* তার সাথে একবার দেখা হয়েছিল
ধূসর পড়ন্ত বিকেলে,
অল্প স্বল্প কুয়াশা ঢেকে ফেলছিল
ঘুমন্ত প্রান্তরটা।
তার পুরো শরীর শীতের চাদরে
মোড়ানো, চাদরের ফাক গলিয়ে
ধবধবে দুটো সতেজ হাত,
আমার স্পর্শের সম্পূর্ণ বাইরে,
আমার চোখের সর্বোচ্চ
শক্তি ব্যয়ে তাকে হাতছানি দিয়ে
ডাকলাম, তুমি এস!
আমাকে একবার জড়িয়ে ধর!
আমার মধ্যে কি উত্তাপ,
আমার মধ্যে কি খরা, কত দুর্ভিক্ষ!
তুমি অণুভব করে দেখ।
এখানে যত উষ্ণতা জমে আছে
তুমি নাতিশীতোষ্ণ কর!
আমি পুড়ে যাই, পুড়ে ছাই হই
তা নিশ্চই তুমি চাও না!
তোমাকে দেখানোর মত আকূতি
আর কিছু আমার কাছে নেই।
মূর্ছাগ্রস্ত উল্লাস
-- নজরুল জামিল
*এক পশলা বৃষ্টিতে আমার চোখে অশ্রুজল
ম্লান হয়েছিল, ঠিক কবে তা মনে নেই।
যেদিন সোজন বাদিয়া আমার ঘাটে
তার ময়ুরপঙ্খী নাও ভিড়িয়ে স্বপ্নজাল
ফেলেছিল, তার দুচার দিন পরে থেকে,
থমকে গেল আমার পদ্ম স্নান।
আমি মুষলধারের বৃষ্টিতেও এখন হাসি;
বজ্রপাতের ঠা ঠা করা প্রকট শব্দে
চারিদিক তোলপার করা ঝিঁ ঝিঁ পোকার
আছড়ে পড়া আর্তনাদের আমি হাসি।
মহাশ্মশানের বুকে নরখুলির খোলসে
যখন হু হু করা বাতাস শীষ দিয়ে
চারিদিক প্রকম্পিত করে, গায়ে কাটা দেয়,
আমি তখনও বিকট শব্দে হেসে যাই।
পাড় ভাঙা নদীর প্রমত্ত তান্ডব
দেখে বিকট শব্দে আমার বুকের ভেতর
খুশির নাচন জেগে ওঠে।
জন ঘন বসতি পূর্ণ মেগাসিটির সুউচ্চ
অট্টালিকা ভুকম্পনে প্রকম্পিত হতে দেখে
মহাপ্রলয়ের ভয়ে গণমানুষের চোখে মুখে
আতঙ্ক দানা বেঁধে ওঠে।
আমি তখনও বিকট শব্দে হেসে উঠি।
অবসরের বিষণ্ণতা
-- নজরুল জামিল
ভীষণ বিষণ্ণতা তোমাকে মনে করিয়ে দেয়,
অসময়ের অখন্ড অবসর বার বার
ফিরে আসে তোমার বারোতা নিয়ে।
তিলোত্তমা শহরের কোথাও কোন কোণে
সবুজ ঘাস, গোলাপী ক্যানভাসে নরম
ধানের শীষ আজও খুঁজে বেড়াই।
তোমার কাছে যেতে যেতে কয়েকশ
মাইল পিছনে ফিরে আসি,
হাজার কাজে শত ব্যস্ততার মাঝে
তোমার কাছে অবকাশ যাপন করে
আমার অগোছালো ভাল লাগা গুলো।
তোমার একান্ত উপেক্ষা
-- নজরুল জামিল
আমার চোখ দেখে কখনো বলনি,
তোমার চোখের নিচে কালি জমে যাচ্ছে
তুমি মনে হয় অনেক রাত ধরে ঘুমাওনি।
তুমি না বললেও আমার কাছে তুমি
অনেক যত্নে গড়া বিষয়।
সেখানে শিল্প সাহিত্যর সব চর্চা হয়।
মনে হয় তুমি অবসরে হলেও আমাকে
অনেকখানি ভালবাস।
আমার দিকে তাকিয়ে সহসা বলতে পারতে
তোমার কপালে ওরকম কাটা দাগ কিসের?
