AIBB হ্যান্ড নোট- আর্থিক সেবায় হিসাব বিজ্ঞান:
আই এফআরএস ও বিএফআরএস:
IFRS এর পূর্ণরূপ হল International Financial Reporting Standard বা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান। IFRS হল হিসাব মানের একটি সেট যা নিয়ন্ত্রণ করে যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরনের লেনদেন এবং ঘটনাগুলি আর্থিক বিবৃতি হিসাবে রিপোর্ট করা উচিত। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (IASB) এগুলি তৈরি করেছে এবং বর্তমানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করছে।আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আর্থিক বিবরণীকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক হিসাবমান কমিটি (IASC) গঠন করা হয়। এ কমিটি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের জন্য কিছু মান তৈরী করে। পরবর্তীতে গঠনকৃত International Accounting Standard Board আরো পরিমার্জিত আকারে আর্থিক প্রতিবেদনকে পৃথিবীব্যাপি এক ও অভিন্ন রূপরেখায় প্রণয়ণের জন্য আন্তর্জাতিক হিসাবমান (INTERNATIONAL Accounting Standard) তৈরী করে। আন্তর্জাতিক হিসাবের এই মানকে বর্তমানে IFRS বলা হয়।
বাংলাদেশের The Institute of Chartered Accountants of Bangladesh –ICAB কর্তৃক বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য যে সকল আন্তর্জাতিক হিসাবমান গ্রহণ করা হয়েছে Bangladesh Financial Reporting Standard- BFRS বলে।
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (GAAP)
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে এমন কতগুলো মৌলিক বা সতঃসিদ্ধ সত্যকে বুঝায় যেগুলো হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়। সঃতসিদ্ধ সত্য বলতে এমন সত্যকে বুঝায় যার কোন প্রমা্রনর প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ নিজেই নিজের সত্যতা প্রমান করতে পারে। মূলত সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে হিসাব সংক্রান্ত কিছু ধারণা এবং এর প্রয়োগকে বুঝায়। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক হিসাবমান কমিটি বা IASC (বর্তমানে IASB নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিসাব বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দর্শন ও প্রওয়গ রীতি নির্দেশক ধারণা ও প্রথাসমূহকে পৃথকভাবে ববেচনা না করে সবগুলোকে একত্রে হিসাব নীতি (Accounting Principles) বলে গণ্য করা হয়। যেগুলো সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় হিসাব সংগঠন Financial Accounting Standard Board of USA এই নীতিগুলোর প্রতিষ্ঠাতা যা বিশ্বের সকল হিসাব বিজ্ঞানীগন মেনে চলেন।
নিমজ্জিত ব্যয় (Sunk Cost):
যে ব্যয় অতীতে সংঘটিত হয়েছে এবং উদ্ধারযোগ্য নয় তাকে ডুবন্ত বা নিমজ্জিত ব্যয় বলে। অর্থাৎ অতীতে ব্যয় করা হয়েছে এমন ব্যয়কে ডুবন্ত বা নিমজ্জিত ব্যয় বলে। Gerrison & Noreen এর ভাষায়, নিমজ্জিত ব্যয় হলো এমন একটি ব্যয় যা পূর্বেই ব্যয়িত হয়েছে এবং যা বর্তমান অথবা ভবিষ্যতের কোনো সিদ্ধান্ত দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব নয়। যেমন: একটি যন্ত্রপাতি ১,৫০,০০০ টাকায় ক্রয় করা হয়েছিল। যার ভগ্নাবশেষ মূল্য হলো ৩০,০০০ টাকা, ডুবন্ত বা চলতি ব্যয় হবে (১,৫০,০০০ -৩০,০০০) =১,২০,০০০ টাকা। সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে এ ব্যয়কে অপ্রাসঙ্গিক হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে ডুবন্ত বা নিমজ্জিত ব্যয়ের যেটুকু উদ্ধারযোগ্য তা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
গবাক্ষ-সজ্জাঃ অথবা, হিসাব বহিতে অপতৎপরতা (cooking the books)
