* তোমাকে ছাড়া আমি অসুখে আছি,
আমার ধমনী, শিরার মধ্যে রক্তচাপ
এপাড়া থেকে ওগ্রামে তীব্র বেগে ছুটেছে,
তোমার পাশ বালিশে আমি মরে গেছি,
ঠাইহীন গাঙের তলদেশে তলিয়ে যাব
পাতাল পুরীর জগতে আমি ঘুমিয়ে পড়ব
জেনেও তুমি ডেকে তোলনি।
তোমাকে না ছুঁতে পেরে আমি বিষাক্ত
নখাগ্রে নিজেকে বিদ্ধ করি,
রক্তের লাল ছোপ থেকে যায়,
পলাশ শিমুলের কাঁধে।
আমি ডানাভাঙা চিলের পাশে
বসে তোমার আকাশে উড়ে যাওয়ার
ছায়া দেখেছি মাটির ঘাসে।
তুমি পথ ভুলে আমাকে ডাকনি।
তোমাকে দেখা ছাড়া আমি বর্ণান্ধ হয়েছি
দিনের সূর্যকেও আমার ফ্যাকাশে লাগে,
গাঢ় কমলার ঘ্রাণে আমি চালতার স্বাদ পাই,
টগবগে সবুজের ছোপ আমার কাছে
কালো মেঘের আনাগোনা।
বিষন্ন দুপুরে আমি প্রায় অন্ধ,
আমার চোখে রক্তে ভেজা গন্ধ।
হাজার চোখের হাতছানি পাশ কেটে একবার
তুমি চোখ তুলে আমাকে দেখনি।
ভেতরে ভীষণ দহন
- নজরুল জামিল
আমার চোখে আজ অমাবস্যা লেগেছে,
ভীষণ অন্ধকার দেখছি,
তোমাকে গুলিয়ে ফেলছি।
দু চোখ বেয়ে কেবল বাসনার মিছরি
গলে পড়ছে।
আমি তোমাকে দেখি না
অনবরত তোমার চিবুক দেখি,
তোমার বুকের সীমানা দেখি, বুকের মধ্যে
ভাসিয়ে দেয়া পালহীন নৌকার স্রোতে
আল্গা বসন দেখি।
আমার চোখে আজ দাবদাহের আগুন লেগেছে!
ভীষণ দহন টের পাচ্ছি।
অচিরেই সব পুড়ে বিনাশ হয়ে যাবে।
কেবল তোমাকে দেখি না,
তোমার ঠোঁট দেখি, গ্রীবার ভাঁজে নীলচে
দাগ দেখি।
সেখান থেকে আলতো বিষ ঝরতে দেখি।
আমার বুকের কোথায় চৈত্রের আউলা
বাতাস লেগেছে। ভীষণ তোলপার চলছে।
হু হু বাতাসে নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে।
হৃদস্পন্দন বলে কোন শব্দ গুচ্ছ নেই,
কেবল পাশাপাশি বসার, পাশাপাশি থাকার
বুকের পাঁজরে বুক মেলানোর ক্রন্দন শুনছি।
তোমার আড়ালে তোমাকে ছুঁতে চেয়ে
আমার ভেতর বাহির মুচড়ে উঠছে।
এমন অগোছালো স্বপ্ন আমাকে ডোবাবে।
আমি বিষখালির স্রোতের উজানে
ভেসে একদিন অথৈ সাগরে পতিত হব।
তুমি কখন ফিরবে?
লাস্ট ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কোচে!
সময় ভুলে শেষ বাসের পেছনের
তক্তপোশে বসে।
নাকি উড়োজাহাজে ডানা ভেঙে!
তোমার ভ্রুতে কি যেন একটা কাজল থাকে
একটা শ্যাডোর বাকে!
বাইরের কোলাহলে, ভীড় ঠেলে ঠুলে
গটগট করে যখন চলে যাও,
ছেলে ছোকরা কি উকি ঝুকি দেয়
রিকসার হুডের ফাঁকে।
তোমার মুখ ঢাকাই থাকে
সংকোচের আড়ালে।
নাকি ক্ষণিকের রোমান্সে জড়িয়ে থাক
চোরা চোখের চাহনি দিয়ে।
হঠাৎ বৃষ্টি নামলে পথে
কোথায় দাঁড়াও,
চায়ের দোকানে, নিরালা ট্রাফিক মোড়ে,
নাকি আগন্তুকের বুক ফোলানো
ছাতার নিচে।
আমার কথার টুপটাপ কানে
বাজতে বাজতে ছোট রাস্তায় আনমনে
ভিজতে থাকলে আমাকে বুঝতে।
ক্লান্ত দুপুরে অফিসের ফাঁকে চায়ের চুমুকে
বিরবির করে কাকে ভাব,
সেখানে আমি থাকি বা না থাকি
অন্য কেউ কি দস্যুর বেশে
প্রবেশ করে!