এখনো বোধ হয়
রক্ত জমাট বেঁধে আছে!
এখানে এক সেকেন্ড চুপ করে বসো
কপালটা বেধে দেই।
পোড় খাওয়া পোড়া কপাল আমার!
এমন মমতায় তুমি বলনি।
তারপরও মনে হয় তুমি এরকম
উপেক্ষার সাথেই আমাকে ভালবাস,
আমাকে ভালবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পার না।
আমার গায়ে হাত রেখে কখনও বলনি
তোমার গা'তো পুড়ে যাচ্ছে
তুমি মনে হয় একদম টেরই পাওনি
তোমার গায়ে এতখানি জ্বর এসে ভর করেছে।
তুমি না বুঝলেও আমার তৃতীয় ইন্দ্রীয়
তোমার হাতের যত্নে লালিত হয়।
পরম সেবা শুষ্রুসা পেয়ে বড় হয়
আমার ভালবাসার গহীন অরণ্য।
উপলক্ষ ছাড়াই অগোছাল ভাবে হলেও
তুমি আমাকে অনেকখানি ভালবাস ।
কখনও তুমি বলনি, এসো আমরা দুজনে বৃষ্টিতে
ভিজি
যতক্ষণ অবধি মাঠের ওপারের আকাশে
রংধনু দেখা পাওয়া যায়।
গোধূলি গড়ানো বিকেলটায় আমরা
আজ এখানে বসে বিলীন হব
কখনও বলনি তুমি!
কি বলবে তুমি তাকে
যখন তোমাকে চাই বারবার
তোমার আষ্টেপৃষ্ঠে জুড়ে থাকতে চাই
অথচ তুমি আমি যোজন মাইল দূরে।
তুমি আমি নিয়তির পরিহাস মাত্র।
তোমাকে ছাড়া এ যাত্রায় অন্তহীন পথ
ধূসর প্রান্তরে গোবি মরুভুমি!
পৃথিবীর সব রঙিন গোলাপ তোমাকে
দিয়ে বলব ভালবাসি,
তুমি তারপর বলবে আমি এমন সহজতর
ভালবাসা মানি না,
কয়েকটা গোলাপ কাঁটার আঘাতে
তোমার হাতের পৃষ্ঠ দেশে রক্তাক্ত করে দেখাও,
আমাকে বুঝতে হবে তুমি কতটুকু ক্ষত
সামলে নিতে পার।
আকাশ থেকে এক জোড়া শুভ্র পায়রা
তোমার হাতে উড়িয়ে দিলেও তুমি
বলবে, আমি এমন শ্বেত শুভ্র সুখ
কামনায় আশ্বস্ত নই,
আমার সামনে নতজানু হয়ে ভালবাসা
প্রার্থনা করে চেয়ে দেখাও,
আমাকে জানতে হবে আমার কাছে তুমি কতটা
সমর্পিত হতে পার।
দুঃস্থ-জরাগ্রস্তদের কথা
-- নজরুল জামিল
*এ কবিতা তোমার জন্য নয়,
এ কবিতা পোড় খাওয়া চিল,
ডানা ঝাপটানো বক,
কাদায় পা আটকে যাওয়া শালিক
নিত্য বিলাপে মত্ত কোকিলের জন্য।
এ কবিতার বানী তোমার মত
সুখ বিলাসীর জন্য নয়,
এ কবিতা গল্পকারের জন্য,
যার গল্পে হৃদয় ডুকরে ওঠে,
চাপা আর্তনাদ আকাশের
ওপার হতে মূর্ছা যায়।
গল্পওয়ালার নিজের পাষাণ বুকে
তীরের মত বিঁধে।
এ কবিতায় তুমি প্রেম খুঁজ না,
এ কবিতায় প্রেম নেই
আছে জীবনের জলাঞ্জলি,
রাত বিরাতে হুতুম পেঁচার
বিকট শব্দে নিঃশব্দের কানে
পেরেক ফুটানোর কিছু শব্দ!
