Right Click n Copy Disabled

Ads block

Banner 728x90px

আমার কবিতা-3


 

 

দূর পাহা‌ড়ের স্বপ্ন
--নজরুল জা‌মিল


অ‌নেক দূর পে‌রি‌য়ে যাওয়ার ই‌চ্ছে ছিল,
প্রকান্ড এক উঁচু পাহা‌ড়ে উঠব
চুঁড়ায় দাঁ‌ড়ি‌য়ে অবা‌রিত মেঘ ছোঁব
আমার হা‌তে কিছু মেঘ গ‌লি‌য়ে
আচমকা বৃ‌ষ্টি হ‌বে
আমার গা‌য়ের শান্ত লোমকুপ
‌ভি‌জি‌য়ে দে‌বে।
কিন্তু আমার কা‌ছে এখন এসব
বৃ‌ষ্টি বিলাস,
আ‌মি গ্রী‌ষ্মের দাবদা‌হে পু‌ড়ে যাই,
পা‌য়ের নি‌চের পিচ ঢালা রাস্তায়
হাঁট‌তে হাঁট‌তে গরম বিটু‌মিনে
পা আট‌কে যায়।

‌পৃ‌থিবীর কিছু বৃৃহৎ রকম দর্শনীয়
স্থা‌নে দি‌গ্বি‌দিক ঘু‌রে বেড়া‌তে পারতাম
অ‌নেক ভ্রমন পিপাসু ছিলাম বৈ‌কি!
‌হঠাৎ ক‌রে দু‌র্ভিক্ষ মহামা‌রি দেখা ‌দিল,
আমাদের দুজনার হৃদয‌ন্ত্রের অভ্যন্ত‌রে।
আমরা জন বি‌চ্ছিন্ন হ‌য়ে গেলাম
এক রকম অ‌নভ্যা‌সের ব‌শে,
অবশ্য আমরা কোন কা‌লেই খুব
কাছাকা‌ছি ছিলাম না,
পৃ‌থিবীর পর্যটন স্পটগু‌লোতে কিছুক্ষণ
হাত ধ‌রে বাহুলগ্না হ‌য়ে থাকা ‌প্রেমে
আমার গা গু‌লি‌য়ে আ‌সে। 

 

*তুমিহীন মরীচিকা*
-নজরুল জা‌মিল


শততম ভাবনা আমার গু‌লি‌য়ে যায়
‌কেমন যেন গা গু‌লি‌য়ে বমি আ‌সে
আ‌মি ভাব‌তে পা‌রি না
আমার আজকাল মস্তিষ্ক ঠিকঠাক মত
কাজ ক‌রে না,
‌কোথায় যেন তা‌কে দে‌খে‌ছি
তার সা‌থে কিছু সময় কে‌টে‌ছে
সব কেমন ঝাপসা লা‌গে।

‌বো‌শে‌খের প্রথম দিন একবার
সারা দুপুর ঢাকা শহ‌রের লম্বা রাস্তা
‌হেঁ‌টে বে‌রি‌য়ে‌ছিলাম,
আমার স‌ঙ্গে তু‌মি ছি‌লে না
তু‌মিহীন ক্লা‌ন্তি‌তেই শহরময় চ‌ষে বে‌রি‌য়ে‌ছিলাম।
‌সেবার আমার ডিহাই‌ড্রেশন হ‌য়ে‌ছিল
উদরাময় দি‌য়ে প‌রের তিনটা দিন
কী একটা অবস্থা।

জলপ‌টি মাথায় ক‌রে একবার
সারা রাত জ্ব‌রের ঘো‌রে কা‌টি‌য়ে‌ছিলাম,
খুব সকা‌লে পরম য‌ত্নে তু‌মি
মুখ মু‌ছি‌য়ে দি‌তে চাইলে
কপা‌লে হাত রে‌খে জ্ব‌রের তীব্রতা
আঁচ করে দেখলে।
‌চো‌খে রোদ পড়‌তেই কোথায় যেন
‌মি‌লি‌য়ে গেলে আমার ম‌নে নেই।
আ‌মি এসবের কিছুই ম‌নে কর‌তে পা‌রি না।...

