Right Click n Copy Disabled

Ads block

Banner 728x90px

BPE - Organization n Management : D/ E


ব্যবস্থাপনায় মানবীয় উপাদানের ভুমিকা
চাহিদা ও অভাব সন্তুষ্টি ‍শৃঙ্খল
প্রেষণার পদক্ষেপ/ প্রেষণা চক্র /প্রেষণায় ব্যক্তির অন্তর্ণিহিত শক্তি প্রবাহ:
দুর্বল বা নিম্ন প্রেষণার কারণসমূহ
কর্মীদের প্রেষণা দানের উপায়/ কৌশল
মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব
ম্যাকক্লেল্যান্ড এর চাহিদা তত্ত্ব
প্রেষণার ERG তত্ত্ব
প্রেষণার প্রত্যাশা তত্ত্ব
ডগলাস ম্যাকগ্রেগর এর এক্স ও ওয়াই তত্ত্ব
হার্জবার্গের দ্বি-উপাদান তত্ত্ব
কার্য সমৃদ্ধি ও কার্য সমৃদ্ধির সুবিধা - অসুবিধা
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও এর উপাদান, বৈশিষ্ট্য
কর্মক্ষেত্রে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা
গুণগত মান চক্র বা সার্কেল
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে গুণগত মান চক্র প্রয়োগের উদ্দেশ্য/সুবিধা/গুরুত্ব
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে গুণগত মান চক্র প্রবর্তনের বা পদক্ষেপ
নেতৃত্ব ও এর বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব
নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ
নেতৃত্বের প্রকারভেদ
নেতৃত্বের দক্ষতাসমূহ/ নেতার ব্যবহৃত নৈপুন্য
আদান প্রদান মূলক নেতৃত্ব এবং রূপান্তরিত নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য
ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্বের পদ্ধতি বা ধ্যান ধারণা
ব্যবসায়িক নৈতিকতা ও নৈতিকতার প্রাতিষ্ঠানীকিকরণের উপায়
নৈতিক নেতৃত্বের মূল উপাদান
ব্যবসায়ে নৈতিক নেতৃত্বের ভুমিকা/গুরুত্ব/ প্রভাব
সাংগঠনিক আচরণ বিধি
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে আচরণ বিধির আদর্শ মান
নৈতিকতার ব্যাঙ্কিং চ্যালেঞ্জসমূহ পরিচালনা
অনৈতিক আচরণ প্রতিরোধে আভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভুমিকা
নৈতিক আচরণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ

  Organization n Management:  Module - D / E 


ব্যবস্থাপনায় মানবীয় উপাদানের ভুমিকা (Role of Human Factors in Managing):

মানবীয় উপাদান হল কর্মক্ষেত্রে মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। প্রাথমিকভাবে মানবীয় উপাদান মানুষের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা অনুধাবনের সাথে জড়িত। পরবর্তী কাজ হলো এই জ্ঞানকে মানুষের জন‌্য উপযুক্ত কাজের সরঞ্জাম, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার নকশা প্রণয়নে প্রয়োগ করা। বিশদ অর্থে, মানবীয় উপাদান হল স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুস্থতা, সামগ্রিক পদ্ধতির কার্যকারিতা এবং নির্ভরযোগ্যতা কাম্য মাত্রায় রাখার জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং নীতিমালার প্রয়োগ – সেইসাথে পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিচালনা অভিজ্ঞতা থেকে শেখা পাঠ। স্পষ্টতই, আমরা মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারি না, তবে আমরা সংগঠনের ক্রিয়াকলাপ, সরঞ্জাম, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিগুলোকে এমনভাবে নকশা করতে পারি যা মানুষের অপূর্ণতাসমূহ বিবেচনা করে। 

মানবীয় উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ এটি কাজকে অধিক দক্ষ , ফলপ্রসু ও নিরাপদ করে তুলতে সহায়তা করে।

১) তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা        ২) টেকসই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা     ৩) মানসিক চাপ মোকাবেলা      ৪ ) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি     ৫) উচ্চতর কর্ম দক্ষতা পরিমাপ     ৬) সাংগঠনিক পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা    ) দলগত কাজ ও যোগাযোগ     ৮) বৈশিষ্টপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ     ৯) তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার     ১০) পেশাগত শৃঙ্খলা বিধান    ১১) দ্রুত সম্পন্ন প্রকল্পে কর্ম তৎপরতা     ১২) সাংগঠনিক আচরণ ব্যবস্থাপনা      ১৩) সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি পূর্বানুমাণ     ১৪) সাংগঠনিক লক্ষ্য ও নিয়োগকর্তার মধ্যে সম্পর্ক     ১৫) মানুষের প্রকৃতি ও আচরণ অনুধাবন     ১৬) ঝুঁকির প্রবণতা থেকে ঝুঁকির প্রস্তুতি        ১৭) বিচ্যুতি ব্যবস্থাপনা

চাহিদা ও অভাব সন্তুষ্টি  ‍শৃঙ্খল (The Need-Want-Satisfaction Chain): 💤

চাহিদা ও অভাব সন্তুষ্টি  শৃঙ্খলের মূল কথা হল: চাহিদা চাওয়ার জন্ম দেয়, যা দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে। যা কর্মের জন্ম দেয়, যার ফলে সন্তুষ্টিতে পরিণত হয়।

এই তত্ত্বটি বিশদভাবে বলতে গেলে, যে কোন মানুষেরই জীবন ধারণের জন্য বা সমাজবদ্ধভাবে বসবাসের প্রয়োজনে কোন বস্তু বা সেবার প্রয়োজন  হয়, আর এই প্রয়োজনই হল চাহিদা। কোন চাহিদা থেকে কোন বস্তু বা বিষয়ের জন্য মানুষ অভাববোধ করে, এই অভাববোধ থেকে চাওয়া বা আকাঙ্খা তৈরী হয়। আর এই আকাঙ্খা অপূর্ণ চাহিদার জন্য ব্যক্তির মধ্যে হতাশা বা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়। এরপর সেই দুশ্চিন্তা ব্যক্তিকে কাজ করতে বাধ্য করায় যাতে সে নিজের ও পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য লক্ষ্যে পৌছাতে পারে। আর ব্যক্তি তার লক্ষ্যে পৌছে গেলে পরিতৃপ্তি লাভ করে।

Need-Wants-Satisfaction Chain


চিত্র: চাহিদা ও অভাব সন্তুষ্টি শৃঙ্খল

চাহিদা অভাব সন্তুষ্টি শৃঙ্খলটি পদ্ধতিগতভাবে একটি খুবই সহজবোধ্য ধারণা। এই তত্ত্বের সর্বজনীন ধারণা হল যে যদি মানুষ যা চায় তা দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হবে। এই ধারণা ভিন্নভাবেও কাজ করে। যদি কোন ব্যক্তির যা প্রয়োজন তা নিয়ে যাওয়া হয়, তাহরে সে অসন্তুষ্ট হবে। এই শৃঙ্খলে দেখানো হয়েছে যে হতাশা কিভাবে একটি সংগঠন ও তার কর্মচারীর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা ও অনুৎপাদনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিপরীতভাবে কার্য সন্তুষ্টি একজন কর্মীকে উৎপাদনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

কেউ কেউ এটিকে মাসলোর চাহিদার শ্রেণীবিন্যাস হিসেবে তুরে ধরেছেন। এবং বলা হয়েছে, মানুষ তার শারীরবৃত্তীয় চাহিদার সন্তুষ্টি ছাড়া স্ব-বাস্তবতায় পৌছাতে পারে না। কিন্তু চাহিদা ও অভাবের এই তত্ত্বটি আরো অধিক নমনীয়। কারণ নির্দিষ্ট কিছু সংগঠনের এমন কর্মীরও প্রয়োজন হতে পারে যারা নিজের একান্ত চাহিদা বাদে নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে যত্নবান।  প্রত্যেকটি সংগঠনের নিজস্ব লক্ষ্য ও প্রত্যাশা থাকে, সে অনুযায়ী তার কর্মীদেরকে চাহিদা ও প্রয়োজন নির্ধারনে পরিচালিত করা হয়।

প্রেষণার পদক্ষেপ/প্রেষণা চক্র /প্রেষণায় ব্যক্তির অন্তর্ণিহিত শক্তি প্রবাহ (Steps of Motivation):

) কর্মীর প্রয়োজন অনুসন্ধান       ) অভাবের স্বীকৃতি দান      

) উদ্দীপক সনাক্তকরণ: চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপায় বা পদ্ধতি .....     ) প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বিবেচনা    ) উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী গ্রহণ     ) উদ্দীপকের প্রয়োগ     ) কর্মীর সন্তুষ্টি বিধান 

>আবার  নতুন অভাববোধ সৃষ্টি

দুর্বল বা নিম্ন প্রেষণার কারণসমূহ (Causes of  Low or weak Motivation) :

)  একঘেয়েমি পূর্ণ কাজ      ) ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসের অভাব         ) নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য কাজের চাপ     ) প্রতিকূল কর্ম পরিবেশ         ) পেশাগত উন্নতির স্বল্প সুযোগ         ) হীনমন্যতার অণূভুতি         ) কর্মস্থলের বাইরের চাপ    ) অতি ব্যবস্থাপনা (Micromanagement)        ) অনির্দিষ্ট লক্ষ্য         ১০) স্বীকৃতির অভাব       ১১) দীর্ঘসুত্রিতা      ১২) সংগঠনের দুর্বল নেতৃত্ব     ১৩) কর্ম ও ব্যক্তি জীবনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা

for Details:   

কর্মীদের প্রেষণা দানের উপায়/ কৌশল (techniques of motivation):

আর্থিক প্রেষণা:   ১) উপযুক্ত বেতন        ) কার্যসম্পাদন বোনাস    ) লভ্যাংশ    ) উৎপাদন বোনাস     ) পদোন্নতি     ) চিকিৎসার সুবিধা     ) বাসস্থান সুবিধা     ) পরিবহন সুবিধা     ) রেশন সুবিধা     ১০) পুরস্কার     ১১) দলগত উৎসাহ পরিকল্পনা (Group Incentive Plan)     ১২) প্রান্তিক সুবিধা (Fringe Benifit): নিয়মিত মজুরির বাইরে বাড়তি সুযোগ সুবিধা... যেমন- পেনশন, স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষা সহায়তা, ছুটি জনিত মজুরি, বিনামূল্যে খাবার, বিদেশ ভ্রমন প্যাকেজ ইত্যাদি     ১৩) অন্যান্য আর্থিক সুবিধা

অনার্থিক প্রেষণা:     ) স্বীকৃতি ও পুরস্কার       ) ফলাবর্তন     ) প্রতিযোগীতা: .. কর্মীকে তার নিজস্ব লক্ষে পৌছাতে সহায়তা করে।         ) সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ     ) চাকরির নিরাপত্তা     ) অভিন্ন লক্ষ্য     ) সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ     ) আকর্ষণীয় কাজ         ) কাজের স্বায়ত্তশাসন         ১০) পদোন্নতির সুযোগ     ১১) প্রশিক্ষনের সুযোগ     ১২) সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ      ১৩) উন্মুক্ত যোগাযোগ     ১৪) কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা    ১৫) সৃজনশীলতায় উৎসাহ প্রদান    ১৬) সামাজিক বা দলগত কার্যক্রম: বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন- বনভোজন, দর্শনীয় স্থানে ভ্রমন, ক্রীড়ানুষ্ঠান, দাতব্য কার্যক্রম 

Details: 

মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব  ( Maslow’s hierarchy of needs theory ) : 💤

) জৈবিক বা শারীরবৃত্তিয় চাহিদা       ) নিরাপত্তার চাহিদা     ) সামাজিক চাহিদা     ) আত্ম মর্যাদার চাহিদা     এবং     ) আত্মপূর্ণতার চাহিদা

 ম্যাকক্লেল্যান্ড এর চাহিদা তত্ত্ব  / প্রেষণার ত্রি-চাহিদা তত্ত্ব  (McCleland's Theory / Three needs theory of Motivation) : 💤

এর প্রবক্তা হলেন ম্যাকক্লেল্যান্ড। এই তত্ত্বের মূল কথা হল প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে তিনটি চাহিদার যে কোন একটি অবশ্যই থাকবে। এই চাহিদাগুলো সহজাত নয়, এগুলো সমাজ ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে।

১) অর্জনের চাহিদা ( Achievement )     ২) ক্ষমতার চাহিদা ( Power)    ৩) স্বীকৃতির চাহিদা  ( Affiliation)

প্রেষণার  ERG তত্ত্ব (ERG Theory of Motivation):

ERG তত্ত্ব হল ক্লেটন অ্যাল্ডারফার দ্বারা প্রস্তাবিত মনোবিজ্ঞানের একটি তত্ত্ব। অ্যাল্ডারফার মনে করেন যে, প্রেষণার ক্ষেত্রে এ তত্ত্বটি অধিক কার্যকর ও বাস্তবসম্মত। তিনি তাঁর তত্ত্বে মানুষের অভাবকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো- অস্তিত্ব রক্ষা, সম্পৃক্ততা এবং উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধি। E. R. G. হচ্ছে Existence বা অস্তিত্ব রক্ষা, Relatedness বা সম্পৃক্ততা এবং Growth বা সমৃদ্ধি বা উন্নতি।