প্রায়শ্চিত্ব ও ঘৃণা
-- নজরুল জামিল
কখনও তোমার সদৃশ কোন রমনী
কিংবা নারী, যার চোখে চোখ রাখলে
আহত হতে হয়,
নিজেকে নতুন করে
একজন প্রেমিকের স্থানে
দেখতে ইচ্ছে হয়,
এরকম নারীর চোখে তাকাব না।
ভেতরের সব গোপন ইচ্ছেকে বিসর্জন দিতে চাই
নিজেকে কঠিনতর পাথরের চাই বানাতে চাই।
আমার সুৃষম প্রেম তোমার কাছে নষ্ট হয়ে গেছে
আহত হয়েছে বার বার।
আমি তোমাকে অভিশাপ দিতে চাই
আমি তোমাকে যতটা চাইতাম
কেউ তোমাকে ততটা ঘৃণা করুক
তুমি ভালবাসাহীন জীবনে নিঃশেষ হও।
আমি তোমাকে অভিশাপ দিতে চাই
তুমি উঠতে বসতে অণুভব কর,
আমার সমান অথবা এর চাইতে প্রখর
তেজে তোমাকে ভালবাসে
তোমার এমন কোথাও কেউ নাই।
আমি অভিশাপ দিতে চাই, কারো জন্য
আমার মত তুমি আহত হও বার বার
তোমার বুকে শত সংশয় দানা বেঁধে উঠুক
এত প্রেম কি করে অভিশাপ হয়ে ওঠে!
আমার অতীত অন্তরের ঔদার্য্যর কাছে
দায়বদ্ধ হবে এমনকি তোমার একান্তজন
অভিশংসন প্রস্তাব আনা হবে তোমার বিরুদ্ধে।
কী করে পারলে এমন নৃসংশ বাণ মারতে
অমন কোমল হৃৎপিন্ডের ঠিক মধ্যখানে!
আমার জন্য তোমার সামান্যতম প্রতীক্ষা
-- নজরুল জামিল
আমার জন্য তোমার সামান্যতম প্রতীক্ষা নেই
আমি আসতে পারি জেনেও
তোমার ঘরের দ্বার রুদ্ধ করে রাখলে!
আমি হলে রোজ রাতে সব যান্ত্রিকতা
বন্ধ করে কেরোসিনের প্রদীপ জ্বেলে
দরজার এপাশে বসে থাকতেম,
সে আসবে বলেছিল! কখনও বা কোন
সময় সে আমার আঙিনায় আসবে,
কোন না কোন দিন তার পদ চিহ্ন
আমার দুয়ারে পড়বে।
আমি হলে রোজকার দিন শেষে নাগরিকতা
থামিয়ে রেখে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ ঢেলে
তোমার আগমনী ধ্বনির প্রতীক্ষায়
টেবিলের এপাশ ওপাশ হাতরে বেড়াতাম,
সে আসবে বলেছিল! কখনও বা কোনও
সাঁঝ বেলায় সে আমার পুরনো পেয়ালায়
তার আঙুলের মসৃণ স্পর্শ রাখবে।
তোমাতে আসক্তি
-- নজরুল জামিল
তোমার প্রতি নেশা ধরেছে অনেক দীর্ঘ কাল
যুগ যুগেরও বেশি সময়
তোমাকে ছাড়তে চাওয়া আমার এ জন্মের
প্রেম দিয়ে সাধ্য নয়।
প্রাত্যহিক কত কাজের সাথে আমার বাস
সে সকল কাজের কোনটিতে আজ পর্যন্ত
অভ্যেস জন্মালো না
তোমাকে দেখার, তোমাকে ভাবার যে অভ্যেস
প্রতিদিনের অফিস ফেরা
তালাবদ্ধ ঘরে চাবি গলিয়ে প্রবেশ
এসব রোজকার মত চলতে থাকে।
আজ অবধি এক কাপ চায়ের প্রতি রোজকার
আসক্তি জন্মালো না
হালের ক্রেজ- সানগ্লাস, দামী ঘড়ি, নোট বুক
নেট বুক এমনকি কড়কড়ে নোট
কোনটিতে রাহুগ্রস্ত নই,
যতটা তোমার ভাবনার রাজ্যে বুদ হয়ে যাই।
পরিশিষ্ট অতি সংক্ষিপ্ত
আমাকে দিয়ে জগদ্বিখ্যাত কোন কর্ম সাধন হবে না
কেবল তোমাকে ভালবাসা ছাড়া।
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)