আমার কবিতা 🌿 page no.🌿 আমার কবিতা
** প্রত্যাশার বাষ্প**
-- নজরুল জামিল
এরকম কাঠ ফাটা রোদে আমি ক্লান্ত চোখে
খা খা রোদ্দুরে হাঁটছিলাম,
আমি অপেক্ষার দীর্ঘ দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম,
তোমার চোখে আমার চোখ পড়ে গেল
আমি ভাবলাম, তুমি আর্তনাদ করে উঠবে
হাউমাউ করে কেঁদে একাকার করবে
পথচারী সব জড়ো হয়ে যাবে
চৌরাস্তার চার পাশে।
তুমি আমার শ্রান্ত চোখ মুছিয়ে দেবে
তোমার ভেজা ওড়নার পাড় দিয়ে।
এরকম ঝড় জলোচ্ছাসের রাতে
আমার আঙিনা ভাসিয়ে নিল ভয়াল
কাল স্রোত। আমি গৃহহীন উদ্বাস্তু।
আমি ভাবলাম তুমি দিগভ্রান্ত হয়ে
ছুটে আসবে ভেলায় চড়ে
উঠোন পেরোবে, আমার ভেঙে যাওয়া
চালহীন গৃহে স্বস্তি এনে দেবে।
আমাকে এনে দেবে যাবতীয় রসদ,
আমার জন্য শুকনো খাবার
নিদ্রা যাপনের জন্য গরম কম্বল
খাবার জন্য বিশুদ্ধ পানি।
** দহন **
-- নজরুল জামিল
এক কোটি বছরের অপেক্ষা শেষে যখন
আর একটা গ্রহে সবুজ ধানের চাষ হবে
তখন তুমি বুঝবে তোমার জন্য
চির পরিচিত আবাদী গ্রহে
একজন মানুষ ছিল
যে তোমাকে তার শিরার মধ্যে
বার মাস চাষ করত।
বার মাসের তিনশত তেপ্পান্ন দিনই
সেখানে মই দেয়া হতো, সেচ দেয়া হতো
উচ্চ ফলনশীল ফসলের স্বপ্ন নিয়ে।
এক হাজার মাইল দূরে সরে গিয়ে যখন
মহাকর্ষের টানে আবার ফিরে আসবে
এই দেশে
তখন দেখবে এই ভুমির জল কাদা
একটুও শুকায়নি,
অবিকল রয়ে গেছে।
অজস্র অশ্রুর ফোঁটা এখনও তাকে
শুকোতে দেয়নি।
একশ শতাব্দী পর যখন দেখবে
আর একটা টেমস, কিংবা নীল নদ
পুরনো মানচিত্র থেকে ছিটকে পড়ে
হিমালয়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
তখন বুঝবে মিশরের মরুভূমিতেও
প্রাণের অস্তিত্ব ছিল,
জীবনের কোলাহল ছিল।
একটি চেনা কাফেলার মধ্যে
একজন রুগ্ন পথিক ছিল
যে প্রচন্ড বালির ঝড়ের মধ্যেও
তোমার দেশে যাত্রা করত।
এক মহাসাগর সমান জলের প্রেমে
ডুবে যাওয়ার পর যখন আবার
কূলে উঠবে তখন মনে পড়বে
বুকের গহীন নদীতে অনেক আগে
এক ডুবো চড় জেগে উঠেছিল
সেখানে আজও দুর্বা ঘাসের
ডগায় প্রত্যেক ভোর বেলায় শিশির
চকচক করে।
-- নজরুল জামিল
ইলোরাকে আমি চিনতাম না,
কখনো এর আগে হয়ত দেখিনি,
একদিন মুঠোভর্তি স্বপ্ন ফেরি করতে করতে
সে আমার পিছু নিয়েছিল
নতুবা আমার চোখ এড়িয়ে যেত।
এরপর সে তার মায়ার হাটে
সওদার পসরা নিয়ে বসল।
বলল তার দাম চাই না,
বেলাশেষে নিমন্তন্নের ডাক পেলেই
তার চলে যাবে।
আমি গোধূলির রং এর দিকে
চেয়ে চেয়ে তার প্রতীক্ষায়
দিন যাপন করছি,
অসংখ্য উপহারের ডালি নিয়ে
মলিনতার প্রহর গুনি, এরপর
আগন্তুকের পথ চেয়ে দৃষ্টি ঝাপসা হয়