এ তত্ত্ব অনুযায়ী কিছু কিছু চাহিদা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীর একটি চাহিদা পূর্ণ হলে অন্য চাহিদা জাগে এবং প্রত্যেকটি চাহিদা পূরণের সাথে সাথে কর্মীর আচরণ পরিবর্তন সাধিত হয়। কোন ব্যক্তি উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে বা হতাশা দেখা দিলে সে পুনরায় নিম্নস্তরের চাহিদা পূরণে সক্রিয় হয়ে উঠবে।

ই আর জি তত্ত্বে বর্ণিত ৩টি চাহিদা স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত -

১. অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা (Existence Need): এ তত্ত্ব অনুযায়ী কর্মী প্রাথমিকভাবে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা পূর্ণ করার জন্য উৎসাহিত হয়। জৈবিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপাদানসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভূক্ত। বেতন, ভৌত কার্যপরিবেশ ও কার্যাবস্থা, চাকরির নিরাপত্তা এবং প্রান্তিক সুবিধাদি প্রাপ্তি এরূপ চাহিদার মধ্যে পড়ে। টিকে থাকা তথা জৈবিক কল্যাণ বিধান এরূপ চাহিদার আওতাভুক্ত।

২. সম্পৃক্ততার চাহিদা (Relatedness Need): কর্মস্থলের মধ্যে এবং কার্যের বাইরের উপর, নীচ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের লোকদের সঙ্গে এ পর্যায়ে কর্মীরা সম্পৃক্ত হতে চায়, গ্রহণযোগ্য হতে চায়, সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চায়। সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করা এ পর্যায়ে কর্মীদের চাহিদার আওতাভুক্ত। আন্তঃব্যক্তিক সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এরূপ চাহিদার অন্তর্ভুক্ত।

৩. উন্নতির চাহিদা (Growth Need): এ পর্যায়ে কর্মীরা আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিপূর্ণতার চাহিদা মিটাতে সচেষ্ট হয়। এ পর্যায়ে কর্মী প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, আত্মপূর্ণতা লাভ করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য ব্যক্তির অন্তর্নিহিত প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা এ পর্যায়ের আওতাভুক্ত।

অ্যালডারফার ERG তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত একটি অগ্রগতি এবং প্রত্যাবর্তন তত্ত্বও প্রস্তাব করেছেন। ই আর জি তত্ত্বের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে চাহিদার স্তরের অগ্রসরতায় কোন কঠোরতা অবলম্বন করে না, বরং চাহিদার তিনটি স্তরেই যে কোনটি যে কোন সময় সক্রিয় হতে পারে। এমনকি যে কোন উচ্চতর স্তরের চাহিদা পূরণেও ব্যক্তি সক্রিয় হতে পারে। এ তত্ত্বে আরও বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যে কোন দুটি উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে সক্ষম না হলেও বা হতাশা দেখা দিলেও পুনরায় সে নিম্নস্তরের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হতে পারে এবং পরবর্তীতে আবার উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে অগ্রসর হতে পারে। তাই কর্মীর প্রেষণা জোগানোর জন্য ব্যবস্থাপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, কর্মী কোন স্তরের চাহিদা পূরণে অধিক আগ্রহী।

প্রেষণার প্রত্যাশা তত্ত্ব (Expectancy Theory):

প্রেষণার প্রত্যাশা তত্ত্বের উদ্ভাবক ভিক্টর এইচ ব্রুম। তিনি মাসলো ও হার্জবার্গের মত চাহিদাকে নয় বরং প্রেষণার জন্য কাজের ফলাফলের উপর জোরারোপ করেছেন। প্রেষণার প্রত্যাশা তত্ত্বের মূল কথা হল, মানুষ যখন মনে করে তার কাজের মাধ্যমে কোন ফলাফল অর্জন করা সম্ভব; তখনই সে কাজটি করার প্রেষণা অনুভব করে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি কতটা কঠোর পরিশ্রম করবে তা নির্ভর করে সে তার কাজের ফলাফল কীভাবে উপলব্ধি করে তার উপর সহজভাবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি আরও কঠোর পরিশ্রম করবে যদি এই অতিরিক্ত কাজের ফলাফল বা পুরস্কার তেমন কিছু মূল্যবান হয়; পুরষ্কার যত ভালো হবে একজন ব্যক্তি তত বেশি পরিশ্রম করবে ব্যক্তির প্রেষণার শক্তি নির্ভর করে তার পছন্দ, প্রত্যাশা ও সহায়তার গুণিতক সম্পর্কের উপর।

অর্থাত     M= E I V

        যেখানে,     M = Motivation power বা প্রেষণার শক্তি

                        E = Expectancy    বা প্রত্যাশা

                          I = Instrumentality বা সহায়তা, সুবিধা

                           V = Valence  বা আকর্ষণ , পছন্দ

প্রত্যাশা:  প্রত্যাশা হচ্ছে প্রচেষ্টা বা কর্ম দক্ষতার উপর আস্থা। এটি হল এরুপ বিশ্বাস যে প্রচেষ্টার প্রয়োগ করে কর্মী তার কাজের মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে।  সাধারণত, এই বিশ্বাস একজন ব্যক্তির অতীত অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস এবং কর্মক্ষমতা মান বা লক্ষ্যের অনুভূত অসুবিধার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। মানুষ যদি মনে করে তার প্রচেষ্টা সফল হবে, তাহলে সে অধিকতর দক্ষতার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয়। আর যদি নিজের প্রচেষ্টার প্রতি সংশয় থাকে তাহলে সে কাজে আর অগ্রসর হয় না।

সহায়তা বা সুবিধা:  সহায়তা বা সুবিধা হল এমন বিশ্বাস যে কাজের মাধ্যমে কাঙ্খিত পুরস্কার পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এটি হচ্ছে কাজ ও পুরস্কারের মাত্রা। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, স্বীকৃতি বা অর্জনের অনুভূতির আকারে আসতে পারে। কর্মী যদি মনে করে কাজের ফলে সে ভাল ফলাফল পাবে, তাহলে সে কাজ করতে উৎসাহী হয়। এর বিপরীতে সে নেতিবাচক আচরণ করে। উত্তম কাজের উত্তম পুরস্কার +১, উত্তম কাজের কম পুরস্কার -১ 

আকর্ষণ বা পছন্দ : কর্মীর প্রচেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠান তাকে যে মূল্য দিবে তার গুরুত্ব। অর্থাত প্রত‌্যা‌শিত ফলাফল‌কে একজন কর্মী যতটুকু গুরুত্ব দেয় তাই আকর্ষণ। কর্মীর কর্মদক্ষতার জন্য এই পুরস্কার যথেষ্ট কিনা তার উপর প্রেষণা নির্ভর করে। ব্যক্তির আকর্ষণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো হল প্রয়োজন, লক্ষ্য, পছন্দ, মূল্যবোধ, অনুপ্রেরণার উৎস এবং নির্দিষ্ট ফলাফলকে একজন ব্যক্তির পছন্দ করার সক্ষমতা।  

    প্রত্যাশা তত্ত্ব সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলেে একজন ব্যবস্থাপক বুঝতে সক্ষম হন কিভাবে কর্মীরা বিভিন্ন আচরণগত বিকল্পসমূহ বাছাই করে অনুপ্রাণিত হয়। কর্মক্ষমতা এবং ফলাফলের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর জন্য, ব্যবস্থাপকদের এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত যা কার্য দক্ষতার সাথে পুরষ্কারকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করে।

for Reference:

ডগলাস ম্যাকগ্রেগর এর এক্স ও ওয়াই তত্ত্ব :

তত্ত্বে বলা হয়েছে কর্মীরা কাজ করতে অপছন্দ করে। তারা সব সময় কাজে অনীহা প্রকাশ করে। চাপ প্রয়োগ না করলে তারা কখনো কাজ করবে না। 

Y তত্ত্বে বলা হয়েছে কর্মীরা কাজ পছন্দ করে। তারা আনন্দের সাথে কাজ করে। কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে কাজ করে।

হার্জবার্গের দ্বি-উপাদান তত্ত্ব  Herzberg's Two-Factor Theory / Hygiene theory/ Intrinsic & Extrinsic Motivator ) : 

হার্জবার্গ ও তার সহযোগীরা প্রেষণার ক্ষেত্রে দুই ধরণের উপাদানের ভুমিকা লক্ষ করেন। এই দুটি উপাদান হল : মোটিভেটর ও হাইজিন।

কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টি  বা উদ্দীপক কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তির আবেগগত উপাদানসমূহের উপর নির্ভর করে। এবং কর্মে অসন্তুষ্টি তুলনামূলকভাবে স্পর্শনীয় মৌলিক চাহিদাকে উপস্থাপন করে। এটি কাজের বাহ্যিক চলক বা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। প্রথম দলের চলককে মোটিভেটর বা উদ্দীপক এবং দ্বিতীয় দলের চলককে হাইজিন উৎপাদক বলে।


মোটিভেটর বা উদ্দীপকের উন্নয়ন,

➔ বিপরীতে সন্তুষ্টি উৎপাদক

হাইজিন উন্নয়ন,

➔ বিপরীতে অসন্তুষ্টি উৎপাদক

অর্জন        স্বীকৃতি,                কাজের ধরণ,    

পদোন্নতির সুযোগ,       দায়িত্বশীলতা,           ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি,    

সংগঠনের নীতি ও রীতি     বেতন ও ভাতা,

পারস্পরিক সম্পর্ক,          কাজের শর্তাবলি,     তত্ত্বাবধায়কের গুন মান

যে বৈশিষ্ট্য অন্যান্য তত্ত্ব থেকে দ্বি-উপাদান তত্ত্বকে পৃথক করে তা হল কর্মচারী প্রত্যাশার উপর ভূমিকা। হার্জবার্গের মতে, অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক এবং বহির্মুখী উদ্দীপকের একটি বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকসমূহ উপস্থিত থাকলে প্রেষণা বৃদ্ধি করে, যেখা‌নে বাহ্যিক উদ্দীপকসমূহ অনুপস্থিত থাকলে প্রেষণা হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কর্মীদের প্রত্যাশার কারণে এরূপ ঘটে । বাহ্যিক উদ্দীপকসমূহ (যেমন, বেতন, সুবিধা) প্রত্যাশিত, তাই তারা যখন সেখানে থাকবে তখন এগুলো প্রেষণা বাড়াবে না, কিন্তু যখন এগুলো অনুপস্থিত থাকবে তখন তারা অসন্তোষ সৃষ্টি করবে।

প্রথাগতভাবে একই পরিসীমার মধ্যে কর্মীর সন্তুষ্টি ও অসস্তুষ্টি বিদ্যমান রয়েছে। এই ধারণায় বলা হয়েছে যে, একজন কর্মী তার কাজের কিছু কিছু জায়গায় পরিতৃপ্তি লাভ করে কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে আবার অসন্তুষ্টি লাভ করে। উদ্দীপক- হাইজিন তত্ত্বে বলা হয় যে, কর্ম সন্তুষ্টির উপস্থিতি কাজের অসন্তুষ্টি কমাতে ভুমিকা রাখে না। কর্মক্ষেত্রে একজন কর্মী তার উপর ন্যস্ত কাজকে পছন্দ করতে পারে । কিন্তু একই সাথে সে বাইরের উপাদান - স্বল্প বেতন ও কম সুযোগ সুবিধায় জর্জরিত হতে পারে। 

সুতরাং দ্বি-উপাদান তত্ত্বে দেখানো হয়েছে যে, হাইজিন বিষয় ও উদ্দীপক উভয়ই ব্যবস্থাপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

সমতা তত্ত্ব (equity theory):

সমতা বা ইক্যুইটি তত্ত্ব মূল ধারণা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি তার কাজের জন্য যা পায় তা তার প্রেষণার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর অর্থ হল কর্মক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সাধারণত তার প্রতিষ্ঠানকে যা দেয় ও তার বিনিময়ে সে যা পায় তার মধ্যে তুলনামূলক একটি ভারসাম্য তৈরি করে থাকে। প্রতিটি মানুষ ন্যায্য আচরণ পেতে আগ্রহী- এর উপর ভিত্তি করে এ তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত। এই ‘ন্যায্যতা’ বলতে সমতা বা ভারসাম্যকে বুঝানো হয়েছে। আর অসমতা বলতে বুঝানো হয়েছে অপরের তুলনায় ব্যক্তি সমান আচরণ পাচ্ছে না। কর্মীর প্রেষণা ব্যাখ্যার জন্য সে কীভাবে সামাজিক বিনিময়ের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সমতা তত্ত্বের মূল উপাদান দুইটি:  

১) কর্মীর অবদান: অবদান হল একজন কর্মী পুরস্কার পাওয়ার জন্য কর্মস্থলে যে ভুমিকা রাখে। বিভিন্ন অবদানের মধ্যে রয়েছে সময়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি, দৈনন্দিন কাজের দায়িত্ব, সংস্থার প্রতি আনুগত্য এবং কাজের জন্য উৎসাহ । একজন কর্মচারী প্রায়ই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং অনিয়ন্ত্রণযোগ্য অবদানের প্রতি সাড়া দেয়। নিয়ন্ত্রণযোগ্য ইনপুটসমূহের মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ এবং উপস্থিতি,  অনিয়ন্ত্রিত ইনপুট হল চাকরির প্রশিক্ষণ এবং জ্যেষ্ঠতা ।       