ঠোঁট সরিয়ে ফেলে একবার কাপের
ভেতর তলদেশে চোখ রেখে দেখ,
সন্তর্পনে হলেও দেখো,
আমি জড়িয়ে আছি, তোমার ঠোঁটে।
এত জ্বালাও কেন, আমার জন্য
ভালবাসার ছিটে ফোটা না থাকলে, বেসো না,
হুটহাট করে একটা মিসকল, একটা এসএমস
দিয়ে চমকে দাও কেন!
আমার মস্তিষ্কের নিউরন সক্রিয় কিনা
দেখতে চাও?
অমন অবহেলার ভেতরেও আমি মনে
রাখতে পারি কিনা
বুঝতে চাও?
এত জ্বালাও কেন,
বৃষ্টির দেখা নেই, মেঘের আনাগোনা নেই
টুপটাপ জ্বলে তুমি ভিজতে চাও,
রাত দুপুরে মেঘের ডাক শুনতে চাও।
কী কারণ, এমন কেন?
ভাল বাসতে চাও না, বেসো না,
ওরকম চোটপাট করে কেন বল,
"কতক্ষণ ধরে কল বাজছে,
ধরলে না কেন!
এতক্ষণ ধরে বসে আছি,
সারা নেই কেন!
এক গ্লাস পানি খেতে
অত সময় নিচ্ছ কেন?"
এত জ্বালাও কেন,
আমি চোখ বুজলে বল জেগে থাকতে,
চোখ মেলে থাকলে তখন
তুমি আকাশ দেখ, আকাশের তারার
সাথে কথা বল।
তার চেয়ে বলতে পার!
"এ রাতে আর কথা হবে না,
এখন শুধু তারাদের দেখব!"
অহেতুক কষ্ট দাও কেন,
কত রাত জেগে কাব্য বুনতে পারি,
কত অমাবস্যার অন্ধকার নির্ভার
কাটাতে পারি,
দেখতে চাও?
* ঢেউয়ের ঝাপটার সাথে ঠোঁটটা বাড়াতেই
তোমার ঠোঁটাক্ষের স্রোতের সাথে মিশে গেছে
আমার ওষ্ঠের কিনার।
মৃদু আলগা করে লুফে নিলেই
পাতা বাহারের রঙিন
পল্লব এর স্পর্শ জাগে
মরা নদীর দুই পার।
আমি স্বপ্নের ডিঙি পেরিয়ে
এপারে ঘুরি ফিরি,
তোমার ঠোঁটের লাভায় ভিজি
মরুর তৃষ্ণা আমার কন্ঠে।
আকন্ঠ লবন জলের অবগাহন,
অপলক তাকিয়ে থাকা
নির্মিলিত চোখের আষ্টে পৃষ্ঠে
আসক্ত ঠোঁটের আনাগোনা,
একটা আদিম চিত্র কল্পের সুচনা।
রক্ত জবার গুল্মে ফোটা
তোমার ঠোটের আলতো ছোঁয়া,
আমার আসক্তির নেশায়
রাশ টানা এক পুড়িয়া আফিম!
সঙ্কোচিত ভালবাসা
- নজরুল জামিল
* সংকোচের দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে আছ?
আমাকে তোমার ভাল বাসতেই হবে,
কোন সামাজিক প্রথা অথবা রাষ্ট্রীয়
সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ বলে
তোমায় বাধ্য করা হয়নি!
এরকম সম্ভাব্যতার অবকাশ বা সুযোগ
কোথাও লেখা হয়নি।
আজ রাতে তুমি ঘুমাওনি,
পুরো রাত জেগে, পুকুর ভরা পানির
মৃদু প্রবাহে তারা দেখলে।
রাত কেটে সকাল হবার পরই
তোমার চোখ লাল টকটকে,
পারলে আকাশটাই ভেঙে ফেলতে!
এত ছল কেন তোমার!
আমার সাথে পাশে বসে থেকে
আকাশ যে দেখতেই হবে,
এমন করেতো কখনও বলিনি।
দিনভর নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিলে,
জল তেষ্টা মেটাতেও একবার উঠলে না,
আমার হাতে ধরে থাকা হাত
ছুটে যায় পাছে সে ভয়ে!
