মনের উঠোনে তোলপার
-- নজরুল জামিল
উত্তাল উত্তাপে শরীর পুড়ে যায়
প্রচন্ড গরম, মন পোড়ানো গরম।
কাঠ ফাটা রোদ্দুরে রাত জাগা
কষ্টটা আরো বাড়ছে।
একটা ভীষণ বৃষ্টি দরকার
বুকের গহনে, মনের উঠোনে
তোলপার করা বৃষ্টি,
কিংবা হৃদপিন্ডের বাম অলিন্দে
ঝড় বয়ে আনা বৃষ্টি।
আজকাল বৃষ্টিতে তেমন করে
বন বাদাড়ে শেওলা জমে না,
আম, শিরিসের গহীন বুক জুড়ে
ক্লান্তিতে ভেজা কোটরে
পুরনো ক্ষতরা কেবল উঁকি দেয়।
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
বয়সী বটের ঝুড়ি চুয়ে চুয়ে
তেমন অশ্রুর জল গড়ায় না।
বৃক্ষগুলো হয়ত এখন আর কাঁদে না।
কাঁদলেও কেবল ডুকরে কাঁদে,
ঠিক অশ্রুর মত কিছু গড়ায় না।
"কেউ চিনেনা ক্ষুদ্র এই গোলাপটি"
-- নজরুল জামিল
ক্ষুদ্র এ গোলাপটিকে কেউ চিনে না-
কোন যাযাবর পুষ্প হয়তবা।
আমি কি তাকে কোন পথ হতে এনে
তোমার হাতে তুলে দেইনি?
তাকে মনে রাখে শুধু একটি মৌমাছি -
শুধু একটি প্রজাপতি,
সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসে --
গোলাপটির বুকে গা এলাতে,
শুধু মাত্র একটি পাখি আর্ত চিৎকার জুড়ে --
শুধু মাত্র একটু মৃদু বায়ু দীর্ঘশাঃস ছাড়ে --
হায়রে ক্ষুদ্র গোলাপ-- কতনা সহজে
এমনি করে তোমার জন্য মরে!
("এমিলি ডিকিনসন এর কবিতা- Nobody knows this little Rose" থেকে অনুবাদকৃত)
চোখের পাতার ওপাশে কষ্টরা ঘুমায়
-- নজরুল জামিল
*চোখ দেখে যদি বোঝ
আমার চোখে অনেক জল জমেছে,
সে জলে প্লাবন নামতে পারে,
তা কি বোঝ!
অমন অশনি সংকেত দেখে
দুই চারটে পদ্মা, ব্রহ্মার পানি
বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে পারে
আকাশের তারা খসে পড়তে পারে
তা কি বোঝ!
চোখের জল দেখে যদি বোঝ
এ জলে আগুন লেগেছে,
এ চোখ দাউ দাউ করে জ্বলছে,
সে আগুনে তুমিও পুড়তে পার
তা কি বোঝ!
এ চোখ কষ্টের হিরোশিমা বয়ে বেড়ায়
মাইলের পর মাইল
পুরণো ক্ষত খা খা করে,
বুকের জমিনে কষ্টেরা তোলপার করে
তা কি বোঝ?
চোখ দেখে যদি বুঝতে পার
আমি নির্ঘুম রাত পাহারা দেই,
সে রাতে আমার পাশে কষ্টরাও থাকে
তা কি বোঝ!
আমার চোখের পাতার ওপাশে
কষ্টরা ঘুমিয়ে থাকে
রাতের আধারে তারা শব ঘাটে,
শ্মসানের মরা খুলির মধ্যে
হিসহিস করে নিশ্বাস ছাড়ে
তা কি বোঝ!
* এই যে বীর পুরুষ শোনেন
কাল দেখলাম দাঁড় কাকের মত বৃষ্টিতে ভিজলেন!
কেন একটা ছাতা সাথে রাখলেই পারেন!
আজকাল কখন যে হুটহাট মূষলধারে
বৃষ্টি ছোটে তা কি বোঝেন!
আর বৈশাখ মাসটা একটু দেখেশুনে যাবেন,
অফিস ফেরত একবার বাড়ি ফিরলেই হল,
গিয়ে কাপর পাল্টে ফেলব।
আপনিতো আবার তাড়া দেখাবেন!
একদিন দেখবেন জ্বরের ঘোরে কাতরাবেন।
এসময় মেঘ একটু কাল হলেই বাজ পড়ে,
ঝড়ের মধ্যে কোথাও একটু দাঁড়িয়েন।
অন্তত আমি বলছি তাই ভেবে মানেন।
নিজেকে একটু গুছিয়ে তুলুন,
ওরকম ছন্নছাড়া কত কাটাবেন!