২) ফলাফল: ফলাফল বা আউটপুট হল সেই ক্ষতিপূরণ যা একজন ব্যক্তি তার প্রদানকৃত ইনপুটের বিনিময়ে সরাসরি লাভ করে। ফলাফলসমূহের মধ্যে বস্তুগত কারণগুলি অন্তর্ভুক্ত। যেমন:  বেতন এবং বেতন বৃদ্ধি,  কাজের নিরাপত্তা,  স্বাস্থ্যসেবা বা ছুটির সময় মত সুবিধাবলি। এছাড়াও কম বাস্তব ফলাফল আছে: সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রশংসা, সুনাম,  কাজের জন্য গর্ববোধ ইত্যাদি।

কার্য সমৃদ্ধি (Job enrichment) :

কার্য সমৃদ্ধি হল প্রেষণা দানের এমন একটি কৌশল যা কাজের মান উন্নত করার মাধ্যমে কর্মীদের কাজকে আরও বেশি অর্থবহ, পরিপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় । এটি কর্মীদের মধ্যে সুপ্ত দক্ষতা ও অন্তর্ণিহিত পূর্ণ সম্ভাবনাসমূহ বুঝতে এবং অর্জন করতে সহায়তা করে। এই উদ্ধেশ্য সাধনের জন্য প্রায়শই তাদেরকে নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বাবলি বন্টন করা হয়কার্য সমৃদ্ধি কর্মচারীদের এমন কাজ করার সুযোগ দেয় যা মূলত তাদের জন্য বর্ণিত ও নির্ধারিত কাজ থেকে ভিন্ন।

উদাহরণ স্বরূপ, নিয়োগকর্তারা তাদের কর্মীদের নির্দিষ্ট কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য অধিকতর স্বাধীনতা দিতে পারেন যা তাদের জন্য কার্যকর হতে পারে, যার ফলে তাদের কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানির সামগ্রিক দক্ষতার উন্নতি হয়। তারা  কর্মীদেরকে তাদের কাজের জন্য অধিকতর দায়বদ্ধতা সৃষ্টির জন্য তাদের আরও দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে।

সহজভাবে বলা যায়, কার্য সমৃদ্ধি হল কাজের দায়িত্ব, ক্ষমতা, পরিধি, কার্য সন্তুষ্টি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পুনর্বিন্যাস পূর্বক কর্মীকে অধিকতর চ্যালেঞ্জিং কাজে সম্পৃক্ত করা।

 কার্য সমৃদ্ধির সুবিধা (Benefits of job enrichment) :

) নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ      প্রেষণা ও মনোবল বৃদ্ধি     ) অতিরিক্ত দক্ষতা ভিত্তিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার
) কার্য সম্পাদনের তাগিদ বোধ        ) কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন     ) কর্মী ছেড়ে যাওয়ার হার হ্রাস
) কর্মীর অনুপস্থিতি হ্রাস                     ) কার্সন্তুষ্টি                     ৯সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের সুযোগ               ১০) ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা       ১১) অগ্রগতি ও ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি:  ..পথে চালিত করে

 কার্য সমৃদ্ধির অসুবিধা :

)  অতিরিক্ত কাজের চাপ      ) অপর্যাপ্ত  দক্ষতা    ) নিম্ন কর্ম সম্পাদনের ভয়

) ব্যষ্টিক ব্যবস্থাপনা (Micro-management)     ) প্রশিক্ষণের অভাব      

) অনঅংশগ্রহনকারীদের সাথে দ্বন্দ:  যে ব্যক্তিরা অধিক দায়িত্ব চায়, কিন্তু প্রকাশ করেনি যে তারা তা পরিচালনা করতে পারে, তারা  ব্যবস্থাপনার প্রতি এবং কার্য সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ত্যাক্ত ও  অসন্তুষ্ট হতে পারে। 

) অক্ষমতা (Incapability): যদি কর্মচারীদেরকে কার্য  সমৃদ্ধকরণের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় তবে  কোন নির্দিষ্ট কর্মচারী কার্য সমৃদ্ধকরণের নামে এই ধরনের কাজের চাপ সামলাতে সক্ষম নাও হতে পারে। অতএব, এটা সুস্পষ্ট যে কার্য সমৃদ্ধির ফলাফল সর্বদা কর্মীদের জন্য বা নিয়োগকর্তাদের জন্য উপকারী হয় না।

) যোগাযোগের ভ্রান্তি (Miscommunication ): কার্য সমৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের সমস্যা এবং বিষয়ের ক্ষেত্রে সংগঠনের কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে নানা ধরণের ভুল যোগাযোগ সংগঠিত হতে পারে। এবং এই ধরনের ভুল যোগাযোগ একটি প্রতিষ্ঠানের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

৯) প্রস্তুতির অভাব        ১০) বর্ধিত নজরদারি          

সুত্র: WiseStep.com

কর্মক্ষেত্রে কার্য সমৃদ্ধি বাস্তবায়নের কৌশল (job enrichment strategies to implement at the workplace):

) কাজের দায়িত্বসমূহ বিশ্লেষণ      প্রশিক্ষণের সুযোগ দান        ) পুরষ্কার বা স্বীকৃতি প্রদান

) সহযোগিতা এবং দলগত কাজ        ) কাজের আবর্তন বা রোটেশন তৈরি করন     ) গুণগতমান চক্র

) কাজসমূহ একত্রিত করন                ) স্বায়ত্তশাসন               ৯ পরামর্শ কর্মসূচি
১০) কাজের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস            ১১) কাজের দায়িত্ব নমনীয় করা

Details >

 আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence ) : আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা এর জনক হিসেবে ধরা হয় ড্যানিয়েল গোলম্যানকে।  তুলনামূলকভাবে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর ধারণাটি নূতন; কিন্তু এটি একটি  শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা হলো নিজের আবেগকে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করা। সংক্ষেপে বলতে গেলে- আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বলতে নিজের ও অন্যদের আবেগকে বুঝা এবং তা ম্যানেজ করার ক্ষমতাকে বুঝায়। অন্যকথায় বলা যায়, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে একজন ব্যক্তির সেই মানসিক সামর্থ্য, যার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি নিজেকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে, আশপাশের অন্যান্যদের সাথে সলফলতার সাথে আচরণ করতে পারে, অন্যকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং স্বীয় অনুভূতির সঠিক বিচার করে প্রতিদিনের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে যথার্থভাবে সাড়া দিতে সমর্থ হয়।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার উপাদানঃ (Elements of emotional intelligence):
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence) পাঁচটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলো সবই মানসিক উপাদানঃ
স্ব-সচেতনতা (Self Awareness): স্ব-সচেতনতা বলতে নিজেকে জানা বুঝানো হয়। ব্যক্তি তার নিজের মনন, মানসিকতা, মানসিক সাহস/সামর্থ্য, ভয়, অসামর্থ্য, দক্ষতা-অদক্ষতা সম্পর্কে সমূহ ধারণা থাকতে হবে। বিশেষ করে নিজের আবেগ ও অনুভূতির প্রকৃতি জানা থাকতে হবে। নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার ক্ষমতাকে আমরা বলতে পারি স্ব-সচেতনতা বা Self Awareness. এক কথায়- Self Awareness means self understanding.

স্ব-ব্যবস্থাপনা / আত্মনিয়ন্ত্রণ (Self-Management/Self-Control): স্ব-ব্যবস্থাপনা/আত্মনিয়ন্ত্রণ মাধ্যমে নিজের আবেগ ও অনুভূতির নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়। নিজের চারপাশের পরিবেশ জেনে নিজের দক্ষতা বিচার করে আচরণ করার ক্ষমতা এটি। এক কথায়- Self Management means handling self emotion.

স্ব-উদ্যম (Self-Motivation): স্ব-উদ্যম বা Self Self-Motivation আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোনো কিছু করার জন্য নিজের মন থেকে যে তাগিদ অনুভূত হয়, তাকে বলা যেতে পারে স্ব-উদ্যম। নিজের কোন উদ্দীপনা না থাকলে আবেগগতভাবে বুদ্ধিমান হওয়া সম্ভব না। নেতিবাচক মনোভাব ঝেড়ে ফেলে নিজে উদ্যমী না হলে অন্যদের সাথেও আচরণ ঠিক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা অসম্ভব। স্ব-উদ্যমকে এককথায় বলা যায় – Self Motivation means remain toward desired goals/overcome negative emotions

অন্যকে উপলব্ধি করা (Empathy):  অন্যকে, অন্যের আবেগ-অনুভূতিকে উপলব্ধির মানে সাধারণভাবে সিম্প্যাথি বলতে যা বুঝায় তার চেয়ে বেশি কিছু। Sympathy কে আমরা সমবেদনা হিসেবে বর্ণনা করি। কেউ যখন কারো সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে, তা উপলব্ধি করে কোনো পদক্ষেপ নেয়, তখন তাকে আমরা Empathy হিসেবে আখ্যা দিতে পারি। মানুষ Sympathy চায় না; চায় কেউ তাকে সত্যিকার অর্থেই বুঝুক। তাই Empathy বিষয়টি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তায় খুব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এককথায় বলা যায়- Empathy means understand and be sensitive to feelings of other.

সামাজিক দক্ষতা (Social Skills): সামাজিক দক্ষতা একটি ব্যাপক বিষয়। অনেক ক'টি গুণের সম্মীলন ঘটলেই তাকে সামাজিক দক্ষতা হিসেবে অভিহিত করা যায়। সামাজিক দক্ষতার জন্য সমাজের পরিস্থিতি বুঝতে পারা, অর্থবহ সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, দক্ষ নেটওয়ার্কিং আর অন্যের আবেগকে পথ প্রদর্শন করার মতো গুণ থাকা আবশ্যক। অন্যকে প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্ব পরিহার করে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার সামর্থ্য সামাজিক দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় বলা যায়- Social Skills means the ability to read social situations, smooth in interaction and forming networks, able to guide other's emotions.

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য :

অন্য যেকোনো দক্ষতার মতো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার দক্ষতাও অনুশীলনের মাধ্যমে শাণিত করা যায়। তবে এমনটাও হতে পারে যে এটি কি তা না বুঝেই সহজাত ভাবে অনেকে উচ্চ ‘আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা’ সম্পন্ন হয়। নিচে বিস্তারিত:

১। তারা অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন:     উচ্চ ‘ই কিউ’ সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেকে জিজ্ঞেস করেন ‘আমি এমন অনুভব করছি কেন?’, ‘আমি এমনটা করলাম কেন?’ এ সকল প্রশ্নের মাধ্যমেই মূলত ‘ই আই’ এর শুরু। প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে একজন তার প্রতিক্রিয়াশীল অনুভূতিগুলোর বিষয়ে সচেতন হন এবং একে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।

২। তারা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে আগ্রহী হন:    তারা জানেন যে তিনি নিজেকে বা নিজের কাজকে যে দৃষ্টিতে দেখেন অন্যরা সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে না। তাই তারা ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেমনই হোক না কেন অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন।

৩। তারা সঠিক সময়ে বিরতি দিতে জানেন:    হুট করে কোনো কথা বলতে গিয়ে বা কোনো কিছু করতে গিয়ে থেমে একটু ভেবে নেয়া, বিষয়টি সহজ মনে হলেও আসলে ততটা সহজ নয়। তবে একটুখানি ভেবে নিলে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়, টিকিয়ে রাখতে পারে অনেক সম্পর্ককে। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে এ বিরতিটি দিতে পারেন।

৪। তারা অন্যের অবস্থান থেকে ভাবার চেষ্টা করেন:    কোনো বিষয়ে কাউকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করার পূর্বে উচ্চ ‘ই আই’ সম্পন্ন মানুষেরা ঐ ব্যক্তির অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। সে কেন এমনটা করল? তার এমন প্রতিক্রিয়ার পেছনে কী কাজ করছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে তারা সবার মধ্যে এক ধরণের মিলবন্ধন খুঁজে পান।

৫। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা সমালোচনা গ্রহণ করতে পারেন:    নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত কে-ইবা শুনতে চায়! তবে ‘ই আই’ সম্পন্ন ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন সমালোচনা ঠিক ভদ্র ভাবে না আসলেও তার মধ্যেও কিছু সত্যতা লুকিয়ে থাকে। তাই তারা সমালোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও সমালোচনা থেকে অন্যরা কিভাবে চিন্তা করে তাও বুঝতে পারেন তারা।

৬। অন্যদের মনোভাবও গুরুত্ব পায় তাদের কাছে:    কোনো একজন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার পর তারা নিজের অজান্তেই ঐ ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন। এর ফলে তাদের কথাগুলি অন্যদের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে তারা তা বুঝতে পারেন। তাই তারা কী বলছেন এর পাশাপাশি কিভাবে বলছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে তাদের কাছে।

৭। তারা নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চান:    নিজের ভুলগুলি স্বীকার করে আবার তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কাজটি সহজ না। কিন্তু আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের ভুলগুলো ধরতে পারেন এবং ‘আমি দুঃখিত’ বা ‘আমি ক্ষমা প্রার্থী’ এ শব্দগুলোর ক্ষমতা সম্পর্কেও তারা জ্ঞাত তাই ক্ষমা প্রার্থনা করতে দ্বিধা করেন না।