দিনগুলি বিবর্ণ সোনার খাঁচায়।
মন বাড়িয়ে তোমাকে ছোঁয়া যায়
-- নজরুল জামিল
আকাশ ছুঁতে চাইতে পারি
তবুও তোমায় ছোঁয়া যায়না।
চোখ বন্ধ করে তোমাকে ভাবা যায়,
নির্ভয়ে অলীক স্বপ্ন দেখা যায় না ।
বুকের গভীর থেকে তোমায় মনে করে
গোপণ দীর্ঘশ্বাস ফেলা যায়,
বুকের আলিঙ্গনে তোমাকে পাওয়া যায় না।
বৃষ্টিস্নাত হাতে তোমার দু চোখ মুছিয়ে দেয়া যায়
দুই হাত বাড়িয়ে তোমাকে ডাকা যায় না।
মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ দেখা যায়,
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকা যায়,
প্রতিটা মুহূর্ত দেখার জন্য ছটফট করা যায় না।
ঠোঁট নেড়ে মৃদুস্বরে তোমায় ডাকা যায়,
উষ্ণ ঠোটের পরশ বিলানো যায় না।
বাঁকা চোখের চাহনিতে কাছে আসতে বলা যায়,
আমার সাথে প্রান্তরের মাঠ পেরোতে বলা যায় না।
তোমাকে নিয়ে ছোট্ট একটা কবিতা লেখা যায়,
প্রিয় শব্দগুচ্ছ দিয়ে তোমাকে সম্বোধন করা যায় না।
বেলা দ্বিপ্রহরে তোমার সাথে গল্প জমাতে পারি
বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে পাশে বসতে পারি না।
মন বাড়িয়ে তোমাকে ছোঁয়া যায়
হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার ধৃষ্টতা করা যায় না।
আমার প্রতি পদক্ষেপে জড়িয়ে আছে
আটপৌরে জীবন যাপনের তাচ্ছিল্য ও অযোগ্যতা।
-- নজরুল জামিল
আমার চারপাশে এখন অবাক করা নিস্তব্ধথা,
অদ্ভুত এক পৃথিবীতে বসে আছি আমি
পুরোটাই অন্ধকার, অন্ধকার দিবা রাত্রি
ঘুণে ধরা সমাজ, ঘুণে ধরা কিছু মানুষ।
আমার বসার চেয়ারটা, আমার পাঠের টেবিলটা
ঝাজরা হয়ে গেছে,
আমি নির্লিপ্ত, নির্বাক বসে আছি,
দেশের লোক সব ধন্য ধন্য করছে,
ছেলেটার জয় হোক,
অমন ছেলে, লাখে একটা!
নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, এ কবিতাটা শেষ
করা চাই, এ গল্পটা বুঝতে চাই।
গল্পটা আর শেষ হয় না, কবিতা কখনও
মহাকাব্যে রুপান্তরিত হয়,
টেবিলের নিচ দিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিলে
কখনও বহিরাগত কোন পাঠকের
চোখ পড়ে যায়।
কাঠের ভেতরটা কেবল বাইরের কিছু
খোলসেই টিকে আছে,
যে চেয়ারটায় বসে আছি, সেই সকাল থেকে
তার চার পায়া ভঙ্গুর, পান্ডুর রোগে ভুগছে।
অন্ধকার ঘরে আমি ও আমার পড়ার টেবিল
ভগ্নপ্রায়, সংক্রামক ব্যাধি ভর করেছে
সমস্ত শরীর জুড়ে,
বাইরের চোখে রোদ চশমা আটা মানুষ,
কিছু স্বপ্ন ভাঙা কবিতা,
কয়েকটি রঙিন খাম, ধুসর ক্যানভাস
খাঁ খাঁ করছে।
১৩ মার্চ ২০১৯, ২৩:৪৩
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)