 

*ক‌বিতা: নিমগ্ন অপেক্ষা*
-- নজরুল জা‌মিল


কিছু বলছনা যে !
এই যে আ‌মি একশত বাহান্ন বার এখানটাতে
ব‌সে তোমার নাম ধ‌রে ডাক‌ছি,
‌টে‌লি‌ফো‌নের এ প্রা‌ন্তটা কা‌নের ম‌ধ্যে
গু‌জে দি‌য়ে নি‌বিষ্ট ম‌নে ব‌সে আ‌ছি,
কই কিছু বলছ না যে!
‌আমার চারপা‌শে প্র‌তিধ্ব‌নি হতে থা‌কে
‌তোমার লেখা এ‌লো‌মে‌লো ভাবনার সমষ্টি,
আনম‌নে গাই‌তে থাকা নিজস্ব তিন চার‌টে সুর।

‌ ঠিক দুই ঘন্টা ছ‌ত্রিশ মি‌নিট ধ‌রে
ব‌সে আ‌ছি, তু‌মি আসছ না।
দুই ঘন্টা ধ‌রে তোমার চু‌লে বৃ‌ষ্টির ছোপ
‌লে‌গে‌ আ‌ছে, তু‌মি মুছছ না।
অজস্র প্রহর ধ‌রে তোমার কন্ঠ শুন‌ছি না
তু‌মি বুঝ‌তে পারছ না।
‌তোমা‌কে পাওয়ার সাধ আমার কাট‌ছে না
তু‌মি বুঝ‌লে না।
অপ‌রিণত কষ্ট কেমন ক‌রে দানা বেঁধে
উঠ‌ছে থে‌মে থেমে
‌কেউ কোনভা‌বেই দেখ‌ছে না।
‌তোমার বোঝার মত একটা চোখ ছিল
‌সে চো‌খে আজ ঘুণ ধ‌রে‌ছে। 

 

তোমার মোহনায় আ‌মার নাও
--নজরুল জা‌মিল


আমার অজস্র দিন তোমার বু‌ক সে‌ল্ফে
‌সাজা‌নো আ‌ছে,
একখানা ‌সুপ‌রি‌চিত এনসাই‌ক্লোপি‌ডিয়া
‌তোমার বক্ষ আচ্ছাদনে ওলট পালট হয়।
আ‌মি পৃষ্ঠা ওল্টা‌তে ওল্টা‌তে প‌রি‌শি‌ষ্টে
‌পৌ‌ছে যাই।
আবার মলাট ওল্টা‌তে থা‌কি
মাত্র ক‌য়েক লাই‌নের ভু‌মিকা প‌ড়ে শেষ
কর‌তে পা‌রি না।

অবশ্য ওরকম পাহাড় ডি‌ঙো‌তে লক্ষ মাই‌ল
প‌রিভ্রম‌নের একটা সূ‌চিপত্র থাক‌তে হয়।
এরপর তু‌মি আমা‌কে জো‌চ্চোর, প্রতারক বল‌বে,
বল‌বে ‌নির্ঘাত তোমার চো‌খের মাথা খে‌য়েছ!
বল‌বে, একটা চশমা ব্যবহার কোরো,
'বু‌ড়োদের হা‌বিজা‌বি চিন্তা' ব‌লে একটা
‌ছোট খাট গালও দি‌তে পার!

‌তোমার কা‌ছে অ‌তি ব্য‌ক্তিগত স্থা‌নে
ম‌নে হয় আমার প‌রি‌চিত সব ভাবনাগু‌লো
স্থ‌বির হ‌য়ে থা‌কে।
ফাল্গু‌ন শে‌ষের সকা‌ল বেলার একটু একটু ক‌রে
বাড়‌তে থাকা ‌সৌর তাপের মত,
কখ‌নো আরাম ক‌রে গা এ‌লি‌য়ে রোদ পোহা‌ই,
কখ‌নো ম‌নে হয় তোমার থে‌কে বিকীর্ণ
তাপে আমার শরীর এক্ষনি পু‌ড়ে যা‌বে।

ত‌ারপরও আমা‌দের একই সৌর জগ‌তে বসবাস,
বৃ‌ষ্টির জল, ঝড় জ‌লোচ্ছাস শে‌ষে
‌তোমার মোহনায় আমার নৌযান
নাব্যতা পায়,
‌‌দিনের শুরু হয় সেই অভয়ারণ্যে । 

 