৮। তারা ক্ষমা করে দেন:    তারা বুঝতে পারেন যে কেউই আসলে নিখুঁত নয়। তাই ক্ষমা করতে না চাওয়া আসলে একটি ক্ষতকে নিরাময় হওয়ার সুযোগ না দেয়ার মতো। যখন দোষী ব্যক্তি তার জীবনে এগিয়ে চলছে, তখন অযথা অসন্তোষ পুষে না রেখে ক্ষমা করার মাধ্যমে তারা নিজেদেরও এগিয়ে চলার সুযোগ করে দেন।

৯। তারা তাদের চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন:     প্রচলিত কথায় আছে, “একটা পাখিকে হুট করে আপনার মাথায় এসে বসার থেকে হয়তো আপনি থামাতে পারবেন না, কিন্তু আপনার মাথায় বসে বাসা বানানোর থেকে তো থামাতে পারেন!”  আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এটি করার চেষ্টা করেন। কোনো বাজে পরিস্থিতিতে সহজাত কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর থেকে হয়তো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু এর পরবর্তী বিষয়গুলো তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা ঠিক করেন যে তাদের চিন্তাগুলো কোনদিকে ফোকাস করবেন। তারা সবধরনের নেতিবাচক অনুভূতি ঝেড়ে ফেলে নিজেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

১০। তারা কাউকে বিচার করেন না:    কারো সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে, পরিস্থিতি, প্রসঙ্গ ইত্যাদি বিশ্লেষণ না করে কাউকে বিচার করে ফেলা বা কোনো আখ্যা দিয়ে ফেলা খুবই বাজে অভ্যাস। কিন্তু আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্নরা এ কাজটি কখনোই করেন না। তারা মানুষকে জানেন, বিশ্লেষণ করেন কিন্তু কারো উপর কোনো তকমা এঁটে দেন না কখনোই। তারা জানেন যে, একজন মানুষের একটা দিন এমনকি একটা বছরও খারাপ যেতে পারে।

অন্য সব দক্ষতার মতো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্নকেও নৈতিক, অনৈতিক দুই ভাবেই ব্যাবহার করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা যেমন মুক্তি পেতে পারি অনেক নেতিবাচক অনুভূতি থেকে; নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে  অনেক কিছু অর্জন করতে পারি, তেমনি এ দক্ষতার মাধ্যমে  অনেক নেতিবাচক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই  এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধের দক্ষতাও অর্জন করতে হবে।

 কর্মক্ষেত্রে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা (Role of E. I. at Workplace):

       ● চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সংগঠনের উদ্দেশ্যেকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

      কর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও সম্মিলিত ভাবে উপভোগ করার বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়।

       ● চলমান কাজের প্রতি কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়।

       ● দৃঢ় বন্ধন এবং সহকর্মীদের মধ্যে আরও শক্তিশালী সংযোগ স্থাপিত হয়।

       ● উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা পরিবর্তনের সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী মানিয়ে নিতে পারে এবং এর সাথে আসা অতিরিক্ত চাপের সাথে মোকাবিলাও করতে পারে।

       ● কর্মীরা প্রত্যেকের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

       ● উচ্চ আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কর্মীদের তাদের কর্মজীবনে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যত নেতৃত্বের পথে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

    গ্রাহকের প্রয়োজন সম্পর্কে পূর্বানুমান, শনাক্তকরণ ও তা মেটানোর ক্ষমতা;

      অন্যের অনুভূতি সম্পর্কে স্বজ্ঞাতমূলক চেতনা এবং তা বুঝার ক্ষমতা;

       প্রবৃদ্ধি ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা;

       কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে আশাব্যঞ্জক কৌশল ও উপায়সমূহের কার্যকর ব্যবহার;

       অন্যদের বুঝার জন্য স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য বার্তা বিনিময়;

       আপস-আলোচনা এবং দ্বন্দ্ব নিরসনকরণ;

       ব্যবসা সাফল্যের জন্য সহায়ক সম্পর্কের পরিচর্যা।

গুণগত মান চক্র বা সার্কেল/ কাইজেন গ্রুপ (Quality Circle/ Kaizen Group):

গুণগত মান চক্র হল একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ছোট দল যারা কাজ সম্পর্কিত সমস্যা চিহ্ণিতকরণ, বিশ্লেষণ ও সমাধান করে এবং প্রতিষ্ঠানের পণ্য  ও সেবাসমূহের গুণগত মান উন্নত করার জন্য নিয়মিতভাবে মিলিত হয়ে কাজ করে। 

সাধারনত এরূপ দলের কর্মীরা একই ধরণের বা সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে। একটি দলে সাধারণত পাঁচ থেকে পনের জনের উচ্চতর দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা সম্পন্ন কর্মী বাহিনী নিয়ে গুণগত মান চক্র গঠিত হয়। গুণগত মান চক্র কর্মীদেরকে সমস্যা সমাধানে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয় এবং দলগত কাজ ও যৌথ প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করে।

(কাইজেনের সংজ্ঞা দুটি জাপানি শব্দ থেকে এসেছে: 'কাই' অর্থ 'পরিবর্তন' এবং 'জেন' অর্থ 'ভাল')

ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে গুণগত মান চক্র প্রয়োগের উদ্দেশ্য/সুবিধা/গুরুত্ব ( Purpose of Quality Circle Approach in Bank ): 

)  কার্য পরিবেশ উন্নয়ন     ) গ্রাহকের সমস্যার উদ্ভাবনী উপায়ে সমাধান      ) কর্মীদের মধ্যে আচরণগত কাঠামোর চর্চা          ) স্বাস্থ্যকর শিল্প সম্পর্ক তৈরী     ) গ্রাহক সেবার উন্নয়ন     ) সেবার গুণগত মান উন্নয়ন     ) কর্মীর সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা শাণিতকরণ    ) শাখার কাজের গতিশীলতা     ) ব্যবসার লাভজনক সম্প্রসারণ: উপরিব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে শাখার ....     ১০) কুঋণ আদায়     ১১) জাল জালিয়াতি প্রতিরোধ     ১২) জনশক্তির কাম্য ব্যবহার       ১৩) কার্য সন্তুষ্টি বৃদ্ধি      ১৪) ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের সুসংগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা

https://www.henryharvin.com/blog/quality-circle-definition-benefits-and-process/

ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে গুণগত মান চক্র প্রবর্তনের বা পদক্ষেপ ( Steps for launching of Quality Circles):

) কাজ সম্পর্কিত সমস্যা চিহ্ণিতকরন      ২) সমস্যা নির্বাচন     ) সমস্যা আলোচনা ও বিশ্লেষণ     ৪) সমস্যার কারণ চিহ্ণিতকরণ    ৫) মূল কারণ অনুসন্ধান       ৬) সমাধানের পন্থা নির্ধারণ     ৭) সম্ভাব্য প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা অনুমাণ      ৮) পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও কার্যকারিতা যাচাই    ৯) নিয়মিত ভিত্তিতে বাস্তবায়ন    ১০) পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন    ১১) সমস্যা সমাধানের আদর্শ মান নির্ণয়

 Source: https://www.qsqtech.com/2021/03/12-steps-of-quality-circle.html

 

নেতৃত্ব: 

নেতৃত্ব হল এমন এক "সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সার্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে। কোন দল বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকেই নেতৃত্ব বলা হয়। যিনি এ দায়িত্ব পালন করেন তাকে নেতা (Leader) বলা হয়। নেতা নামক ব্যক্তিটি তার দলকে পরিচালিত করার জন্য অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেন বা সঠিক পথ নির্দেশনা দেন। কর্মী বা দলকে পরিচালিত করাই নেতৃত্বের মূলকথা। শব্দগত অর্থে, ইংরেজি 'Lead' হতে 'Leadership' শব্দ এসেছে, যার বাংলা অর্থ হল নেতৃত্ব। 'Lead' শব্দের অর্থ হল পথ দেখানো, চালিত করা (To conduct), আদেশ করা (To direct) ইত্যাদি। 

এম. জে. গানোন (M. J. Gannon) এর মতে, “নেতৃত্ব হল একটি প্রভাব বিস্তারকারী প্রক্রিয়া, যেখানে নেতা একটি নির্দিষ্ট কার্যধারা সম্পাদন করতে তার অধীনস্থদের অবশ্যই প্ররোচিত বা প্রভাবিত করে।” 

তাই নেতৃত্ব বলতে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের জন্য অধীনস্থ লোকদের পরিচালনা করার এমন কৌশলকে বুঝায়, যাতে দলীয় সদস্যরা তাদের সম্ভাব্য সর্বাধিক সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তৎপর হয়।

নেতৃত্বের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য (Traits of Leadership): 

 ১.কার্যকর যোগাযোগ (Effective communication) :       ২. সর্বজনীনতা (Universality) :

৩. দক্ষতার সাথে কার্যসম্পাদন           8. আত্মবিশ্বাস :             ৫. অনুসারীদের সম্পর্কে ধারণা :                               ৬. দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতা :            ৭. প্রভাবিতকরণ (Influencing) :         ৮. পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিবিধান :         ৯. নিজের ভুল ও সীমাবদ্ধতা বোঝা:                  ১০. স্বপ্রণোদিত :        ১১. ইতিবাচকতা :              ১২. দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা               ১৩. সহনশীলতা     ১৪. আত্মসচেতনতা (Self-awareness) :                ১৫. সাংগঠনিক পরিবর্তন আনয়নের ক্ষমতা           ১৬. কৌতুহল :                     ১৭.  ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা         ১৮. প্রতিশ্রতি পালন ও বজায়         ১৯. সবার সাথে ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার :

নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ:

১. নেতার গুণ:    ২. নেতার আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা:    ৩. আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক:    ৪. প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য:     

৫. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য    ৬. অধস্তনদের মনোভাব    ৭. আনুগত্য ও শৃঙ্খলা    ৮. অধস্তন জনশক্তির মান

৯. যোগাযোগ ব্যবস্থা     ১০. পরিবেশ পরিস্থিতি

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের গুরুত্ব (Importance of Leadership in Financial Institutes): 

১. সুষ্পষ্ট দর্শন বাস্তবায়ন                    ২. যোগাযোগ                ৩. কর্মীদেরকে প্রভাবিত করা

৪. কর্মীদের চাহিদা পূরণ :            ৫.  আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ নিরসন                       ৬. ভবিষ্যত নেতা তৈরী :


৭. কর্মীদের প্রেষণা দান           ৮. মনোবল উন্নয়ন (Developing morale) :                  ৯. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি : সময় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কর্মীদের মানসিক চাপ হ্রাস ও গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে ..                 ১০. পরিবর্তনেরর কার্যকর ব্যবস্থাপনা        ১১. উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ        ১২. দিক নির্দেশনা প্রদান        ১৩. উত্তম কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি                ১৪. সুসমণ্বয় :             ১৫. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক (Labor management relations) :   

mygreatlearning.com    

নেতৃত্বের প্রকারভেদ (Types of Leadership):

বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হল :

ক. আনুষ্ঠানিক বিচারে (Basing informalities): সাংগঠনিক নিয়মনীতি ও আনুষ্ঠানিকতার  বিচারে নেতৃত্বকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

       ১. আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব (Formal leadership) : আনুষ্ঠানিক সংগঠন কাঠামোতে পদমর্যাদা হতে যে নেতৃত্বের সৃষ্টি হয় তাকে আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব বলে।

        ২. অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব (informal leadership) : বৃহদাকার প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক জনগোষ্ঠী একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এদের মধ্যকার গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জন্মস্থান, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছা ইত্যাদি পার্থক্যের কারণে তাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এরূপ নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক কোন কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা না থাকলেও দলভুক্ত সদস্যদের উপর তারা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

 

খ. প্রেষণামূলক ধরন বিচারে (Basing on types of motivation): এক্ষেত্রে নেতৃত্বকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. ইতিবাচক নেতৃত্ব (Positive leadership) : একজন নেতা যখন তার অধীনস্থ কর্মীদের আর্থিক বা অন্যান্য উপায়ে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে তাকে কার্যসম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করেন তখন সেই নেতৃত্বকে ইতিবাচক নেতৃত্ব বলে। 

২. নেতিবাচক নেতৃত্ব (Negative leadership) : নেতা যখন কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার পরিবর্তে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করতে সচেষ্ট হন তখন তাকে নেতিবাচক নেতৃত্ব বলে।

 

 গ. তত্ত্বাবধানের ধরন বিচারে (Basing on types of supervisory): নেতার তত্ত্বাবধানমূলক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে নেতৃত্বের দু'টি ধরন বা স্টাইল লক্ষ্য করা যায়। যথা:

        ১. কর্মীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব (Employee centric leadership) : পরিস্থিতি ও মানবিক দিকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যে নেতৃত্ব কর্মীদের সমস্যার সমাধান ও তাদের কার্যসন্তুষ্টি বিধানের চেষ্টা করে তাকে কর্মীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বলে।

        ২. কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব (Work centric leadership) : যে নেতৃত্বে নেতা উদ্দেশ্য অর্জনের সুষ্ঠু নীতি ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে কর্মীদেরকে সর্বদা কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন তাকে কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বলে। 


 ঘ. ক্ষমতা প্রয়োগের ধরন বিচারে (Basing on types of using power): বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ধরনে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এরূপ পার্থক্য ভেদে নেতৃত্ব নিম্নোক্ত চার ধরনের হতে পারে।

