এক একটিবার তোমার দরজার সামনে থেকে ফিরে আসি
কড়া নাড়তে গিয়ে গুটিয়ে নেই আমার হাত
এক আলোকবর্ষ হেঁটে যতটা সামনে আসি
তার চেয়ে দেড় শত মাইল পেছনে পা সরিয়ে আনি।
তোমাকে পাওয়ার চাইতেও আমার ঢের না পাওয়াটুকু
থেকে যায়, হৃদয়ের মধ্যে প্রলাপ জাগে।
তুমুল স্রোতে বান ভাসী জোয়ার নেমে গেলেও
তীরের জলা মাটির ফাঁক ফোকরে কিছু জল
জমে থাকে।
এক পাহাড় সমান খাড়ি বেয়ে হিমালয়ের পথে পা বাড়াই
প্রচন্ড প্রলয়ে আমার নিঃশাস আটকে যায়,
রিক্ত চোখে পুনরায় উপত্যকার বুকে নেমে আসি
তোমার দেশের মেঘ ছুঁয়ে বৃষ্টির জলে
আমার আর পা ধোয়া হয় না।
তোমার কাছে আমার চোখ বাঁধা
-- নজরুল জামিল
-কোথায় ছিলে এতক্ষণ!
-তোমাকে দেখছিলাম
-তুমি এত চালাক!
এই একটা কথাতেই
আমাকে ভুলিয়ে ফেল
তা কিভাবে দেখছিলে যেন!
-কেন সেই যে তোমার দিকে চোখ রেখেছিলাম
আর তো কোন দিকে সরাইনি।
-তো আমাদের তো কাল শেষ দেখা হয়েছিল
-আমার চোখ দুটোতো তোমার কাছেই রেখে গেছিলেম।
-তো সেই কাল থেকে এখন অবধি আমাকেই দেখা হচ্ছে বুঝি!
পুরো চব্বিশ ঘন্টায় তো একটা মহাদেশ দেখে ফেলা যায়!
একটা মানুষ অতক্ষণ ধরে কীইবা দেখার থাকে শুনি!
-কি যে বল না! তোমার ঠোঁট হইতে চিবুক পর্যন্ত দুরত্ব
ঘুরে আসতেই আমার এক বিকেল ফুড়িয়ে যায়।
-এইতো বলা শুরু, তোমাকে আর কৈফিয়ত চাইব, এমন সাধ্য কারো আছে!
তা সন্ধ্যার পর কোথায় ছিলে?
- ঐ যে তোমার মাথার উপর ঘন কালো সুনিবিড়
ঘাসের মধ্যে মুক্তো ফেলে আসছিলাম,
তাই খুঁজতে খুঁজতেই অনেক রাত হয়ে গেল ।
-তুমি পারও। তা তুমি না হয় চোখটা এখানে রেখে গেছিলে, সাথে পায়ে হেঁটে একটু আগে এলেই পার!
-তা চোখ যখন তোমার কাছে ফেলেই গেছি, ছুটে আসতে তো হবেই।
বিমূর্ত প্রকাশ
-- নজরুল জামিল
ঠোঁট নড়ছে তোমার
ভাবনার দুয়ারে এক সহস্র কড়া নেড়ে,
এ শহরের অলিগলি ছাড়িয়ে কাউকে
তোমার মত করে হয়তো ভাবছো।
অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে কাউকে
তোমার একান্ত কাছে হয়ত ডাকছো।
ঠোঁট নড়ছে তোমার
নিরবতার পাথরে আলোড়ন তুলে,
খুব গোপনে গুন গুন সুরে হয়তো
কার ও নাম ধরে ডাকছ।
ঠোঁট নড়ছে তোমার
শুন্য বুকে এক লক্ষ অগ্নিশিখা জ্বেলে,
তপ্ত দুপুরের অলস বেলায় হয়তো
কারও প্রেমের রঙিন স্বপ্ন আঁকছো।
ঠোঁট নড়ছে তোমার
রক্ত জবার গুলমে লাল পরাগ ঢেলে,
প্রিয় কোন পুরুষের বর্ণান্ধ চোখে
টকটকে লাল এর প্রলেপ মাখছ।
দুঃসময়ে কাছে ডেকে নিও
-- নজরুল জামিল
তোমার মত করে তুমি তাকে ভালোবেসো
আমি এ পথে আর ডাকবো না।
তবে কখনো ভালো লাগায় কমতি পড়লে
দূর থেকে আমাকে ডাক দিও,
হৃদয় নিংড়ানো সবটুকু নির্যাস দিয়ে
তোমার ভেতরের উচ্ছ্বাসকে তুলে আনবো।
তোমার মত করে রাত দুপুরে কারো
টেলিফোনে বিভোর হয়ে থেকো
আমি হয়তো আর আড়ি পাতবো না।
কখনো তোমাদের প্রেমালাপে একঘেয়েমি এলে
আগের মত পুরনো নম্বরে ডায়াল কোরো
পুরনো দুঃখ ব্যথার পসরা মেলো
এলোমেলো বিক্ষিপ্ত পড়ে থাকা দুঃখগুলোকে
তোমার ওয়ারড্রোবের এক পাশে গুছিয়ে দেবো।
তোমার মত করে তুমি তাকে নিয়ে বৃষ্টি জলে
পা ভিজিয়ে পুরো শহরের অলিগলি চষে বেড়াবে,
পাশাপাশি হাত রেখে সমান্তরালে হাঁটবে
তোমার আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে
উদ্দাম স্বপ্নকে ছুঁয়ো,
আমি আর স্বপ্নকে আহত করব না।
কখনো চলতে গিয়ে পা ভার হয়ে এলে
আমাকে জানিও,
তোমার পাশে থেকে একান্ত জনের মত
ক্ষনিকের বিশ্রাম দেব।
ফোন কাতরতা
-- নজরুল জামিল
*আজকাল কিরকম ফোন কাতরতায় ভুগে যাচ্ছি
বাইরে বেরোনোর সময় জং পড়া তালায়
চাবি গলাতে গিয়ে ভেজানো দরজাটা আবার খুলি,
একটু আগে ব্যাটারি ফুরিয়ে নিস্তেজ হওয়ার
ফোনটা হুমড়ি খেয়ে ধরি।
নিজের ভেতর বিড়বিড় করে হাসি
বিকল হয়ে যাওয়া ফোন কী আর বাজবে!