মুঠো ভর্তি হাতে উষ্ণতার প্রলেপ মেখে,
উদয়াস্ত তুমি প্রেমের গল্প শুনেছিলে।
দিন যখন গোধূলির আলোয় নিভে গেল
তোমার উদর জ্বলে পুড়ে ছারখার।
চারপাশে তোমার বিচরণ
- নজরুল জামিল
কেউ ভুলে গেলেও আমি ভুলি না।
কারো চোখ বুজে এলেও আমি
তন্দ্রাচ্ছন্ন হতে পারি না।
আমাকে তোমার পুরো জীবনের
মহাকাব্য মনে রাখতে হয়।
আমার ঘুমোবার সময় কোথায়!
তুমি কখন সাত সকালে জেগে উঠতে,
কখন আমার ভাঙা ঘরের জানালার
পাশ গন্ধে মাতানো এক তোড়া গাঁদা
ফুলের বৃন্ত ছিড়ে মুঠোর মধ্যে
আগলে রাখতে,
আমাকে সে সব খোলা জানালার পাশে
বসে মনে রাখতে হয়।
তুমি কোন তেল মেখে
খোলা চুল বাতাসে ওড়াতে,
কোন ঘাটে বসে আবার এলো চুল
সাবান জলে রেশমি লালে
ভাসাতে, আমাকে সে সবই
মনে রাখতে হয়।
শীতের কোন কোন রাতে তুমি
চাদর মুড়ি দিয়ে
মুখটা খোলা রাখতে,
কাঁপতে কাঁপতে বড়ই কুড়াতে,
আমার কন্ঠস্বরে কান পেতে থাকতে।
ক্লাসে হাজিরা দেয়ার মত
একটা মৃদু গলা খাকারি দিয়ে
তোমার আগমন জানাতে।
এসব কিছুই আমাকে মনে রাখতে হয়।
আমাকে মনে রাখতে হয়,
কয়েকশ হাত দূরের দৃষ্টি সীমা
হাতড়ে আমার চোখের কেন্দ্র স্থলে
কেমন তীর্যক রেখায় তুমি তাকাতে!
আমাকে মনে রাখতে হয়।
তোমার চোখের কাজল,
তোমার অট্ট হাসি,
মনে রাখতে হয়
লাস্যময়ী চাহনি, ঠোঁট বাঁকানি
পায়ের মল,
কাচের চুড়ির রিনি ঝিনি।
আমাকে মনে রাখতে হয়
বনভোজনের তোমার চঞ্চল সাজ
পোষাকের আড়ম্বর,
আনাড়ী কন্ঠের গানের রেওয়াজ,
প্রগাঢ় আদর উপচে পড়া
দরদ বিগলিত আওয়াজ,
এসবই আমার মনে রাখতে হয়।
চোখ বুজলেও আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হই না!
আমাকে তোমার চেয়ে ঢের বেশি
মনে রাখার দায়,
কেউ ভুলে গেলেও আমি ভুলি না।
এভাবে ভালবাসতে বাসতে একদিন বুড়ো হব।
আমার বয়স হবে।
মনের এক কোণায় হঠাৎ
একটা হাসি তোলপার করে উঠবে।
এরকম কড়া পড়া
হাতে তোমাকে ছোবার জন্য
ভেতরে কত আকুতি ছিল!
এভাবে ভালবাসতে বাসতে
আমার চোখের নিচে কালি পড়বে।
আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হব।
আমার চোখে কেবল তুমি থাকবে।
বুকের বা পাশে হঠাৎ কোন
ঝড় উঠে থেমে যাবে।
এরকম ব্যঘ্র কামনার উল্লাসে
তোমাকে তোলপাড় করে দেয়ার জন্য
ভেতরটা কত ছটফট করে উঠত!
এভাবে ভালবাসতে বাসতে
আমি সর্বশ্বান্ত হব।
আমার কপালে ভাজ পড়বে,
আমি প্রলাপ বকব
কোন দুস্বপ্নের ঘোরে হঠাৎ।
আমার ঠোট নড়ে উঠবে।
এরকম ভীতু নড়বড়ে ঠোঁটে
তোমাকে ক্ষত বিক্ষত করার জন্য
ভেতরটা কতটা অদম্য হয়ে যেত!