        ১. স্বৈরতান্ত্রিক বা প্রভুত্বমূলক নেতৃত্ব (Autocratic leadership) : স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বে সকল ক্ষমতা নেতার হাতে এককভাবে কেন্দ্রীভূত থাকে, নেতাই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

        ২. পিতৃসুলভ নেতৃত্ব (Paternalistic leadership) : প্রভুত্বমূলক বা স্বৈরাচারী নেতৃত্বের উন্নত সংস্করণই হল পিতৃসুলভ নেতৃত্ব। পিতৃসুলভ নেতৃত্বে নেতা কর্মীদের সাথে পিতৃসুলভ আচরণ করেন। এক্ষেত্রে নেতা কর্মীদেরকে স্নেহের ডোরে আবদ্ধ করেন।

     ৩. গণতান্ত্রিক বা অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব (Democratic/ participative leadership) : এটি স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ লক্ষ্য করা যায়। Douglas MacGregor এ ধরনের নেতৃত্বকে Theory "Y" বলে আখ্যায়িত করেন।

        ৪. মুক্ত বা লাগামহীন নেতৃত্ব (Freemen leadership) : মুক্ত বা লাগামহীন নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্বের স্টাইল যেখানে নেতা নামমাত্র নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মীরাই মূলত সকল প্রকার কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন।

ঙ. সম্পর্কের দিক বিচারে (Basing on relationship): নেতা ও অনুসারীদের সম্পর্কের ভিত্তিতে নেতৃত্বকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

        ১. ব্যক্তিগত নেতৃত্ব (Personal leadership) : যে ক্ষেত্রে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিরাজ করে। এবং নেতা প্রত্যক্ষভাবে তার অধীনস্থদের আদেশ নির্দেশ প্রদান ও কার্যাবলি তত্ত্বাবধান করে তাকে ব্যক্তিগত নেতৃত্ব বলে। 

  ২. অব্যক্তিগত নেতৃত্ব (Impersonal leadership): এক্ষেত্রে নেতা ও অধস্তনরা পাশাপাশি বা সামনাসামনি অবস্থান করে না, বরং সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান করে।

নেতৃত্বের দক্ষতাসমূহ/ নেতার ব্যবহৃত নৈপুন্য (Skills of Leadership):

১. কারিগরি দক্ষতা: কোন কৌশল বা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নেতার জ্ঞান ও যোগ্যতাকে কারিগরি দক্ষতা বলে।

২. মানবিক দক্ষতা: দলগত কার্য সম্পাদন করে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন হয় তাকে মানবিক দক্ষতা বলে।

৩. ধারণাগত দক্ষতা: মডেল, অব-কাঠামো এবং ব্যপকভিত্তিক সম্পর্কের আলোকে চিন্তা করার ক্ষমতাকে ধারণাগত দক্ষতা বলে।

৪.  নকশা বা নমুনা দক্ষতা: সর্বস্তরের সাংগঠনিক কার্যসম্পাদনের পাশাপাশি অতিরিক্ত কার্যসম্পাদন ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানের নমুনা তৈরী করাকে নমুনা দক্ষতা বলে।

 নেতৃত্বের লক্ষণ তত্ত্বর মূল বিষয় ( Trait Theory of Leadership)

লক্ষণ তত্ত্ব কার্যকরী নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত নানা ধরনের ব্যবহার ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করে। এটিই সম্ভবত নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রথম তত্ত্ব । থমাস কার্লাইল  (Thomas Carlyle) এ তত্ত্বের অন্যতম পথিকৃৎ। ক্ষমতায় উন্নীত ব্যক্তির প্রতিভা, দক্ষতা এবং শারিরীক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্য তিনি এ তত্ত্বটি ব্যবহার করেছেন। এই তত্ত্বকে ‘বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব ’ এবং ‘গুণভিত্তিক তত্ত্ব ’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। নেতৃত্বের উপর প্রাথমিক গবেষণাকারীরা মনে করতেন, নেতার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে তা তাকে নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

একজন সফল নেতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল: মানসিক ভারসাম্য;  দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতা; কর্মদক্ষতা; নিজের ভুল ও সীমাবদ্ধতা বোঝা ; আত্ম বিশ্বাস; প্রভাবিতকরণ ক্ষমতা; যোগাযোগে প্রতিভা; দৃঢ়তা এবং নমনীয়তা;  সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি।

 এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাদেরকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করে থাকে। নেতৃত্বের এই ধারণার সাহায্যে একজন ব্যক্তি তার সীমাবদ্ধতা এবং শক্তি সম্পর্কে আরও জানতে পারেন। লক্ষণ তত্ত্বের প্রবক্তারা সাধারণত নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলিকে তালিকাবদ্ধ করে রাখেন। এই তত্ত্বে ধরে নেওয়া হয়, কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণই কার্যকর নেতৃত্ব দানের ক্ষমতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে।

লক্ষণ তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা  :

(ক) গুণাবলি তত্ত্বের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে এ তত্ত্বে অবস্থা বা পরিবেশকে কেন্দ্র করে যে নেতৃত্ব গড়ে উঠে তার কোন উল্লেখ নেই। কতিপয় নির্দিষ্ট গুণাবলি কোন একটি সংগঠনের একজন সফল প্রশাসকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু অন্য সংগঠনের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যেমনঃ একজন স্বৈরাচারী প্রশাসক একটি কারাগারের পরিচালক হিসেবে সফল হতে পারেন কিন্তু কল্যাণমূলক সংস্থার ক্ষেত্রে তিনি সফল হবেন না।

(খ) গুণাবলি তত্ত্বে অনুগামী বা অনুসারীদের প্রয়োজন এবং বিভিন্ন গুণের আপেক্ষিক গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি। অর্থাৎ, একজন কার্যকর নেতার জন্য কোন বৈশিষ্ট্যগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে

(গ) যে সকল গুণ একজন নেতার মধ্যে থাকা প্রয়োজন বলে স্থির করা হয়েছে, তা একত্রে একজন নেতার মধ্যে থাকতে পারে না বা না থাকাটাই স্বাভাবিক।

(ঘ) একজন নেতার ব্যক্তিগত গুণাবলি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় যেমন সংগঠনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, অনুসারিগণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং সর্বোপরি সার্বিক পরিস্থিতি সকল নেতৃত্ব বিকাশের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে। অথচ এ তত্ত্বে সে সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই । 
 

রুপান্তরিত নেতৃত্বের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য (Key Factors of Transformational Theory of Leadership) : 

নেতৃত্বের রুপান্তর তত্ত্বটি সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই নেতৃত্ব তত্ত্বে বলা হয়েছে যে একজন সফল নেতা কর্মীদেরকে তাদের সক্ষমতার মধ্যে এবং বাইরে গিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। নেতারা তাদের দলের সদস্যদের জন্য একটি রূপকল্প তৈরি করে তাদেরকে তা উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত করে।  এবং রূপান্তরকারী নেতার মাধ্যমে কর্মচারীর মনোবল জাগ্রত ও অনুপ্রাণিত হয়, যা তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে আরও সুচারুরূপে কার্য সম্পাদন করতে সাহায্য করে। এই ব্যবস্থাপকগন কর্মী সদস্যদের  কথার চেয়ে তাদের কাজের দ্বারা উৎসাহিত করে কারণ তারা এই বিষেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনে পারদর্শী। রূপান্তরিত নেতৃত্ব অনুশীলনকারী নেতা মিথস্ক্রিয়ায়; সক্রিয় যৌথ কাজ এবং কর্মীদের উন্নয়ন এর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এই জাতীয় নেতারা নতুন ধারণা ও সুযোগসমূহ গ্রহণ করে এবং সম্পাদন করা কঠিন এমন কাজকে পছন্দ হিসেবে বেছে নেয়।

রূপান্তরমূলক নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য যা সাংগঠনিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে:

1. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা এবং স্ব-ব্যবস্থাপনা: রূপান্তরকারী নেতারা ভিতরে থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান এবং কোম্পানির দিক নির্দেশনাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে চালিকা শক্তি হিসাবে ব্যবহার করেন।

2. কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা: কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ নেতা হওয়ার একটি অংশ। রূপান্তরকামী নেতারা পিছপা হন না বা কঠিন সিদ্ধান্ত ত্যাগ করেন না। যখন কোন সিদ্ধান্ত দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য দ্বারা সু
স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয় তখন কঠিন সিদ্ধান্তগুলি সহজতর  হয়।

3.  অহংকার দমন: ক্ষমতার একটি অবস্থানে উঠলে মানুষের মধ্যে অহংকার জেঁকে বসা খুবই সহজ। যাইহোক, রূপান্তরকামী নেতারা তাদের অহংবোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্যবসার উন্নয়নের প্রশ্নে অহংকারকে দমন করে।
4. সঠিক ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক: যে কেউ ঝুঁকি নিতে পারে। রূপান্তরকামী নেতারা প্রায়শই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে না এমন অণুমিত
ঝুঁকিসমূহ গ্রহণ করে। নিজের ও দলের সহজাত গুণাবলির উপর আস্থা রেখে বুদ্ধিমত্তার সম্মিলন ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

5. সাংগঠনিক চেতনা: রূপান্তরকারী নেতারা তাদের সংগঠনের সম্মিলিত চেতনা পরস্পর ভাগাভাগি করে নেন।  পরিবর্তন আনা, উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করা এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে তা
তারা বুঝতে পারে।
6. দৃঢ়তা ও অভিযোজনযোগ্যতা: রূপান্তরকামী নেতারা মানিয়ে নিতে ইচ্ছুক এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক পরিবেশে সাড়া দেওয়ার জন্য সর্বদা নতুন উপায় খোঁজেন।

7. নতুন ধ্যান ধারণা শ্রবণ এবং চর্চায় আগ্রহী: খুব কম ব্যক্তিই আছেন যিনি একা একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য তৈরি করতে পারেন। রূপান্তরকারী নেতারা বোঝেন যে সাফল্য হল একটি দলীয় প্রচেষ্টা। এ ধরণের নেতারা তাদের দলের কথা শোনা এবং অন্তর্দৃষ্টির সম্মিলন ঘটানোর জন্য ঐকান্তিক চেষ্টা করে।
8. অনুপ্রেরণা দানের স্বামর্থ্য : মানুষ অনুপ্রাণিত হতে চায়।  অনুপ্রেরণা শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক প্রেরণামূলক বক্তৃতা বা কোন ভাল কাজের জন্য সহজ স্বীকৃতি দান থেকে আসে না, বরং কারো সাথে ব্যক্তি হিসাবে আচরণ করা এবং দলকে কোন কোন বিষয়গুলো অনুপ্রাণিত করে তা সময় নিয়ে বোঝার সাথে জড়িত।
রূপান্তরকামী নেতারা এই বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশ  একজন ব্যবস্থাপক তথা নেতাদের দ্বারা পরিচালিত একটি সংগঠনকে বিশেষভাবে আলাদা করে।

 https://www.billhogg.ca/10-characteristics-of-transformational-leaders/

নেতার সফলতা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর- পরিস্থিতিগত তত্ত্বের ভিত্তিতে আলোচনা:

ফ্রেড ফিডলার র্দীঘ ১৬ বছরের সমীক্ষা শেষে পরিস্থিতিগত তত্ত্ব প্রর্বতন করেন। এই তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একজন নেতার সফলতা নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর। কোনো একজন নেতা বিশেষ পরিস্থিতিতে সফল হবেন আবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে সফল নাও হতে পারেন। একজন নেতার কাজ হলো বিশেষ ক্ষেত্রে বা পরিস্থিতিতে, বিশেষ অবস্থায় এবং বিশেষ সময়ে কোন কৌশল/পদ্ধতি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে তা খুঁজে বের করা। পরিস্থিতিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কার্য সিদ্ধির জন্য সবচেয়ে উত্তম-এ বিষয়টি মাথায় রেখে একজন নেতা কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন। কী ধরণের নেতা কী পরিবেশে সফল হবেন এ তত্ত্ব তাও ব্যাখ্যা করেছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র নেতার গুণাবলিই নয়, পরিবেশও নেতার নেতৃত্বের সফলতার জন্য কাজ করে।

এই তত্ত্বে  পরিস্থিতির চারটি ধরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পরস্থিতিগত নেতা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে নেতৃত্বের নিম্নলিখিত আচরণগত ধরণের মধ্যে একটি ব্যবহার করতে পারেন:

 ১) নির্দেশনা: ব্যবস্থাপক তার কর্মী বাহিনীকে ‍কী করতে হবে এবং তা কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন।

২) প্রভাবিতকরণ: দলের সদস্যবৃন্দ নেতার আদর্শ ও ধ্যান ধারণা দ্বারা প্ররোচিত হবে।

৩) অংশগ্রহণ: সফল নেতা তার দলের সদস্যদেরকে সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করবেন।

৪) প্রতিনিধিত্ব অর্পন: নেতাগণ কোন কাজে তাদের সংশ্লিষ্টতা কমিয়ে বেশিরভাগ কাজ দলের উপর ছেড়ে দিবেন। এভাবে নেতা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার দলের উপর ন্যস্ত করবেন, কিন্তু তিনি সবসময় পরামর্শ দানের জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

এ তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ:

