পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী ৭ টি বিস্ময়কর দ্বীপ



পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী ৭ টি  দ্বীপ:

১) ত্রিস্তান দা কুনহা:

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসিত একটি দ্বীপ রয়ছে। যেটি আসলইে প্রমত্ত সাগরের বুকে একটি সর্ম্পূণ নির্জন একটি দ্বীপ। দ্বীপটি থকেে সবচেয়ে কাছের স্থলরেখা দক্ষিণ আফ্রিকা যা ১৭৫০ মাইল পূর্বে এবং পশ্চিম থেকে সবচেয়ে কাছের স্থলভূমি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা যা ২০০০ মাইলেরও বেশি দূরে। এটাই পৃথিবীর সবচয়েে দূরর্বতী দ্বীপ যখোনে মানুষ বসবাস করে। ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী এখানে মাত্র ২৬৮ জন লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এখানে বসবাস এতটাই অনশ্চিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ যে ১৯৬১ সালে যখন দ্বীপটিতে আগ্নয়েগরিরি অগ্নুৎপাত ঘটে তখন দ্বীপের সব অধিবাসীকে সরিয়ে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।


 

পুরো দ্বীপে একটি মাত্র স্কুল রয়েছে, যেখানে এখানকার অধিবাসীদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানো হয়। দ্বীপবাসীরা গৃহপালিত হাঁস মুরগী, নিজেদের উৎপাদিত নানা রকম শস্য দিয়ে জীবীকা নির্বাহ করে। আলু এখানকার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য।

এই দ্বীপে যাওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। ভ্রমনেচ্ছুদের জন্য কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। দ্বীপটিতে নেই কোন হোটেল, না আছে কোন বিমান বন্দর, নেই কোন ক্লাব বা হোটেল। দ্বীপের চারপাশের সাগরে নিরাপদে সাঁতার কাটার ব্যবস্থা নেই, এমনকি পর্যটককে পথ দেখানোর জন্য কোনো ব্যক্তিকে গাইড হিসেবেও  এখানে আপনি পাবেন না। এখানে যেতে হলে দ্বীপের কাউন্সিল থেকে যে কোন পর্যটককে অগ্রিম ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। আর এই অনুমোদন পাওয়ার জন্য যেখানে কম করে হলেও ৪০ দিন অপেক্ষা করে থাকা একটি সাধারণ বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন ও নামিবিয়া থেকে বছরে প্রায় ১০ টি জাহাজ  ত্রিস্তানে যাত্রা করে। জাহাজে করে দ্বীপে পৌছুতে ৫ থেকে ৬ দিন লেগে যায় । ৭২,০০০ থেকে ১৩৫,০০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয় প্রতিবার ফিরতি আসা যাওয়ার জন্য।

২) বিয়ার দ্বীপ:

 উত্তর মেরুর স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণের একটি দ্বীপ বিয়ার আইল্যান্ড। দ্বীপটি ইউরোপের মেইনল্যান্ড থেকে ৪০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। এখানে কয়েকজন আবহাওয়াবিদ ছাড়া স্থায়ীভাবে কোন মানুষ বসবাস করে না। গত শতাব্দীতে দ্বীপটিতে কয়লা উত্তোলন, তিমি ও মৎস্য শিকার ইত্যাদি বাণিজ্যিক কার্যক্রম দেখা যেত। বর্তমানে এখানে শুধু নরওয়ের একটি আবহাওয়া কেন্দ্র ও দ্বীপের পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য একটি হাসপাতাল রয়েছে। 


 

২০০২ সাল থেকে বিয়ার দ্বীপকে একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকায় হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে জায়গাটি সম্পূর্ণ বৃষ্টিপাত শুন্য একটি এলাকা এবং দ্বীপের কাছাকাছি পারমানবিক ডুবো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই দ্বীপে নানান রকম মেরু দেশীয় ফুল, বল্গা হরিন, মেরু অঞ্চলের শেয়াল দেখা যায়। এর উপকূলের চারপাশে কাঁদা খোচা পাখি ও লাল ফ্যালারোপ এর বিচরণ করে। দ্বীপটি বছরের নয় মাস জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এ জায়গা মাছ, পাখি ও পশু শিকারের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি স্পট। এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী ফেরি সার্স রয়েছে, এছাড়া আপনি ব্যক্তিগত নৌকা, ও জলযান সার্ভিস এর মাধ্যমে বিয়ার দ্বীপে যেতে পারেন। তবে মজার একটি বিষয় হল, বিয়ার দ্বীপে কোন শিশু জন্ম দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয় না, একজন গর্ভবতী নারীর যখন কয়েক সপ্তাহ বাকি তখন তাকে বাচ্চার জন্ম দেওয়ার জন্য অবশ্যই মেইনল্যান্ডে ফিরে যেতে হবে।

৩) বুভেট:

ত্রিস্তান কুনহা হল সবচেয়ে দূরবর্তী দ্বীপ যেখানে মানুষের বসতি রয়েছে। এখন আপনাদেরকে কোন মানুষ বসবাস করে না এমন একটি জনশূন্য দ্বীপের কথা জানাব। এই দ্বীপের পার্বত্য খাঁড়িগুলো পুরোদস্তুর সুউঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জায়গাটি সম্পূর্ণই বরফের পাহাড়ে ঘেরা, আর দ্বীপের চারপাশের সাগর বরফে ঢাকা। এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থলভুমি হল এন্টার্কটিকা যা ১০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সম্পূর্ণ দ্বীপটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা। তাই যদি আপনার এখানে ভ্রমন করার যুক্তিসংগত কারণ না থাকে তাহলে নরওয়ের কর্তৃপক্ষ আপনাকে আটকে দেবে।

কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর আপনি গবেষণার নিমিত্তে যেতে ইচ্ছুক কোন একটি যানবাহন পেয়ে যেতে পারেন। এরকম একটি জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আপনাকে ভুতাত্বিক জরিপ এবং সমূদ্র বিদ্যায় খুব দ্রুত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আপনাকে এ্যামেচার রেডিও উদ্যোক্তা হতে হবে। ১৯৯০ সালে এই দ্বীপে এ্যামেচার রেডিও পরিচালকদের ১৬ দিনের একটি বহুজাতিক অভিযান পরিচালনা করা হয়।

৪) বিশপ পর্বত: 

বিশপ পর্বত হলো উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ব্রিটিশ উপকূলবর্তী এলাকার একটি শৈলশ্রেণী। এটা আইল অব সিলি দীপপুঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ যা গ্রেট ব্রিটেনের কর্ণওয়াল উপদ্বীপ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এই দ্বীপটি বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত। গিনেজ ওয়াল্ড রেকর্ড অনুযায়ী পৃথিবীর ভবন সমৃদ্ধ পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দ্বীপ এই বিশপ পর্বত। এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ০.০০০৭৩৬ বর্গ কিলোমিটার। 


 

১৮৪৭ সালে ইঞ্জিনিয়াররা এখানে একটি লোহার বাতিঘর নির্মাণ শুরু করেন যা একটি প্রবল ঝড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৫৮ সালে প্রথম এখানে বাতি জ্বালানো হয় যা এখন পর্যন্ত টিকে আছে।

ব্রিটেনের যে কোন দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল থেকে আপনি এখানে খুব সহজেই যেতে পারেন। সেন্ট মেরিজ বোটসমেন এসোসিয়েশন প্রতিদিন দিবাকালীন ট্রিপ পরিচালনা করে।

৫) বোররে:

স্কটল্যান্ডের মেইনল্যান্ড থেকে ৬০ মাইল দূরে এই দ্বীপটি অবস্থিত। এটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে সেন্ট কিলডা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি বসতিহীন দ্বীপ। এই দ্বীপটির অনেক বর্ণিল ইতিহাস রয়েছে। ১৮৪১ সালের  জরিপ অনুযায়ী এখানে ১৮১ জন অধিবাসী বসবাস করতে দেখা যায়। উনবিংশ শতাব্দীতে এখানে ১০০ জনের বেশি লোক বাস করত। পরবর্তীতে ফসলের ফলন কমে যাওয়ায় এবং আয়োডিন উৎপাদিত হয় এরকম শেওলার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ দ্বীপের জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। দ্বীপবাসীর অনুরোধে ১৯২৩ সালে এখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা হয় ও ১৯৩০ সালে দ্বীপটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বোররে এই দ্বীপটি স্কটল্যান্ডের অবস্থিত ৫ টি বিশ্ব ঐতিহ্যর মধ্যে একটি।

৬) রকঅল: 

 রকঅল হল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত বসবাসের অযোগ্য প্রস্তর দ্বারা নির্মিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। এটি আয়ারল্যান্ড থেকে ২৭০ মাইল দূরে। এই দ্বীপটির আয়তন মাত্র ৭৮৫ বর্গমিটার। এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরির চুড়া যা সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২০ মিটার উর্ধ্বে অবস্থিত। ১৯৫৫সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চুড়ান্ত অধিগ্রহণের আওতায় এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি দখল করে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এখানে ক্ষেপনাস্ত্রর ব্যাটারি স্থাপন করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারা এটি দখল করে।

 ৭) উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ:

উত্তর সেন্টিনেল ভারত মহাসাগরের বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ৫৭২ টি দ্বীপের মধ্যে একটি। এটা মায়ানমার থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। এই দ্বীপটি বিপদ জনক পার্বত্য খাঁড়ি দ্বারিা বেষ্টিত। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিপদজনক ও আতঙ্কের এখানকার অধিবাসীরা। সেন্টিনেলিজরা আধুনিক সভ্যতার কোন কিছুই মানতে নারাজ। সেন্টিনেল দ্বীপের এই অধিবাসীদের সাথে বহুবার শান্তিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই তারা তা প্রতিহত করেছে। এই দ্বীপের কাছাকাছি কোন জেলে মাছ ধরার জন্য গেলেও তাকে আর জীবীত ফিরে আসতে দেখা যায় না। এক কথায় বাইরের পৃথিবীর কেউ এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারও তাদের এই চাওয়াকে মেনে নিয়েছে। বর্তমানে এই দ্বীপ ভারতের একটি স্বশাসিত অঞ্চল।

 


তাই উপরের ছয়টি দ্বীপে আপনি সাধ্য ও সামর্থ থাকলে একবার অভিযান চালাতেই পারেন। কিন্তু সেন্টিনেল দ্বীপটি শুধু রুপকথা মনে করে চোখ বুজে কল্পনায় রেখে দিবেন। এখানে যাওয়ার জন্য কোন নৌযান আপনার জন্য প্রস্তুত নেই।

সুত্র: সিএনএন ও উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য অন্তর্জাল।

ছবি: গুগল

 

 


No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)