খাটো হয়ে জন্ম নেয়া মানু‌ষের গ্লানি নিরসন; লম্বা হওয়ার স্বপ্ন ও চি‌কিৎসা প্রযু‌ক্তি


  লম্বা হওয়ার স্বপ্ন ও চি‌কিৎসা প্রযু‌ক্তি:

 লম্বা হতে কে না চায়! জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত খাটো মানুষদের সবসময় একটা দুঃখ থাকে। সমাজের মানুষের দ্বারা প্রায় সময়ই তারা নিগৃহীত হয়ে থাকে। মানুষজন তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি বা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে। এমনকি বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য পাত্র/পাত্রী খুঁজতে গিয়েও খাট মানুষদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সামাজিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এরকম  খাট মানুষেরা যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল বর্তমানে তাদের অনেকে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন তাদের খর্বাকৃতি দূর করার জন্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতটাই উন্নতি হয়েছে যে বর্তমানে সার্জারির মাধ্যমে একজন মানুষকে লম্বা বানানোও সম্ভব। সে কারণে পা বড় করার সার্জারি বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যপকভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এ ধরণের সার্জারির মাধ্যমে একজন মানুষের পক্ষে সাধারণত দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হওয়া সম্ভব হয়। 

 

এই সার্জারির উদ্ভাবন হয় মূলত যাদের পায়ে ত্রুটির কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় তাদের জন্য। বিশেষ করে জন্মগতভাবে যাদের একটি পা এর দৈর্ঘ অন্য পা থেকে সামাণ্য একটু ছোট। একটি পা অন্যটি থেকে মাত্র এক বা আধা ইঞ্চি কম হ্ওয়ার কারণে একজন মানুষকে সারা জীবন পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন ধারণ করতে হত। কিন্তু বর্তমানে এমন রোগীদেরকে একটা সফল অপারেশনের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভবপর হচ্ছে। অঙ্গ বড় করার এই সার্জারি প্রথম শুরু হয় ১৯৫০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত একটি ছোট শহর সাইবেরিয়ার কুরগানে। পোলিশ বংশদ্ভোত একজন হাঁতুড়ে ডাক্তার গ্যাব্রিল ইলিজারভকে এই সার্জারির পথিকৃত মনে করা হয়। সে সময় ইলিজারভকে কুরগান শহরে জাদুকর বলা হত। তখন তিনি অলিম্পিক উচ্চ লাফে চ্যাম্পিয়ান হওয়া একজন নাগরিকের শল্য সার্জারির মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে আসেন। ইলিজারভ উদ্ভাবন করেন যে সঠিক অবস্থায় মানব দেহের নতুন হাড় তৈরী করার ক্ষমতা রয়েছে। 

 

যুগ বদলেছে। মানুষ এখন নিজেকে আরো সুন্দর করার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। মানুষ জন্মগতভাবে প্রাপ্ত উচ্চতা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তাই নানান রকম ঝুঁকি আছে জেনেও নিজের খর্বাকৃতির কলঙ্ক ঘোচানোর জন্য সেচ্ছায় ছুড়ির নিচে বসছে।  এই ধরণের সার্জারি পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশেই করা হয়। আঠার থেকে পঁচিশ বছরের প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকদের মাঝে এ ধরণের সার্জারির ঝোঁক বেশি হয়ে থাকে। কারণ এ বয়স পর্যন্ত একজন মানুষের হাড়ের গঠন বৃদ্ধি পায়। 

‌দীর্ঘ দেহী হওয়ার সার্জা‌রি যেসব দে‌শে করা হয় ও খরচ:

আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অঙ্গ বর্ধিতকরন সার্জারিতে আশি থেকে পঁচাশি হাজার ডলার খরচ হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাত লক্ষ পয়ষট্টি হাজারের মত। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এ ধরণের সার্জারি করার জন্য রাশিয়ায় যায়। রাশিয়াতে অঙ্গ দীর্ঘ করার এরকম সার্জারিতে খরচ হয় মাত্র ১৬,০০০ ডলার। ভারতের হায়দ্রাবাদ ও দিল্লীর কয়েকটি হাসপাতালে মাত্র বিশ থেকে পঁচিশ হাজার ডলারের মধ্যে এরকম সার্জারি করা যায়। খুব সম্প্রতি বাংলাদেশেও এ ধরণের সার্জারি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, স্পেন, ইতালি, ভারত ও রাশিয়া এ ধরণের অপারেশনে এগিয়ে রয়েছে।

ছবি: গুগল  

No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)