এভাবে ভালবাসতে বাসতে
আমি বধির হব।
তুমুল কোলাহলে আমি ব্যতি ব্যস্ত হব।
অজস্র ঝর্নার কলধ্বণি
শুনতে আমি হঠাৎ হঠাৎ তোমার পাশে
গিয়ে কান পেতে বসে থাকব।
আমার কান অবধি কোন শব্দ আর
পৌছোবে না তখন
আর কথাও দেওয়া হবে না!
বোকা ছেলের গল্প
- নজরুল জামিল
বোকা ছেলেরা বোকামীতে ভরা ব্যর্থ জীবন গড়ে,
প্রথমে তারা ছোট খাট করিডোরে
ছোট পরিসরে ভুল করে।
এরপর তাদের ভুলগুলো জীবন থেকে
অনেকগুলো বছর, মাস, দিন নামের
সময়কে কেড়ে নেয়।
বোকা ছেলেটি জানে না, এটা কোন ভুল, এসবের জন্য বড় মাসুল
একদিন গুনতে হবে তাকে।
বোকা ছেলেরা শহরের গড়পড়তা স্কুলে
পড়ে পড়ে অনেক বিদ্বান হয়,
বন্ধুত্বের ছলে ইঁচড়ে পাকা
ছেলে ছোকরার সাথে ক্লাস টাইমে একদিন
কাছে দূরের নদী, রেলপথ দেখতে যায়।
বোকা ছেলেটা জানেই না,
এভাবেই ক্লাস ফাঁকি দেয়া হয়।
এভাবেই একদিন সে টিচারের মার খায়।
বোকা ছেলেরা প্রচন্ড রকম নিঃসঙ্গতায় ভোগে
সে না পারে খেলার মাঠে চৌকষ খেলোয়ার হতে
না পারে কারও অন্ধ ফলোয়ার হতে।
বন্ধুদের আড্ডা মাতাতে পারে না,
পার্কে জড়সড় হয়ে থাকে কোণার বেঞ্চটিতে।
সবাই যখন স্কুলের মাঠ, বাড়ান্দা কিংবা
সিঁড়ি ঘর মাতিয়ে রাখে
বোকা ছেলেটা ক্লাসরুমে বইয়ের মধ্যে
মুখ লুকিয়ে থাকে, কিংবা জানালার ওপারের
আস্ত মানুষগুলোর কোলাহল দেখে।
**
বোকা ছেলেদের জীবনে প্রেম হয় না,
তাদের কাছে ভালবাসার নীল খাম আসে না,
কোন মেয়ে এসে কাছে বসে লুতুপুতু করে না,
বোকা ছেলেটির খাতা দেখে টুকলি লিখে
পাড়ার দুর্দান্ত রোমিও ছেলেটা পাশ করে যায়।
বোকা ছেলেরা উর্বশী, অপ্সরাদের দেখে
মুখ লুকোয়, গুটিসুটি মেরে আস্তে পালায়।
ভেতরে ভেতরে একটা ভাল লাগায় দংশিত হয়।
বোকা ছেলেদের লাইফে একটা বা দুটো
নারী কিংবা নারীর মত তরুণী আসে,
অল্প স্বল্প কিংবা বাড়াবাড়ি রকম সখ্যতা হয়।
কিন্তু বোকা ছেলেরা জানে না
বর্তমানে প্রেমেও বাংলা সিনেমার মত
একটা কম্পিটিশান থাকে,
অল্প কদিনেই পাড়ার বখাটে দু একজন
প্রতিদ্বন্দী জুটে যায়।
অচিরেই সব ইমোসন ডিপ্রেসন এ গিয়ে ধরা দেয়।
বোকা ছেলেরা নিজের একটা জগত তৈরী করে,
সে জগতে সে নিরবধি অসাধারণ কিছু
সৃষ্টি করে।
অসাধারণ গানের গলা থাকে,
বিখ্যাতদের অসম্ভব সুরগুলো
সে অনায়াসেই রপ্ত করতে পারে,
খুব সহজেই মহা কাবি্যক কবিতা
দিয়ে সাদা কাগজ ভরতে পারে।
যদিও বোকা ছেলেদের এসব গুণ গরীমা
পর্দার আড়ালেই লালিত পালিত হতে থাকে।
বোকা ছেলেদের জীবনের কোন লক্ষ্য থাকে না,
এক জীবনের স্বপ্নগুলো তার অগোছালোই থাকে।
পরিকল্পনা বিহীন সাদামাটা ক্যারিয়ার গড়ে,
অফিস লাইফে এসেও তারা অফিসের
নোংরা পলিটিক্সের মাঝে পড়ে।
বোকা ছেলেরা খুব সাধারণে চালিয়ে নেয়,
সাধারণ জীবনে সুখ খুজে অভ্যস্ত হয়,
বোকা ছেলেটি তাই অনেক ঝক্কি ঝামেলার মাঝে
অতি সাধারণ দেখে কোন মেয়ে বিয়ে করে ।
কিন্তু সরলতার সুযোগে সংসার তাকে
বিন্দু মাত্র ছাড় দেয় না,
বউ নামক যাতাকলে পড়ে এখানেও সে পিষ্ট হয়।
বোকা ছেলেরা মানুষ চিনতে ভুল করে
জীবনের পদে পদে মার খায়।
এমন দুঃসহ অবস্থায় দুই একজন মানুষ মেলে
যারা কালে ভদ্রে আফসোস করে বলে, ইস
ভাল ছেলেদের জীবনে সুখ হয় না!