সহচরী ও বি‌মোচক
-- নজরুল জা‌মিল


--আ‌দিত্য আজকাল তু‌মি অ‌নেক রাত জাগছ,
‌তোমার চো‌খের নি‌চে কা‌লির পাহাড়।
এসব তু‌মি চো‌খেও দেখ‌তে পাও না!
‌তোমার এক বন্ধুর সা‌থে সে‌দিন কথা
হ‌য়ে‌ছিল, রাত দুটো তিনটের আ‌গে
‌তোমার শু‌তে যাওয়া হয় না।
‌কি সব না‌কি লিখছ, নোটপ্যা‌ডে, ল্যাপট‌পে!
ওসব ছাইপাশ লি‌খে কি হয় শু‌নি!
‌সে কি তোমার লেখা প‌ড়ে
না দে‌খে! কখনও কোন ভুল নম্ব‌রে
টে‌লি‌ফোনে আ‌ড়ি পা‌তে!
জোছনা, চাঁদ, রাত, রা‌তের তারা
সব কি তোমার বাগা‌নেই ঘো‌রে!
সবাই আর মানুষ পেল না।

-- আ‌দিত্য তু‌মি ওসব ছাড়‌তে পার না!

‌এত ক‌বিতা দি‌য়ে কি হয়!
‌চো‌খের বারটা বা‌জি‌য়ে ফে‌লেছ,
এই বয়‌সেই আজকাল স্মৃ‌তি
‌বিভ্রম হ‌চ্ছে তোমার।
‌মোবাইলটা বুক প‌কে‌টে রে‌খেও
বার বার হাত‌ড়ে বেড়াও।
মা‌নিব্যাগটা সিথা‌নের পা‌শে
তু‌মি সারা ঘর খু‌জে বেড়াও।
তা এত কিছু যে আজকাল
হুটহাট ক‌রে ভু‌লে যাও,
কই সব কিছু তো ভুলছ না!

-- আ‌দিত্য তু‌মি ওরকম শুক‌নো
‌ঠো‌টে আমার দি‌কে তাকাচ্ছ কেন!
বরাব‌রের মত উদাসীনতা,
তা‌চ্ছিল্য কর আমা‌কে।
আ‌মি কি এমন দাবী পেশ ক‌রে‌ছি!
ওরকম একদৃ‌ষ্টে ‌কি দেখছ কি?
এত ক‌বিতা দি‌য়ে কি হয়!
‌তোমার‌তো কাব্যই নেই।
রা‌তের গা‌য়ে একটা হাসনা‌হেনার
গন্ধ আর কত শতাব্দী তু‌মি শুক‌বে!
তার চে‌য়ে মোনা‌লিসা‌কে আঁক‌তে পার না!
আর এক বার, নয়ত বার বার।  

 

তৃতীয় সত্ত্বা
-- নজরুল জা‌মিল


তোমার শা‌ড়ির ভাঁজে আমার এক গুচছ
‌গোলাপ লু‌কি‌য়ে রে‌খে‌ছি
‌তোমা‌কে না দেখ‌লেও
সুগন্ধ আমার পিছু ছাড়ে না।
শা‌ড়ি‌তে তু‌মি কেমন, আজ‌কে তোমার
‌ছিপ‌ছি‌পে গড়ন কতটা ফু‌টে উ‌ঠে‌ছে,
আঁচলের ভাজ ঠিকমত প‌ড়ে‌ছে কিনা
আ‌মি না তাকা‌লেও তোমার কা‌ছে থাকা
‌গোলাপ আমা‌কে ঠিকই ব‌লে দেয়।

‌তোমার অবস্থান, তোমার আল‌সে‌মি
ক্লা‌ন্তি‌তে কনুই ভর দি‌য়ে নু‌য়ে পড়া,
অ‌স্থিরতায় ছু‌টোছু‌টি, আড়া‌লে সং‌গোপ‌নে
কা‌রো টে‌লি‌ফো‌নে মন দেয়া,
হঠাৎ এক দৌ‌ড়ে ব্যালক‌নি ঘেরা জানালার
পা‌শে দাঁড়া‌নো তোমার অবয়ব,
আ‌মি না তাকালেও আমার অব‌চেত‌নে
স্মৃ‌তির কর‌টে‌ক্সে ‌ঠিকই জমা হয়।

তু‌মি কাজল প‌রেছ কিনা, রেখা
আঁক‌তে গি‌য়ে কতবার আয়নার সাম‌নে
দাঁ‌ড়ি‌য়ে ‌কিছুটা স‌ন্দিহান ছি‌লে
কোথাও কি একটু লে‌প্টে গে‌ছে!
‌আ‌মি না তাকা‌লেও ঠিক ধর‌তে পা‌রি,
‌তোমার আড়‌ চো‌খের মায়াজাল আমা‌কে
প্র‌তি পল‌কের হালনাগাদ জানান দেয়।

