে থাকে। দলের সদস্যরা যখনই প্রয়োজন সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং লক্ষ্য র্অজন নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকে তাদের কাজের অংশ সম্পাদন করে। বিশেষ করে দূরবর্তী কাজ সম্পাদনের বর্তমান যুগে র্কমচারীদের চাপ কমানোর জন্য এবং বর্ধিত উতপাদনশীলতার জন্য দলের সমন্বয় অত্যাবশ্যক। দলীয় সংহতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে কারণ :
(১) সমন্বিত দলের কর্মীরা কাজ সম্পর্কিত উদ্বেগ এবং উৎকন্ঠা কম অনুভব করে,
(২) অতি সংযোগশীল দলের কাজে অনুপস্থিতি এবং বিপর্যয় কম ঘটে এবং
(৩) সংহতি বিভিন্ন দলের মধ্যে উৎপাদনশীলতার ব্যবধান হ্রাস করে।
একটি দলে কাজ করার সময় র্কমচারীরা তার গুরুত্ব বা উদ্দশ্যে অনুভব করতে পারে। সফল ব্যবস্থাপকগন প্রায়শই প্রত্যেক দলের সদস্যকে তাদের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট এবং শক্তির উপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব র্অপণ করে। কোন সংগঠনে একজন র্কমীর ভুমিকা কতটা গুরুত্বর্পূণ সেই অনুভূতি একজন র্কমচারীকে তার উপর অর্পিত কাজ সর্ম্পূণ করতে অনুপ্রাণিত করে। প্রধানত তারা যদি দলের সদস্য হিসাবে তাদের ভূমিকা পালন না করে তবে কী ফলাফল হতে পারে সে সর্ম্পর্কেও তারা উপলব্ধি করে। দলের সদস্যরা যারা গোষ্ঠী সংহতি অনুভব করে তাদের মধ্যে জবাবদহিতার বোধ জাগ্রত হয়, সে কারণে তারা কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়। যা একটি দলকে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দ্রুত এবং সুসংহতভাবে কাজগুলি সর্ম্পূণ করতে সহায়তা করে।
JAIBB Organization & Management Bangla Preparations with notes
JAIBB HAND NOTES; BANKING PRO EXAM BANGLA PREPARARTION
BANKING DIPLOMA SHORT SUGGESTIONS ; BANKING PRO EXAM SUGGESTIONS;
ব্যাংকিং প্রফেশনালস পরীক্ষার বাংলা নোটস এবং সাজেসনস
This Compilation is totally free only for Online Preparation and learning purpose ;
any print version or form of guide and notebooks is discouraged as well as prohibited
Thanks md ariful islam
ReplyDelete