পৃথিবীর ৭ টি রহস্যময় স্থান



পৃথিবীর ৭ টি রহস্যময় স্থান

পৃথিবীতে বিস্ময়ের কোন শেষ নেই। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে  লুকিয়ে আছে নানান রকম প্রাকৃতিক বিস্ময় যা আমাদের মনে নানান রকম প্রশ্ন জাগায়। আর আমরা তার ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকি। কিছু অদ্ভত স্থান আছে যেখানে মানুষের পদার্পন করা খুবই দুঃসাহসিক কাজ, আর কিছু স্থান আছে যেখানে সবসময় পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা সবসময় এসব রহস্যর উত্তর খুঁজতে থাকেন, আর অন্যদল পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকা এসব জায়গার  গোপন রহস্য দেখে শুধু বিস্মিত হয়।

১) রক্তের জলপ্রপাত, এন্টার্কটিকা :

ছবিতে ছাড়া অধিকাংশ মানুষ নিজের চোখে রক্তের জলপ্রপাত দেখেনি। লাল রক্তের জলপ্রপাত শ্বেত শুভ্র বরফের টেলর হিমবাহকে  রঙিন করে তুলছে: এমন দৃশ্য দেখে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে যাবে। এই স্থান সম্পর্কে প্রথম ১৯১১ সালে ভুগোলবিদ টমাস গ্রিফিন টেলরের বর্ণনায় পাওয়া যায়। টেলর ছিলেন এন্টার্কটিকা মহাদেশে রবার্ট স্কটের দুর্ভাগ্যজনক অভিযানের একজন সফর সঙ্গী।

 

তখন থেকেই পর্বত বিজ্ঞানী ও অণুজীব বিজ্ঞানীরা এখানকার এই রহস্যময় লাল রঙের প্রবাহের কারণ অনুসন্ধান করে চলেছেন। অবশেষে তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, এই প্রবাহের উৎস একটি ভুগর্ভস্ত লেক। এই লেকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ যার ফলে জলপ্রপাতের লাল রং ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় আরো চমকপ্রদ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই লেকের ১৩০০ফিট বরফের নীচে অনুজীব সালফাল ও আয়রণ পানির মধ্যেও টিকে আছে।

 

২) চুম্বকীয় পাহাড়, মঙ্কটন, কানাডা:

কোন প্রকার শক্তি ছাড়া একটি গাড়ি পেছন দিক দিয়ে উঁচু পাহাড়ের দিকে গড়িয়ে যায়। এর পেছনে এমন কী রহস্য রয়েছে।পৃথিবীর মধ্যে থাকা চুম্বকীয় কোন শক্তি? এর চেয়ে বেশি কোন চমকপ্রদ ঘটনা কি কোথাও আছে? ১৯৩০ সসালে যখন এই চুম্বকীয় পাহাড় আবিষ্কার হয়েছে তখন থেকে লোকজন এই ধাধার জট খোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরকমও ধারণা করা হয় যে, প্রকৃতপক্ষে এই চুম্বকীয় শক্তি একটি আলোর বিভ্রম এবং পাহাড়ের উঁচু ঢাল হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে পাহাড়ের নিচু ঢাল। যদিও রহস্যের এমন উম্মোচন মানুষকে গাড়িতে করে ঐ পাহাড় ঘোরা ও নিজের চোখে পরীক্ষা করা থেকে থামাতে পারেনি।

৩) সুরটসে, আইসল্যান্ড:

 কিছু লোকজন যখন আপনাকে বোঝাবে যে, সূর্যর নিচে নতুন কিছু নেই, তাদেরকে আইসল্যান্ডের সুরটছে দেখিয়ে দেন। ১৯৬৩ সালের পূর্বেও এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। তখন ওয়েস্টম্যান দ্বীপে পানির নিচে একটি আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হয়। ১৯৬৭ সালে যখন বিস্ফোরণ থেমে যায় তখন পৃথিবীতে এমন একটি দ্বীপের দেখা মেলে যা পৃথিবীতে আগে কখনো ছিল না। ব্যাপকতার কথা চিন্তা করলে সুরটসের আয়তন এক বর্গমাইল কিন্তু পানি ও বায়ুর সাথে যখন আগ্নেয়গিরির ভেতরের বিভিন্ন বস্তু মিলিত হয়ে উদ্গীরন হয়, তখন তা অর্ধ মাইল জুড়ে বিস্তৃত হয়।

 

 আইসল্যান্ডের সরকার এই নির্মল পরিবেশকে ধরে রাখার জন্য এই স্থানটিকে সংরক্ষিত করে রেখেছেন। ওয়েস্টম্যান দ্বীপের চারপাশ দিয়ে নৌকা করে ঘোরা যাবে। উদ্ভিদবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, ভুবিজ্ঞানী এবং অন্যান্য বিজ্ঞানী যারা গবেষণার কাজ করেন তারা ছাড়া সাধারণ জনসাধারণের জন্য সুরটসেতে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

 

৪) মধ্যরাতের সূর্য, স্পিটসবারজেন, নরওয়ে:

গ্রীনল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত নরওয়ের দীপপূঞ্জ স্বালবারডে এপ্রিলের ২০ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত কখনো সূর্য অস্ত যায় না। এই ঘটনা প্রত্যেক মানুষের দেহ ঘড়িতে এক ধরণের বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। এখন কি দুপুর? নাকি এখন মধ্যরাত? এক দুই দিন পর এটা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। এই দ্বীপটিতে যেসব পর্যটকদের গ্রীষ্মকালীন এই আশ্চর্যজনক প্রহর কাটানোর আগ্রহ রয়েছে তাদের থাকার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকরা অল্প সময়ের মধ্যে বুঝে ফেলেন যে এখানকার হোটেল রুমগুলিতে অন্ধকার বানানোর পর্দা দিয়ে কেন সজ্জিত করা হয়েছে।

৫) পামুক্কালে, তুরস্ক:

তুরস্কের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অনন্য স্টাইলে বরফে সজ্জিত ভুস্তর রয়েছে। এটি আসলে হাজার হাজার বছর ধরে ১৭ টি প্রাকৃতিক উষ্ণ ঝরনা থেকে পতিত ক্যালসিয়াম কার্বনেটের স্তুপ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে বর্তমানের ডেনিজিল শহরের নিকটবর্তী অঞ্চল এক শ্রেণীর মানুষের পদচারণা দেখা যেত। তারা মিনারেলযুক্ত এই উষ্ণ পানি যার তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌছে এমন পানিতে রোগ নিরাময় হয় মনে করে এখানে ছুটে আসত। কিন্তু এটা একটি অত্যাশ্চর্য সিঁড়ি, পামুক্কেলের খাড়া, প্রস্তরীভুত শিলার শুভ্র জলপ্রপাত। তুর্কি ভাষার পামুক্কেলে অর্থ হল তুলার প্রাসাদ।যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর একটি লীলাভুমি।


 

এর কাছেই প্রাচীন হায়ারোপলিজ নগরী যা খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এখানে প্রাচীন নগর হায়ারোপলিজের হাম্মামখানার কিছু অবশিষ্টাংশ দেখা যায়।

৬) চিরন্তন শিখা, নিউইয়র্ক:

নিউইয়র্কের নিউইয়র্কের চেস্টনাট রিজ পার্কের নরম শিলা গঠিত একটি নালা বা খালের উপরে পানির ঝরনার মধ্যে এমন একটি প্রাকৃতিক শিখা রয়েছে যেটি অনন্তকাল ধরে জ্বলছে। যেটিতে কেউ কোন জ্বালানি সরবরাহ করে না, অথচ যুগ যুগ ধরে ৮ ফুট উঁচু একটি মশাল জ্বলছে তাও আবার পানির একটি ঝরনার ফাঁকে ছোট গুহার মধ্যে। প্রথম দেখায় আপনার কাছে এটাকে আলোর বিভ্রান্তি মনে হতে পারে। স্পষ্টত এটা একটা দপ দপ করে জ্বলতে থাকা আলোক শিখা।


 

মূলত একটি ভুতাত্বিক বিচ্যুতির কারণে এই ঝর্ণার নরম শিলার তলদেশ থেকে প্রতিদিন এক কিলোগ্রাম মিথেন গ্যাস বের হয় যার মাধ্যমে এই শিখাটি অনবরত জ্বলতে থাকে। ধারণা করা হয় যে, বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে একজন পর্যটক গ্যাসের গন্ধ পেয়ে এটিতে আগুন দিয়ে জ্বালানোর চিন্তা করেন। ঝর্ণা থেকে আসা পানি লেগে মাঝে মধ্যে এটি নিভে গেলেও কোন না কোন পর্বতারোহী এই শিখাটি আবার জ্বালিয়ে দেন।

৭) ক্যাটাটামবোর বিজলি ঝড়: ভেনিজুয়েলা


 

ভেনিজুয়েলার ক্যাটাটামবো নদী যেখানে মারাকাইবো হ্রদে গিয়ে মিশেছে ঠিক তার চারপাশে প্রায় সারা বছর ধরেই বজ্রপাত ও বিজলি চমকাতে থাকে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ তরঙ্গ দৈর্ঘের বিজলি চমকায় যা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বছরে ২৫০ বার । দক্ষিণ আমেরিকার বারী ভাষায় কাটাটামবোর অর্থ হল: বজ্রপাতের সুতিকাগার। বছরের বেশিরভাগ সময় বজ্রপাতের বিস্তৃতি এত দীর্ঘ হয় যে স্থানটিকে বজ্রপাতের উৎসস্থল বললেও ভুল হবে না। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হওয়া ঝরো মেঘ মেঘ থেকে এই বজ্রপাতের উৎপত্তি হয় এবং বছরে প্রায় ১৪০ থেকে ১৬০ রাত ও প্রতি দিন ৯ ঘন্টা বজ্রপাত সংঘটিত হয়। এসময় প্রতি মিনিটে ১৬ থেকে ৪০ বার বিজলি চমকায়। পর্যটকরা সারা রাত জেগে থেকে দু চোখ মেলে এই অপার  দৃশ্য দেখে কাটিয়ে দেয়।

 

সুত্র: সিএনএন ও উইকিপিডিয়া, ছবি: গুগল

No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)