‌তোমার ভেতর বা‌হির আ‌মি পড়‌তে থা‌কি
প্র‌তি‌নিয়ত। তু‌মি কী প‌রেছ, কী খে‌য়েছ
আল‌গো‌ছে শা‌ড়ির পাট কখন গু‌জেছ,
ক‌ফির ম‌গে কখন তোমার নেশা ধ‌রে‌ছে
‌ঠোঁ‌টের কতটুকু রং কা‌পের গায় লে‌গে‌ছে,
‌কোন ছে‌লেটা আজ চো‌খের মাথা খে‌য়ে‌ছে
তু‌মি বা সে চো‌খের নজর কে‌ড়ে‌ছ,
আ‌মি না দেখ‌লেও তোমার কাছে
থাকা গোলা‌প আমা‌কে ছুঁয়ে যায়।
আমা‌কে তোমার কথা জানান দেয়। 


সযত‌নে তু‌মি
--নজরুল জা‌মিল


কীভা‌বে যেন দিন‌কে দিন আ‌মি তোমার
‌নিকটবর্তী হ‌য়ে যাচ্ছি,
‌তোমার বু‌কের নিঃশাস, তোমার চো‌খের পাতা
নাড়া‌নোর অস্ফুট শব্দ পর্যন্ত
আমার গা‌য়ে এ‌সে আছ‌ড়ে প‌ড়ে।
‌দুপু‌রের জল‌যোগ শে‌ষে গা এ‌লি‌য়ে দেই
‌তোমার স্নান ঘ‌রের এপা‌শে কান পে‌তে রই,
‌তোমার গা বে‌য়ে স্বচ্ছ জ‌লের কণা খ‌সে প‌ড়ে
টাও‌য়েল ঘ‌ষটা‌নো ত্বকে উষ্ণ আঁচড় লা‌গে,
সব‌কিছুর ম‌ধ্যে একটা নীরব উপ‌স্থি‌তি।

শী‌তের রোদে গা এ‌লি‌য়ে তু‌মি দাঁড়াও
উঠা‌নের কোণায়,
তোমার চোখে সযত্ন চাউ‌নি,
ক্যাকটাস আর রজনীগন্ধার ঝো‌পে,
আ‌মি প্র‌তি‌টি বৃন্ত, গু‌ল্মের আড়াল থে‌কে
চে‌য়ে থা‌কি,
ফু‌লের রেণু‌তে তোমার হাঁ‌চি হয় কিনা,
‌গোলা‌পের সুগ‌ন্ধে তু‌মি বি‌দিশা হও কিনা!

‌কিভা‌বে যেন আ‌মি তোমার খুব ঘ‌নিষ্ঠ জন
হ‌তে চা‌চ্ছি,
আজকাল আড়া‌লে আবডা‌লে ব‌লে কিছুই
থাক‌ছে না,
একটা টিপ খুব আনা‌ড়ি বা‌লিকার মত
‌লাগ‌লে, একটু অবস্থান থে‌কে স‌রে পড়‌লে
আ‌মি ব‌লে ফে‌লি,
না কিছুই হ‌চ্ছে না, বড্ড বেমানান,
খু‌লে ফে‌লো নয়ত ওটা ঠিক ক‌রে প‌রো!
য‌দিও সচরাচর টিপ তু‌মি প‌রো না।

‌তোমার চারপা‌শে হাজার জন অর্বাচীন,
তরুণ, প্রবীণ , যুবক ক‌বি‌দের আনা‌গোনা,
সব দে‌খেশু‌নে আ‌মি কিভা‌বে যেন অ‌ধীকা‌রের
পথ সীমা ডি‌ঙি‌য়ে যাই।
মুখ ফস‌কেই বারবার ব‌লে ফে‌লি,
এতটা বেসামাল হচ্ছ কেন তু‌মি?
পা পিছ‌লে প‌ড়ে যা‌বে
ক‌বি‌দের কাজই মন ভোলা‌নো, যাদু করা,
তু‌মি ও‌দের কথায় কেন ভুল‌বে?
ওপ‌থে তু‌মি যেও না।
‌ফি‌রে এ‌সো তু‌মি, ফি‌রে এ‌সো বারবার
‌ফি‌রে এ‌সো আমার কা‌ছে। 

আমার কবিতা🌿 page no.🌿 আমার কবিতা

No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)