নিজেকেতো একটা কেরাণির চেয়ে কম ভাবেন,
কেউ না জানুক, আমিতো জানি,
ভেতরের একদল ঝিঝি পোকা মধুর সুরে
সারাক্ষণ কত রিনঝিন করে।
তা কেরাণির কি শরীর টরীর নেই, ভেবেছেন
সেটা কখনও খারাপ টারাপ হবার নয়!
আজকাল আবার শুনছি সকালের নাস্তাটা
পর্যন্ত মুখে দেওয়ার নাম নেই,
অথচ কত অনায়াসে অফিসের হারহদ্দ
সেরে ফেলেন!
বোঝারতো উপায় নেই কেউ একজন অভু্ক্ত
থেকে গেছেন।
তা যদি খুব সময়ের অভাবে ভোগেন,
তগাড়িতে যেতে যেতেওতো খেতে পারেন,
শুকনো কিছু, না হয় ফল টল দুটো!
নিজেকে একটু ভাল রাখুন,
কবিতা নিয়ে অত কেন ভাবেন
সেতো আর হারিয়ে যায়নি!
সরল অঙ্কে তুমি
-- নজরুল জামিল
"তোমাকে ভুলতে পারছি না,
তোমার মুখ না দেখলে যেন দিনটা কেমন যায়!"
তোমার একথা কোন প্রেম নয়, আমি বুঝিনি।
মঙ্গল গ্রহ কি করে লাল থেকে সবুজ হবে,
একদিন সেখানে মানুষের বসতি হবে,
আমরা সবুজ শাকের চাষাবাদ করব,
এ সব আমি চোখ বুজেই বলে দিতে পারি,
কেবল তোমার ঠোঁট গলিয়ে ঠিকরে বেরোনো
হাসিটা কি ছিল, সেখানে অবশিষ্ট অঙ্কে
মেলানোর মত কোন মায়া ছিল কিনা,
তাই বুঝিনা!
" তোমার কথা না শুনলে আমার
একটা দিন কেমন পানসে কাটে, তুমি বুঝবে না!"
তোমার একথায় কোন প্রেম নেই, আমি তাই বুঝিনি।
পৃথিবীর সব নিম্নভাগ কিভাবে একদিন ডুবে যাবে,
উপকূলীয় এলাকার স্থল আবার করাল সমূদ্রে
গ্রাস হবে কিভাবে, আমাদের বাহন হবে
আবার সেই চাকাবিহীন বিশাল সব নাও,
টগবগিয়ে ছুটবে।
এসব আমি হলফ করে বলে দিতে পারি,
কেবল তোমার মুখ বাঁকিয়ে নিংড়ে পড়া
হেয়ালিটা কি ছিল, এর মধ্যে সরল সমীকরণের
বাইরে কোন অঙ্ক ছিল কিনা,
এটুকুই বুঝি না।
"তোমার ফোন না পেলে আমার
সে রাতে ঘুম হয় না, আমি ঘুমের মধ্যেও জেগে থাকি।
না ঘুমিয়ে আমি দাঁড় কাক হই।"
এ কথাতে কোন প্রেম নেই, আমি বুঝি না।
আমার বোঝার মত বয়স হয়নি।
ভুপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ফল্গুধারা
মরা গাঙের ক্ষীণ স্রোতের দাগ
রেখে যায়।
আমার আজন্ম লালিত প্রেম কখনো
মরে না। ছাই চাপা আগুন বার বার
জ্বলে ওঠার মত ফুলকির দিকে ছোটে।
ভ্রান্তি বিলাস
-- নজরুল জামিল
তোমার সাথে একবার দেখা হয়েছিল
আমার সবুজ প্রান্তরে।
তুমি শুধু আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলেছিলে,
"আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না!"
তখন বুঝিনি তোমার চোখে ওটা ছিল
এক ধরণের কামনা। যখন বুঝলাম,
ওটা তোমার স্বপ্ন নয়, শুধুই কামনা;
যখন চোখের ভাষা বুঝতে শিখলাম,
তখন থেকে আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। কাউকে লিখতে চেয়েছিলাম,
তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।
যখন দেখলাম, আসলে তার দিন চলে যায়,
আমাকে ছাড়া বড্ড অনায়াসেই!
তখন লেখার কাগজটা টুকরো টুকরো
করে ছিড়ে ফেলে দিলাম,
কাগজের সাথে সাথে মন নামের
অদৃশ্য বস্তুটাও টুকরো হয়ে গেল।
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)