১. নেতার ব্যক্তিত্ব: ফ্রেডলার এবং তার সহযোগীরা মনে করেন যে, নেতার সাফল্য নির্ভর করে নেতার ব্যক্তিত্ব এবং পরিস্থিতির সামঞ্জস্যর মধ্যে। নেতার  ব্যক্তিত্বকে তাঁরা দুভাগে ভাগ করেছেন- কর্মমুখী ও সর্ম্পকমুখী। এছাড়াও পরিস্থিতির অবস্থাভদেে তিন ভাগে ভাগ করেছেন- সবচাইতে উপযোগী, অনুপোযোগী এবং মাঝামাঝি।

২. কর্ম ও সম্পর্কমুখী প্রেষণা: এ তত্ত্বে কর্ম ও সম্পর্কমূখী প্রেষণারও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ তত্ত্বে ফিডলার এ দুটিকে    চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তি বিশেষে এ বৈশিষ্ট্যর কোন পরিবর্তন হয়না। 

কর্ম-ভিত্তিক নেতৃত্বে কিছু কাজের ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য জড়িত। এই ধরণের নেতা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে কাজগুলি সম্পাদন করা প্রয়োজন তার উপর গুরুত্বারোপ করে। সম্পর্কমুখী নেতৃত্ব কর্মীদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মীদের অনুপ্রেরণা, কাজের সন্তুষ্টি এবং কর্ম-জীবনের ভারসাম্য তৈরির ফলশ্রুতিতে সাফল্য অর্জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।

পরিস্থিতি ভেদে  উভয় ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন। নেতা যদি শুধুমাত্র কর্ম-কেন্দ্রিক উপায়ে নেতৃত্ব দেন, কিছু দিনের মধ্যে কর্মীদের মাঝে অসন্তুষ্টি তৈরী হবে। এবং নেতা যদি শুধুমাত্র সম্পর্ক-কেন্দ্রিক উপায়ে নেতৃত্ব দেন, অতি শীঘ্রই বা পরে দেখা যাবে যে নির্দিষ্ট কাজগুলি সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয় না বা খুব দেরিতে করা হয়। তাই এক ধরনের নেতৃত্ব অন্যটি ছাড়া থাকতে পারে না। পরিস্থিতি বুঝে নেতা নেতৃত্ব দানের উপায় পরিবর্তিত করতে পারেন।

৩. পরিস্থিতির উপযোগিতাঃ ফিডলারের মতে, পরিস্থিতির উপযোগিতা নির্ভর করে তিনটি উপাদানের উপর:  ক) নেতা ও দলের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক,     খ) কাজের কাঠামো  ও     গ) পদগত ক্ষমতা

নেতার জন্য সবচয়েে উপযোগী পরিস্থিতি হলো যখন নেতা ও দলের সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান সর্ম্পক খুব ভালো থাকে। যখন যে কাজটি দল করবে তা যদি হয় খুবই কাঠামোগত তাহলে নেতার পদগত ক্ষমতাও থাকে বেশি। নেতার জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী পরিস্থিতি হলো যখন নেতার সাথে দলের সদস্যদের সর্ম্পক খারাপ থাকে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনুপযোগী হবে যখন যে কাজটি দল করবে তা যদি  কাঠামোগতভাবে দুর্বল হয় এবং নেতার পদগত ক্ষমতা যদি খুবই কম হয়। এ দুই এর মাঝামাঝি অবস্থান হলো নেতার জন্য উপযোগী ও অনুপযোগীর একটি মাঝামাঝি র্পযায়। ফিডলারের মতে, পরিস্থিতি যখন অনেক উপযোগী বা অনুপযোগী তখন কর্মমুখী নেতৃত্ব সফল হবে। আর পরিস্থিতি যখন এ দুই এর মাঝামাঝি র্পযায় তখন সর্ম্পকমুখী নেতৃত্ব সফল হবে।

আদান প্রদান মূলক নেতৃত্ব এবং রূপান্তরিত নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য (Transactional Vs Transformational Leadership):

তুলনার বিষয়

আদান প্রদান মূলক নেতৃত্ব

রূপান্তরিত নেতৃত্ব

ধারণা
নেতা তার সংগঠনের সফলতা ও কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেন
নেতা তার অনুসারীদের মূল্যবোধ, আদর্শ ও চাহিদার উপর গুরুত্বারোপ করেন
প্রকৃতি    
আরোপিত ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব
কর্মতৎপরতামূলক
বুদ্ধিমত্তার উদ্দীপক
আমলাতান্ত্রিক ও আনুষ্ঠানিক অবস্থান হওয়ায় উদ্দীপক হিসেবে বুদ্ধিমত্তা কোন ভুমিকা রাখে না।
মোহনীয় এবং প্রেরণা দানে সামর্থ বুদ্ধিমত্তা যেমন- সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

উপযোগীতা
কাজসমূহ সুনির্দিষ্ট এমন স্থির পরিবেশে কার্যকরী
অস্থিতিশীল পরিবেশে কার্যকরী
কার্যাবলি
এর কাজ হল বিদ্যমান সাংগঠনিক সংস্কৃতি ও কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করা
নতুন ধ্যান ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যমান সাংগঠনিক সংস্কৃতির পরিবর্তন
নেতার সংখ্যা     
মাত্র একজন

 

একাধিক ব্যক্তি

 

গুরুত্ব
দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন ও স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যর উপর
দীর্ঘমেয়াদী সফলতার জন্য উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ডর উপর
পুরস্কার
বৈষয়িক বিষয়ের মাধ্যমে পুরস্কৃত করে, যেমন- উৎসাহ বোনাস ও পদোন্নতি
অন্তর্ণিহিত পুরস্কার যেমন- মর্যাদা ও গৌরব
তদারকি
কর্মীদেরকে অতিরিক্ত তদারকি করা হয়।
কর্মীদের ক্ষমতায়ন করে।
প্রেষণার হাতিয়ার
অনুসারীদেরকে প্রথমত তাদের নিজস্ব স্বার্থ দেখিয়ে আকৃষ্ট করা হয়।
দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করে অনুসারীদের আকৃষ্ট করা হয়।
https://www.oneeducation.org.uk/difference-between-transactional-and-transformational-leadership/

ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্বের প্রয়োগ বা ধ্যান ধারণা (Leadership in Banking: The Required Approach):

নেতৃত্ব কোন দেশ সমাজ, গোষ্ঠি, ব্যবসায়িক সত্ত্বা নির্বিশেষে একটি জটিল ও বৃহত্তর বিষয়। নেতৃত্ব হল কোন অবস্থার পরিস্থিতিতে একটি কাজ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করার জন্য একজন ব্যক্তির মানবীয় গুণাবলীর সৃষ্টি ও প্রকাশের সাথে জড়িত। ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্বের ধারণাসমূহ নিচে ..

একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবসা খাত:      ব্যাংকিং ব্যবসা অন্যান্য যে কোন মালিকানা ও সরকারি কাঠামো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। তাই এই খাতে নেতৃত্বকে কিছুটা ভিন্নভাবে দেখা হয়। অধিকন্তু ব্যাংকিং এর মত কঠোর নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত শিল্পে কার্যদক্ষতার মাপকাঠি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি বিস্তৃত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আর্থিক অবস্থার সাথে জড়িত। 

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন মোকাবেলা:     বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মন্দা দেখা দেওয়ায় নেতৃত্বের গুরুত্ব নতুন করে উঠে এসেছে। প্রাসঙ্গিকভাবে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং পরিবর্তন সৃষ্টির জন্য আগ্রহের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। পরিবর্তনের চাহিদাকে বিবেচনা করে প্রতিযোগীতামূলক সুবিধা, গ্রাহকের আচরণ, প্রযুক্তি ও প্রতিযোগীতা খুব দ্রুত আবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং ব্যাংকিং সেক্টরে নেতাকে চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং পরিবর্তনকে ব্যতিক্রম নয় বরং নিয়ম হিসেবে দেখা উচিৎ।

পরিস্থিতিমূলক নেতৃত্বের প্রয়োগ:      নেতৃত্বের বহুল ব্যবহৃত তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে আদান প্রদানগত তত্ত্ব, রুপান্তরিত তত্ত্ব, লাগামহীন নেতৃত্ব প্রভৃতি। গবেষণায় দেখা যায় যে, কোন একটি একক নেতৃত্ব সকল সময়, সকল অবস্থায় কাজ করে না। তাই একটি পরিস্থিতিতে সফল হয়েছিল এরূপ নেতৃত্বের সরঞ্জাম অন্য পেক্ষাপটে অন্ধভাবে গ্রহণ করা সমীচীন নয়। সময়ের সাথে সাথে একটি ব্যাংকের নেতৃত্বের পদ্ধতি এর আভ্যন্তরিণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনের সাথে সাথে অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিৎ। 

উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার প্রয়োগ:     নতুন ধ্যান ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যমান সাংগঠনিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং দীর্ঘমেয়াদী সফলতার জন্য উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ডর উপর গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।  বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা নেতৃত্ব পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃত।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ:    সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো অংশগ্রহণমূলক বা গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অনুসরণ করে থাকে।  ব্যাংকিং শিল্পের প্রেক্ষাপটে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা খুবই আবশ্যক। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা দলীয় নেতৃত্বে বিশেষভাবে অবদান রাখে। ব্যাংকিং ব্যবসায় সহকর্মীদের একটি দলের সম্মিলিত অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ:    একটি ব্যাংকের সুষ্ঠু , সফলভাবে ও নিরাপদে পরিচালনার জন্য শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নেতৃত্বের একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে তাদের মধ্যে নির্ধারিত সীমা রেখা কখনই লঙ্ঘন করা কাম্য নয়। সুস্পষ্টভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনা প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, কর্মচারী ও বোর্ড সদস্যদেরকে অবশ্যই আমানতকারীদের প্রতি জবাবদিহিতা দেখাতে হবে। এ বিষয়ে কর্মীদেরকে অনুপ্রাণিত করন আমানতকারীদের প্রতি ব্যাংক কর্মীদের সঠিক ধারণা তৈরী করতে কাজ করবে। কারণ, আমানতকারীরাই ব্যাংকের প্রকৃত মালিক  ও ঝুঁকি গ্রহণকারী। 

দলীয় নেতৃত্ব ও প্রেষণা:     ব্যাংকে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলীয় নেতৃত্ব ও প্রেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় দলীয় ফলাফল অর্জনে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি প্রভাব ফেলে। এভাবে প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বোর্ড ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে এরূপ ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে কর্মীরা আবেগীয় সমর্থন ও সাহস পায়। অনেক ক্ষেত্রে এরূপ সমর্থন কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানের কল্যানার্থে ঝুঁকি ও পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে।

কোমল দক্ষতা সমূহের উন্নয়ন:     নেতৃত্বের দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীদের মধ্যে বিভিন্ন রকম কোমল দক্ষতা সমূহের উন্নয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তির নিন্দা ও প্রসংশা উভয়ই প্রয়োজন। কোন ব্যক্তিই তার সহকর্মীদের কাছ থেকে শূন্য বিচ্যুতি আশা করে না। একজন সত্যিকারের নেতা ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। এবং সহকর্মীদেরকেও শিখতে উৎসাহিত করে। বস্তুতপক্ষে, এটি কৌশলগত সামর্থ্য এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার মত সফট বা কোমল দক্ষতা সংমিশ্রণ যা পেশাগত ব্যাংকিং এ অবদান রাখে। 

Finbislesh.com

দল গঠন ও এর অত্যাবশকীয় দক্ষতাসমূহ (Team building and it's skills ):

সাধারণভাবে দল বলতে বুঝায়, যখন কতিপয় ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় এবং উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হয়।

দল গঠন হল একটি ব্যবস্থাপনা কৌশল যা বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কোন কর্মী দলের দক্ষতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা কোন কর্মরত দলকে একটি সমন্বিত ইউনিটে পরিণত করতে সাহায্য করে।  একটি শক্তিশালী এবং সক্ষম দল গঠনের জন্য প্রচুর দক্ষতা, বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হয়। দল গঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য হল সংগঠনের রূপকল্প ও উদ্দেশ্য অর্জন করা। সংক্ষেপে বলা যায়, দল গঠন হল কাজের সংস্কৃতি এবং নৈতিকতা উন্নত করার নিমিত্তে দলের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন।

দল গঠনের দক্ষতাসমূহ/ নেতার গুণাবলী  (Team Building Skills):

১. কার্যকর যোগাযোগ          ২.  সহযোগিতা      ৩. সহনশীলতা         ৪. নমনীয়তা           ৫. জবাবদিহিতা                     ৬. সৃজনশীলতা     ৭.  আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা         ৮.  সহানুভূতি       ৯. সক্রিয় শ্রবণ        ১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণ              ১১.  দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি                      ১২. সমস্যা-সমাধান            ১৩. বিশ্বাস-স্থাপন         ১৪. সময় ব্যবস্থাপনা            ১৫. নেতৃত্ব                   ১৬. ভার অর্পণ           ১৭. প্রেষণা দান            ১৮. সাংস্কৃতিক সক্ষমতা

 https://cityhunt.com/16-essential-team-building-skills/

 দল গঠনের গুরুত্ব (Importance of Team-Building ):