এভাবে পৃথিবীতে একটা বোকা ছেলের
জীবন আমরা আবর্তিত হতে দেখি।
বুকের মধ্যে জমে থাকা একটুকু কথা
কোন এক নিশি রাতে তার হাত
ধরে বলার ছিল,
চিরকুটে লেখা জমানো হাজার
লাইন কথার ইতি টেনে
যেখানে তাহার নাম প্রথিত,
সেখানে খুব আনমনে, মৃদু লোক
লজ্জার অন্তরালে কাগজ থেকে
তার নাম মুছে দিয়েছি,
তার নাম অনামিকা, সে নামহীন কেউ!
শুধু - ভালবাসি তাকে,
এটাই যেন হাজার লাইনকে
ডিঙিয়ে, অনেক রাতের ঘুম জাগা
সলতে পোড়ানো আলো বিলোয় ।
অবাক করা সব কালির রং,
কাগজের মণ্ড পাকিয়ে, কাঁপা কাঁপা
হাতের আঙুলের অগ্রভাগে,
চিন্তা শক্তির দৈন্যতা অতিক্রম করে
একটা লাইন আমি লিখতে
পেরেছিলাম- তাকে ভালবাসি।
আকাশ ভেদ করে, মাঝ রাতে
যখন অশান্ত বৃষ্টিগুলো ঝরা শুরু করে,
মনের মধ্যে প্রচন্ড ইচ্ছাগুলো
কেবল আন্দোলিত হয়,
চিরকুটের শেষ পৃষ্ঠাটা হাতের
ফাঁকে লুকিয়ে, একবার ছুটে যদি যাই!
দেখুকনা একবার, আমি লিখেছি,
অত সময় করে পড়তে হবে না।
শেষের লাইনটাতেই আছে
- তাকে ভালবাসি।
বৃষ্টি গড়াতে গড়াতে রাত
যখন গভীরতর, সুনসান হয়
ঢেউ টিনের চাল গড়িয়ে
এক সমূদ্র পানি, আমার দরিদ্র
কুটিরের পাশ দিয়ে
ছল ছলাৎ শব্দে ডোবা, হাওরের
বুক ভরিয়ে দেয়,
আমার বুকের মধ্যে উজার করা
গভীর মমতা আর্তনাদে কাতরায়,
যাইনা ছুটে একবার!
এপাড়ার শেষ মাথায় তার ঘর।
চিরকুটটা একবার দেখুক,
বৃষ্টির জলে ভিজতে দেইনি,
আমার জল লেগে জর হোক,
চিরকুটের কাগজটা ঠিক
সিনার ভাঁজে আগলে এনেছি,
তাকে যে ভালবেসেছি,
একবার সে দেখুক লেখা আছে
শেষ লাইনে- তাকে ভালবাসি।
শীতের রাতে ওপারের শিরিষ বনে
ঝোপের আড়াল হতে শেয়ালগুলো
যখন একটা গরম কম্বলের
দাবিতে গোটা মহল্লার ঘুমন্ত
মানুষের নীরবতা ভেঙে
মিছিলে শোরগোল করে,
রাত গভীরতর হলে শিশিরের
অশ্রু আরো ভারী হয়,
আমার গা হিম হয়ে আসে
কাগজটা চাদরের ভাঁজে লুকিয়ে
একবার দৌড়ে যদি যাই ওদিকটায়,
কনকনে ঠান্ডার দাপুটে
শক্তি দিয়ে জাপটে ধরে বলেই ফেলি!
একবার চোখ মেলে দেখুকনা!
চিরকুটটাতে সব লেখা
আছে, শেষ লাইনে- তাকে ভালবাসি।
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)