অফিস থেকে নামতে নামতে তড়িঘড়ি করে
কোন ইজি বাইক এ লাফিয়ে উঠে
দুপাশের পকেট হাতরে ফোনটা হাতে নেই
অতি সন্তর্পনে কোন বাটন টিপে দেখি
তার ফোন এলো কি না
তার কল আমার অলক্ষ্যে মিস হলো কিনা,
সহযাত্রীদের বিরক্ত চোখের তোয়াক্কা না করেই
এমনটা করি।
কলের জল ভরার বিরতিতে বালতি রেখে
সোজা আমার ঘরে ঢুকি,
চারপাশে দেয়াল টার দিকে তাকাই
কই দেয়ালে কোন রিনঝিন শব্দ হচ্ছে না তো
পুনশ্চ নিশ্চিত হতে বালিশের পাশে সেল ফোনটা
হাতরে বেড়াই, ফ্লাশ জ্বেলে দেখি
আমার অভাবে কারো কল মিস হলো নাতো!
ছুটির দিনে আটপৌরে বারান্দায়
আবহমান বিকেলের সময়টাতে কদাচিৎ
চায়ের কাপে ডুব দেই, চায়ের মধ্যে এক মুঠ
দেশীয় মুড়ি ডুবতে না ডুবতে
লেখার টেবিলটার দিকে ফিরে যাই
কই কার ও ফোন বাজে নি তো!
পুষ্প ব্যবচ্ছেদ
-- নজরুল জামিল
আমি কিছু বলব না তোমাকে
-কেন যাচ্ছ, তুমি যেতে পার না!
অনেক আগেই তুমি দূরে সরে গেছ।
যতটুকু দুরত্ব আমি রাখতে চেয়েছি
তার চেয়ে বহুগুণ ব্যবধানে।
ইচ্ছে হলে তুমি আমার বারান্দার সম্মুখে
এদিক সেদিক কিছুক্ষণ পায়চারি করতে,
নিতান্ত খেয়ালের বশে।
আমি বসতে বলতাম,
আজ থেকে যেতে বলতাম
তুমি বলতে, তোমার এই বাড়ির
বাগানটাও আমার ঘুরে দেখতে হবে।
কয়েকজন মালি সেখানে আমার জন্য
ফুলের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে।
বাগানের সব ফুলেই তোমার স্পর্শ
থাকা চাই, তা সে যেমন ফুলই হোক
তার যেমন গন্ধই হোক
বৃন্ত থেকে পাপড়ি, কেশর থেকে পরাগ
ছিড়ে কাগজের নৌকা ভাসানো তোমার কাজ
তোমার চোখে সবই নির্মল সবই কোমল।
কপট প্রেম
-- নজরুল জামিল
রুপকথার মত কোন গল্প ছিল না পুরোটা
উজার করে আমি তোমাকে দিয়েছিলাম,
কতটা ভালবাসতাম নিজেরও জানা নেই
আমার কাছে প্রায় অসম্ভব ছিল তোমাকে
আক্ষরিক ভাষায় পুরোপুরিভাবে জানিয়ে দেয়া!
আমরা কেমন যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলাম
যেমনটা আজ অবধি আছি।
তোমার বাড়ির দেয়াল পেরোতেই
আমার নিজ গৃহের চতুঃসীমা।
তোমাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রতিটা পদক্ষেপ
আমার জন্য কেমন অসাধ্য মনে হতো।
অবশ্য তুমি মেঘের মত কেমন নিঃশব্দে
আমার চোখের সামনে এসে ধরা দিতে
কোন পরিচিত অলি গলি ভেঙে।
আমার জন্য অভাবনীয় প্রাপ্তি ছিল
প্রতিবার তোমার এরকম উপস্থিতির পুনরাবৃত্তি।
তুমি বলতে, আমাকে ছাড়া তোমার
দিনগুলো কেমন বিবর্ণ লাগে,
আমি বলতাম, তোমাকে ছাড়া আমার
দিবস রজনী কাটতেই চায় না।
তুমি পূর্ণিমা রাতে জেগে থেকে
গুণ গুন করে গাইতে,
আমি চিৎকার করে তোমার
সুর ভেসে যাওয়া পথে হেঁটে বেড়াতাম।
আমাকে তুমি লক্ষ তারার মাঝে
জ্বল জ্বল করা সুক তারা ভাবতে,
আর আমি তোমাকে এক মাত্র চন্দ্র হিসেবে
তোমার পৃষ্ঠে অবতরণ করতে চাইতাম।
তারার দেশে তুমি আমাকে নিয়ে
যখন গীতি কাব্য উপস্থাপন করতে
আমার জলসা ঘরে তখন মৃদু প্রদীপের
আলোয় আমি তোমার জন্য অপেক্ষমান।
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)