১. বিশ্বাস তৈরী         ২.  যোগাযোগ বৃদ্ধি     ৩. বিভিন্ন কর্মদক্ষতার সম্মিলন          ৪. সহযোগীতাকে উৎসাহিত করে           ৫. দূরবর্তী দলের সংযোগ সাধন    ৬. দলের কর্মীদের মধ্যে বৈচিত্র আনে    ৭.  পারস্পরিক কার্যাবলি ভাগাভাগি        ৮. সৃজনশীলতার বিকাশ        ৯. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন           ১০. সাংগঠনিক সংস্কৃতির উন্নয়ন                   ১১.  নেতা শনাক্তকরণ                      ১২. সবল ও দুর্বল দিক অনুসন্ধান            ১৩. উদ্দীপনা বৃদ্ধি                                 ১৪. সুসম্পর্ক তৈরী         ১৫. সমস্যা পরিহার        ১৬. অংশগ্রহণে উৎসাহ          ১৭. সামাজিক অবস্থান

https://ca.indeed.com/career-advice/career-development/importance-of-team-building

দলীয় গতিশীলতা ( group dynamics):

দলীয় গতিশীলতা বলতে দলের কোন কর্মীর মনোভাব ও আচরণ প্রক্রিয়াকে বুঝায় যা পরিস্থিতি ও পছন্দ অনুযায়ী অন্য সদস্যদেরকে প্রভাবিত করে।

সহজভাবে বলা যায়, কোন সামাজিক পরিস্থিতিতে দলের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া ও শক্তির প্রবাহকে দলীয় গতিশীলতা বলে। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব আদর্শ ও নিয়ম নীতি থাকে। এসব আদর্শ পরিপালনের মাধ্যমে দলীয় আচরণের লক্ষ্য অর্জিত হয়। কর্মীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক অবস্থা প্রায়শই দলীয় গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। এর মাধ্যমে দলের সদস্যদেরকে এক অপরের সম্পর্ক, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা ভাবনার ধরণ পরিবর্তিত হয়।

দলীয় কর্মদক্ষতা বা গতিশীলতা বৃদ্ধির উপায় (Techniques of increasing group dynamics/ team performance):

১. সময় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা            ২. দলকে ঐক্যবদ্ধ করা         ২.  লক্ষ্য নির্ধারণ ও নির্ণয়        ৩. প্রশিক্ষণ ও শেখার সুযোগ        ৪. নমনীয় হওয়া       ৫. দলের মনোবল বৃদ্ধির কার্যক্রম        . স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম            অতি ব্যবস্থাপনা পরিহার (micromanagement)           ৯. ফলাবর্তন চালু রাখা        ১০. কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ              ১১.  অপ্রয়োজনীয় সভা পরিহার                  ১২. কাজের শ্রেণী বিভাগকরণ           ১৩.দলীয় শক্তির বিচক্ষণ ব্যবহার             ১৪. কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ       ১৫. সাফল্য উদযাপন এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা         ১৬. স্বীকৃতি ও পুরষ্কার

দলীয় কর্মদক্ষতা বা গতিশীলতা  অনুধাবনের গুরুত্ব (Importance of understanding Group Dynamics): 

১. প্রথমত, একটি দল সদস্যদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। সদস্যরা সর্বদা দলের অন্যান্য সদস্যদের মিথস্ক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। একজন ভাল নেতার সাথে সম্পৃক্ত একটি দল  দুর্বল নেতার দ্বারা সংগঠিত একটি দলের তুলনায় ভাল কার্য সম্পাদন করে।
২. দলে যৌথ প্রচেষ্টায় অর্জিত সাফল্যের উপর প্রভাব পড়ে, অর্থাৎ, যদি কোন দল ইতিবাচক চিন্তাবিদদের নিয়ে গঠিত হয় তাহলে এর ফলাফল প্রতিবার প্রত্যাশার চাইতেও বেশি হয়।
৩. দলের গতিশীলতা সদস্যদের কাজের সন্তুষ্টি এনে দিতে পারে।
৪. দল সদস্যদের মধ্যে দলীয় চেতনাও ছড়িয়ে দেয়।।
৫. এমনকি সদস্যদের মনোভাব, অন্তর্দৃষ্টি এবং ধারণাসমূহ
দলীয় গতিশীলতার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, নেতিবাচক চিন্তাবিদগনও পরামর্শকের সহায়তায় ইতিবাচক চিন্তাবিদে রূপান্তরিত হয়।
৬. এছাড়াও, যদি কোন দল একটি সমন্বিত গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করে, সহযোগিতা এবং অভিন্নতার ফলে উত্পাদনশীলতা সর্বাধিক হয়।
৭. উপরন্তু, দলীয় গতিশীলতা শ্রম অসন্তোষ কমাতে পারে। সবশেষে, গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে মানসিক সংযুক্তির কারণে এটি শ্রমের ঘুর্ণায়মানতা  হ্রাস করে।

দলীয় সংযোগশীলতা/ সংহতি: 

দলীয় সংযোগশীলতা হচ্ছে দলের প্রতি আকর্ষণ, সদস্যদের পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং দলে অবস্থান করার অনুপ্রেরণা। কোন দল যখন বাইরের হুমকির সম্মুখীন হয় এবং হুমকির মুখে দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয় তখন সংযোগশীলতার শক্তি দিয়ে দলের সদস্যগন সেই হুমকি মোকাবেলা করে থাকে।দলীয় সহতি আন্তঃব্যক্তিক পছন্দ, কাজের প্রতিশ্রুতি এবং দলীয গর্ব প্রভৃতির অণুভূতি নিয়ে গড়ে ওঠে।

দ্বন্দ্বের উৎস বা কারণসমূহ (Causes of Conflict): 

 সমগুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিদ্বন্দী বিষয়কে নিয়ে আমাদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে দ্বন্দ্ব বলা হয়।

) দলীয় লক্ষ্যের ভিন্নতা       )    ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা        ) আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব      ) নেতৃত্বের ধরণ

 ) সাংগঠনিক কাঠামোর ভিন্নতা        ) সম্পদের সীমাবদ্ধতা       ) ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ইচ্ছা     ) দুর্ণীতি  

) পারস্পরিক নির্ভরশীলতা     ১০) মূল্যবোধের পার্থক্য     ১১) যোগাযোগের ব্যার্থতা      ১২) বিতর্কিত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ                 ১৩) প্রেষণার ঘাটতি        ১৪) প্রতিকূল কাজের পরিবেশ

আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় (Steps to Resolve Inter personal Conflict):

দ্বন্দ্ব হচ্ছে সংঘাত, ঝগড়া, বিবাদ, যুদ্ধ বা শত্রুতা; দ্বিধা বা সংশয় বা বৈপরীত্য। দ্বন্দ্ব বলতে বোঝায় একটি দলের এক বা একাধিক সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য, বিরোধ, সংঘর্ষ প্রভৃতি যা বিশ্বাস বা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে দ্বন্দ্ব দু’টি দলের মধ্যেও হতে পারে। দ্বন্দ্ব যখন একই দলের মধ্যে সংঘঠিত হয় তখন তাকে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বলে।

১) দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যাওয়া         ২. দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সজাগ থাকা           ৩. যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি             ৪. পরিস্থিতি তদন্ত করা           ৫. দ্বন্দ্ব মোকাবেলার উপায় অবলম্বন        ৬. প্রত্যেকের মতামত গ্রহণ           ৭. বিকল্পসমূহ চিহ্নিতকরণ ও সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন           ৮. সর্বসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ           ৯.  পরবর্তী অবস্থা মূল্যায়ন             ১০. ভবিষ্যতের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

শিল্পে বা কর্মক্ষেত্রে বা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরামর্শ (Industrial /Employee Counselling):

কাউন্সেলিং বা পরামর্শ হল একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া যেখানে একজন পরামর্শক কর্মীদের উপদেশ ও দিক নির্দেশনার মাধ্যমে সাহায্য প্রদান করেন। কাজের পরিস্থিতিতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যখন একজন কর্মী নির্দেশনা এবং পরামর্শের প্রয়োজন অনুভব করেন। 'কাউন্সেলিং' শব্দটি তার অধীনস্থ ব্যক্তির কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য একজন উচ্চতর ব্যক্তির দ্বারা প্রদত্ত সহায়তাকে বোঝায়। কর্মী পরামর্শ হল এমন ব্যক্তিদের বোঝার এবং সাহায্য করার একটি পদ্ধতি যাদের কৌশলগত, ব্যক্তিগত এবং আবেগীয় সামঞ্জস্যের সমস্যা রয়েছে যা তাদের কর্ম দক্ষতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। 

একজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত সমন্বয় জনিত অবস্থার প্রায়শই উন্নত হয় যখন সে তার সমস্যার একটি বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সক্ষম হয় বা যখন সে প্রতিহিংসার ভয় ছাড়াই তার অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। পরামর্শ হল যোগাযোগের একটি পরিশীলিত রূপ যেখানে গঠনমূলক মনোভাব বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়।

কর্মী পরামর্শ দান প্রক্রিয়ার পদক্ষেপসমূহ (COUNSELLING PROCESS):

১. সম্পর্ক স্থাপন (সাক্ষাতকার নেয়া)             ২. সমস্যা চিহ্ণিতকরণ     ৩. সমস্যা বিশ্লেষণ       .  পরামর্শের সর্বোত্তম পদ্ধতি নির্বাচন        ৫. প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ       ৬. ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার          ৭. ফলাবর্তন প্রদান          ৮. পর্যালোচনা       

indeed

কর্মী পরামর্শের প্রতিবন্ধকতাসমূহ (Problems in Employee Counseling):

) হীনমন্যতা এবং নিম্ন আত্মসম্মান: হীনমন্যতা কমপ্লেক্স একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ হতাশা এবং হতাশার দিকে নিয়ে যেতে পারে যা কোন কিছুতে বিরত থাকার প্রবৃত্তি, অনুপস্থিতি এবং এমনকি মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।

) অন্যায় বা দুর্ব্যবহার         বিবাহপূর্ব উদ্বেগ এবং যৌন বিকৃতি    ) মাদকাসক্তি ও নেশাগ্রস্ততা         

 ) আসক্তির সমস্যা : আসক্তি হল এমন কোন অভ্যাস, চর্চা, আচরণ বা এমনকি চিন্তা যা একজন ব্যক্তির সাথে অভ্যাসগতভাবে বা বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত থাকে, যার ফলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।  অনেক লোক অ্যালকোহল, পর্নোগ্রাফি সামগ্রী, টেলিভিশন, অবাধ যৌনাচার, ধূমপান, বেহিসেবি খরচ, অতিরিক্ত ভোজন বিলাস, জুয়া ইত্যাদিতে আসক্ত। কিছু লোক আছে যারা যে কোন ছলে বলে, কৌশলে অর্থ উপার্জন এবং সম্পদ আহরণের নেশাগ্রস্ত। অতএব, এই ধরনের বিষয় মোকাবেলা করা নির্বাহীদের জন্য সহজ কাজ নয়।      

) ট্রেড ইউনিয়নের অসহযোগীতায় মানসিক দ্বন্দ্ব         ) আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ভাঙ্গন         ) নিম্ন কার্য সন্তুষ্টি এবং মনোবল

) পারিবারিক জীবনে ভাঙন     ১০) গোপনীয়তার সীমারেখা বজায় রাখা        ১১) কাউন্সেলিং এর উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কে কর্মীদের শিক্ষার অভাব     ১২) সংগঠনের প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাব

https://www.mbaknol.com/human-resource-management/problems-in-employee-counseling/
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, Governance in Financial Institution
পড়তে ক্লিক করুন

ব্যবসায়িক নৈতিকতা (Business Ethics):

ব্যবসায়িক নৈতিকতা বলতে ব্যবসায় নীতিগতভাবে সঠিক এবং ভুল আচরণের আদর্শ মানসমূহকে বোঝায়। আইন আংশিকভাবে আচরণকে সংজ্ঞায়িত করে, কিন্তু "আইনসিদ্ধ" এবং "নৈতিক" স্পষ্টত এক কথা নয়। ব্যবসায়িক নৈতিকতা সরকারী নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে গ্রহণযোগ্য আচরণের রূপরেখা দিয়ে আইনকে সমৃদ্ধ করে।

বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের মধ্যে সততা প্রসার ঘটাতে এবং বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের মতো মূল স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আস্থা অর্জনের জন্য ব্যবসায়িক নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করে। যদিও কর্পোরেট নৈতিকতা কার্যক্রম আজকাল সব প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়,তবে এর গুণমানের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। ২০১৮ সালের গ্লোবাল বিজনেস এথিক্স সার্ভে (GBES) অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মার্কিন কর্মী মনে করেন যে তাদের কোম্পানিতে  নৈতিকতা কার্যক্রমের চমৎকার বাস্তবায়ন রয়েছে।

সুতরাং বলা যায় যে, ব্যবসায় নৈতিকতা হলো এমন একটি পদ্ধতি যাতে ব্যবসায়ের কার্যক্রমে নৈতিক জ্ঞান  নীতি  প্রয়োগ করত: ভাল মন্দ  শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাই করা যায়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের কাযর্যক্রম পরিচালনার জন্য নৈতিকতার ব্যবহারকে ব্যবসায় নৈতিকতা বলে।

নৈতিকতার প্রাতিষ্ঠানীকিকরণের উপায়:

নৈতিকতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বলতে এমন পরিস্থিতিকে বুঝায়, যাতে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনে নৈতিকতার ধারনা ব্যবহার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের নিচের স্তর হতে শুরু করে উচ্চ স্তর পর্যন্ত সকলেই যখন স্ব স্ব কার্য নৈতিকতার ধারনা মনে রেখে কার্য সম্পাদন করে তখন তাকে নৈতিকতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বলে। 

. উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতি       . কর্পোরেট নীতিমালা প্রণয়ন    ৩. নৈতিকতার প্রশিক্ষণ    

৪. নৈতিকতা বিষয়ক কমিটি            . নৈতিকতার আদর্শ মান সৃষ্টি         . নৈতিক আচরণের উন্নয়ন       

 . নৈতিক আচরণকে পুরস্কৃত করা      . ভুল থেকে শিক্ষা     

১২. ন্যায়পাল নিয়োগ (Ombudsman): সংগঠনের আদেশের শৃঙ্খলের উপরে এবং নিচের স্তরে অনানুষ্ঠানিক এবং গোপনীয় যোগাযোগ সহজতর করার জন্য একজন "ন্যায়পাল" নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে।কর্মচারীদের মধ্যে যারা তাদের সুপারভাইজারের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বা যারা রিপোর্ট না করে কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চান, একজন ন্যয়পাল তাদেরকে প্রতিবেদন দাখিল করার প্রক্রিয়া, বিকল্প বিধি ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে।

. নৈতিকতার নিরীক্ষা: পরীক্ষা নীরিক্ষাসহ অনৈতিক আচরণের প্রতিবেদন প্রদান

১০. সময়ের সাথে চলা: পরিবেশবাদ থেকে শুরু করে টেকসই সম্পদ নিয়ে কাজ করা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সাইবার অপরাধ মোকাবেলা ও বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় গোপনীয়তা রক্ষা সবই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নৈতিকতার বিধিতে ..  

 ১১. কর্মী ও গ্রাহকের সাথে সংশ্লিষ্টতা: সহকর্মী ও গ্রাহকদেরকে সংগঠনের আচরণ বিধি প্রণয়নে জড়িত রাখতে হবে। ফলে তারা প্রত্যেকে সংগঠনের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির  একটি অংশ মনে করবে।  

১৩. নৈতিকতা বিষয়ক সংযোগ (Hotline) :

নৈতিক নেতৃত্ব: নৈতিক নেতৃত্ব হল এমন নেতৃত্ব যা নৈতিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এবং অন্যের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ধরণের নেতৃত্বে নৈতিক দিক নির্দেশনার অনুসরণের উপর জোর দেওয়া হয়। বস্তুতপক্ষে নৈতিক নেতৃত্ব সেই আচরণের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন ঘটায় যা আদেশের নিম্ন থেকে শীর্ষ স্তর নির্বিশেষে মূল্যবোধের ভিত্তিতে অন্যের অধিকারকে সম্মান প্রদর্শন করে।

সংক্ষেপে বলা যায়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাধারণ কল্যান সাধনের নিমিত্তে মৌলিক মূল্যবোধের অনুধাবন এবং এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার সাহসকে নৈতিক নেতৃত্ব বলে।

নৈতিক নেতৃত্বের মূল উপাদান/সাংগঠনিক নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য/ নৈতিকতার হাতিয়ার (Fundamentals of Ethical Leadership):

) ন্যায়পরায়ণতা       ) ন্যায্যতা      ) সততা   ) সরলতা     ৫) বিশ্বাসযোগ্যতা     ৬) বোধগম্যতা                        ৭) জবাবদিহিতা    অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল   ৮স্বপ্রণোদিত      )  মনোযোগী     ১০) মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ়তা     ১১) মর্যাদাবোধ     ১২) ধারাবাহিকতা      ১৩) আনুগত্য      ১৪) মানবিক ব্যবহার       ১৫) নৈতিকতার লঙ্ঘনে আপোষহীন

ব্যবসায়ে নৈতিকতা বা নৈতিক নেতৃত্বের ভুমিকা/গুরুত্ব/ প্রভাব (Effect of Ethical Leadership):

) কর্মীর কার্য সন্তুষ্টি বৃদ্ধি      ) গ্রাহকের বিশ্বস্ততা অর্জন     ) বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে         ) মেধার সংরক্ষণ ও আকৃষ্ট করে      ) আর্থিক স্থিতিশীলতা     ) আইন খরচ ও আইনী ঝামেলা পরিহার         ) ইতিবাচক জনসংযোগ (Public Relations)     ) অধিক স্বাধীনতা ও অতি ব্যবস্থাপনা হ্রাস     ) মনোবল ও কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি    ১০) আত্মতুষ্টি         ১১) কর্মস্থলের সুষ্ঠু পরিবেশ     ১২) সুষ্ঠু প্রতিযোগীতার প্রসার      ১৩) টেকসই সুঅভ্যাস গঠন          ১৪) সম্পদের সুরক্ষা    ১৫) ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি অর্জন

👉  https://cyberonlineread.com/10-importance-of-business-ethics  👉 https://factohr.com/business-ethics-importance

সাংগঠনিক আচরণ বিধি (Organizational Code of Conduct):
* *
আচরণবিধি (CoC) হল মূল্যবোধ, নিয়ম, মান এবং নীতিসমূহের একটি রূপরেখা যা নিয়োগকর্তারা একটি সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকে আশা করে। সাধারণত, এটি ইতিমধ্যে প্রচলিত বর্তমান সংস্কৃতির প্রতিফলন হতে পারে, বা এমন সংস্কৃতিও হতে পারে যা সংগঠনের নেতৃত্ব নতুন করে প্রবর্তন করতে চায়। আচরণবিধি ঘনিষ্ঠভাবে নৈতিকতার বিধির সাথে জড়িত, বিস্তৃত পরিসরে আচরণবিধি ও নৈতিকতা শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক।

সাংগঠনিক আচরণ বিধি হল সে সকল নীতিমালার আদর্শ মান ও রূপরেখা যা একটি সংগঠনের সকল কর্মচারী ও সংগঠনের সাথে জড়িত তৃতীয় পক্ষ মেনে চলতে বাধ্য থাকে। এটি সংগঠনের লক্ষ্য ও মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করে এবং পেশাদারী সুলভ আচরণের আদর্শ মানের সাথে যোগসুত্র স্থাপন করে। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানে আচরণ বিধিকে কর্ম দক্ষতার নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

সাধারণভাবে বলা যায় যে, সাংগঠনিক আচরণ বিধি হল সংক্ষিপ্ত ও লিখিত নথি যা সংগঠনের সকল কর্মীর আচরণ বৈধভাবে পরিচালনা করার নিমিত্তে পথ নির্দেশনা প্রদান করে।
 

নৈতিকতার পরিধি /ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে
নৈতিকতার ধারণা/ আদর্শ মান: (Scope of Ethics/
আন্তর্জাতিক ব্যাংক নিষ্পত্তি সংস্থা বা BIS ১৯৯৭ সালে কর্মচারীদের জন্য আচরণের বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালার আলোকে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে আচরণ বিধির আদর্শ মানসমূহ  নিম্নে তুলে ধরা হল :-

১. পেশাদার সুলভ আচরণ              ২. সততা ও বিচক্ষণতা         ৩. ব্যাংকার - গ্রাহক সম্পর্ক বজায় রাখা

 ৪. ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান আচরণ     ৫. হয়রাণি ও ভীতিকর আচরণ পরিহার      ৬. আইন ও নীতি নির্ধারক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন

৭. আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা    ৮. দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকা   ৯. অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ

১০. উপহার ও উপঢৌকন গ্রহণে বিধি নিষেধ      ১১. আর্থিক তথ্যের গোপনীয়তা    ১২. মিডিয়া ও প্রকাশনা সংস্থার সাথে যোগাযোগ

১৩. রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ     ১৪. ব্যাংক তহবিল ও অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার   ১৫. অঙ্গীকার প্রদানে বাধা 

১৬. সম্মেলন ও সেমিনারে অংশগ্রহণ      ১৭. কোন পাবলিক কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সদস্যতা 

for Details

আচরণ বিধি প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয় (Factors in Formulating Code of Conduct)💤

১. প্রধান নির্বাহী বা প্রতিষ্ঠাতার বার্তা             ২. নৈতিকতার উদ্দেশ্য ও পরিধি নির্ধারণ     ৩. মৌলিক মূল্যবোধ ও বিধিমালা নির্ধারণ       .  সংশ্লিষ্ট মহলে অবহিত করণ প্রক্রিয়া      ৫. নৈতিকতার (প্রশ্নে) সিদ্ধান্ত গ্রহণ      ৬. আইনগত বিষয়          ৭. আচরণের আদর্শ মান উন্নয়ন        ৮. পরিপালনে অনিয়মের ব্যবস্থা     ৯. বিধি হালনাগাদকরণ ও পর্যালোচনা       ১০.  বিধিমালার বহুল প্রচারের ব্যবস্থা        

 ১১. নৈতিকতা ও পরিপালনের মধ্যকার সম্পর্ক: যদি নৈতিকতার বিধি অনুসারে একটি আচরণ নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়, তথাপি এটি আইন এবং নিয়ন্ত্রক কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা  হয়েছে কিনা তার উপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। একইভাবে, এমন একটি আচরণ যা আইন মেনে চলে কিন্তু কোম্পানির নীতিশাস্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে হয়, তাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত।

Details and caseiq

নৈতিকতার ব্যাঙ্কিং চ্যালেঞ্জসমূহ পরিচালনা (Handling Banking Challenge of Ethic):

আমানতকারীদের ন্যায্য প্রতিদান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করন।
তহবিলের খরচ এবং ঋণের হারের মধ্যে স্প্রেড কমিয়ে আনা।
স্বচ্ছ হিসাব রক্ষণ ব্যবস্থা অনুশীলনে নিযুক্ত থাকা।
সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রবর্তিত সকল আইন, বিধি ও প্রবিধান মেনে চলা।

গ্রাহকের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করা
দ্রুততার সাথে সেবা প্রদান
সেবা প্রদানে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা
কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বিকাশ : ঝুঁকির উৎসগুলো চিহ্নিত করণ; ঝুঁকির ফলে সংঘটিত ফলাফল নিরুপণ করা;  ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণ করা

সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা।
কর্মীদের সাথে ন্যায্য এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করা
কর্মচারীদেরকে নৈতিকতার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা

কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মৌলিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বাসস্থানের চাহিদা পূরন।
পরিবেশগত সুরক্ষায় অবদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে আর্থিক কার্যকলাপ ।
কোন প্রকার ঝুঁকির চিন্তা ছাড়াই উদ্ভাবনী পণ্য/সেবা তৈরি করা

দরিদ্র মানুষের জন্য বাসস্থান সুবিধা দানের নিমিত্তে সহজ শর্তে বন্ধকী ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করন
ব্যাঙ্কবিহীন এবং ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় ও জনসাধারণের মধ্যে ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রসার ঘটানো
মানবিক ব্যবহার দিয়ে ঋণ পুনরুদ্ধারের উপর জোর প্রদান।
নৈতিকতার একটি অভ্যন্তরীণ বিধিমালা প্রবর্তন এবং তা নজরদারির ও পরিপালনের জন্য  প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা চালু করা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ।

অনৈতিক আচরণ প্রতিরোধে আভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভুমিকা (Role of Internal Control in ethical behavior): 

আভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যে কোন সংগঠনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাল জালিয়াতি প্রতিরোধ ও নৈতিকতার চর্চা করতে সহায়তা করে। এটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন যথার্থ ও বাস্তবসম্মত কিনা এবং তারা নিয়ম নীতিমালা পরিপালন করে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে।উল্লেখযোগ্য ভুমিকা:         

১. দায়িত্ব -কর্তব্য পৃথককরণ            ২. মঞ্জুরী ও অনুমোদন প্রক্রিয়া             ৩. সমণ্বয় ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়া

৪. বস্তুগত ও বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ: এর মধ্যে সুরক্ষিত সিন্দুক,  সংরক্ষিত স্থানের জন্য গেটযুক্ত প্রবেশদ্বার, নজরদারি সরঞ্জাম, এবং মজুদ মাল নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত। এই সুরক্ষাসমূহ চুরি প্রতিরোধ, অননুমোদিত প্রবেশ সনাক্ত করা এবং ভুল কাজের প্রমাণ দিতে সহায়তা করে।

৫. নজরদারী ব্যবস্থা             ৬. আচরণ বিধি ও নৈতিকতার নীতিমালা                      ৭. তথ্য ফাঁস করার ব্যবস্থা         ৮. নৈতিকতার লঙ্ঘন উদ্ঘাটন        ৯. নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি         ১০. নৈতিকতা পরিপালনের কার্যকারিতা মূল্যায়ণ

for Details    https://www.diligent.com/resources/blog/internal-audit-corporate-governance

নৈতিক আচরণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ (Factors Influencing Ethical Behavior):

১। পরিবেশগত প্রতিযোগিতা     ২। পরিবেশগত উদারতা     ৩। অতিশয় নির্ভরতা     ৪। উচ্চ কার্যসম্পাদনের চাপ      ৫। শ্রমিক অসন্তুষ্টি             ৬। কর্তৃত্ব হস্তান্তর         ৭। উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ড        ৮। ধর্মীয় বিশ্বাস                    ৯। সামাজিক বিধি নিষেধ        ১০। আর্থিক অবস্থা        ১১। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ        ১২। সাংগঠনিক কাঠামো


No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)