সাধারণ অর্থে গবাক্ষ সজ্জা বলতে বুঝায় কোনো জিনিস সম্পর্কে আড়ম্বর প্রদর্শন। উদ্বৃত্তপত্র সম্পর্কে এই কথাটি ব্যবহার করার অর্থ হলো উদ্বৃত্তপত্রের অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি ও দায়ের দফাগুলো এরূপভাবে দেখানো যাতে উদ্বৃত্তপত্রের কারবারের আর্থিক অবস্থা প্রকৃত অবস্থা অপেক্ষা ব্যবসায়ের জন্য অধিক অনুকূল দেখানো যায়। সহজে বলা যায় যে, কারবারের প্রকৃত অবস্থাকে প্রকাশ না করে ভিন্ন এক অবস্থা প্রকাশ করার চাতুর্য বা কৌশলকে গবাক্ষ-সজ্জা বলে। বিভিন্ন ধরণের কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ড কতিপয় কারণে আর্থিক অবস্থার গবাক্ষ সজ্জা করে থাকে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিয়োগকারীদের/শেয়ারহোল্ডারদের কাছে তুলে ধরতে চায় যে ব্যবসাটি ভালো করছে এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক তথ্য তাদের কাছে আকর্ষণীয় দেখাতে গবাক্ষ সজ্জা করা হয় । যেহেতু কোম্পানির আর্থিক অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক , তাই এটি নতুন ব্যবসার সুযোগ, বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারহোল্ডারদের আনার ক্ষেত্রে গবাক্ষ-সজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের ব্যবসার সঠিক পরিচালনা জ্ঞান নেই উইন্ডো ড্রেসিং বিনিয়োগকারীদের এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের বিভ্রান্ত করতে পারে । ব্যবসায়ের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ও কঠোর তদারকি ব্যবস্থা রয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে, এটি করা হয় না কারণ মালিকরা কোম্পানির কর্মক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। CAMELS রেটিং : ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা বোঝানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বীকৃত মানদন্ড রয়েছে। এই মানদন্ডকে ক্যামেলস (CAMELS) রেটিং বলা হয়। এই ক্যামেলস রেটিং-এ মোট পাঁচটি পয়েন্ট আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম ও সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করার জন্য এই মানদন্ড ব্যবহার করেযার নাম ক্যামেলস রেটিং। CAMELS শব্দটি নিম্নোক্ত শব্দগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ☞ Capital Adequacy বা মূলধনের পর্যাপ্ততা; ☞ Asset Quality বা সম্পত্তির গুণগত বৈশিষ্ট্য; ☞ Management Ability বা ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা; ☞ Earning Capacity বা উপার্জন ক্ষমতা; ☞ Liquidity বা তারল্য অবস্থা; এবং ☞ Sensitivity বা স্পর্শকাতরতা। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ৬টি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে দেশের সকল ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি মুল্যায়ন করে। আয় স্বীকৃত নীতি : এই নীতির মূল কথা হল নির্দিষ্ট হিসাবকালে অর্জিত প্রকৃত আয় তা নগদ হোক বা বকেয়া তা সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের আয় খাতে প্রদর্শন করা হয়। অর্থাৎ কোন আয় অর্জিত হলে যদি উক্ত আয় আদায় যোগ্য হয় তবে উহা হিসাব ভুক্ত করার জন্য আদায়ের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। উহা আদায় যোগ্য হওয়ার সাথে সাথে হিসাবভুক্ত করা যাবে। যখন কোন পণ্য বা সেবা অর্থ বা অন্যকোন সম্পদের বিনিময়ে প্রদান করা হয় তখনই আয় নগদে আদায় বা প্রাপ্য বা আদায়যোগ্য হয়। আয়ের মধ্যে যেসব দফা অন্তর্ভূক্ত করা হয় তা হলো: 1. হিসাবকালে নগদে অর্জিত হয়েছে; 2. হিসাবকালে অর্জিত হয়েছে কিন্তু এখনও বকেয়া রয়েছে; 3. চলতি হিসাবকালের অর্থ বিগত হিসাবকালে নগদে পাওয়া গেছে; কিন্তু এমন কতগুলো ক্ষেত্র আছে যেখানে কয়েক বছর পর মোট আয় নির্ণয় করা হয়। যেমন: ঠিকাকার্য, কিস্তিতে বিক্রয় ইত্যাদি। এক্ষত্রে আয় সনাক্তকরণ কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে আয় সনাক্তকরণের জন্য সম্পাদনের শতকরা হার এবং কিস্তি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিস্তৃত আয় (comprehensive income): বিস্তৃত আয় হল কোনো মালিকের অবদান বা বন্টন অন্তর্ভুক্ত না করে একটি সময়ের জন্য ইক্যুইটিতে নেট পরিবর্তন। অন্যভাবে বলা যায়, একটি সময়ের মধ্যে সমস্ত রাজস্ব, লাভ, ব্যয় এবং ক্ষতির পাশাপাশি একটি হিসাবকালে অনাদায়ী লাভ এবং ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত করে নির্ণিত আয়। এই অর্থে, এটি বহিরাগত ব্যবহারকারীদের একটি সির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইক্যুইটি প্রভাবিত করে এমন সমস্ত হিসাবের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরে৷ কমপ্রিহেনসিভ আয়কে নীট আয়ের একটি সম্প্রসারিত সংস্করণ বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, নেট আয় কোনো অবাস্তব লাভ বা ক্ষতি বিবেচনা করে না কারণ সেগুলি আসলে এখনও ঘটেনি। এর মানে হল যে বিক্রয়ের জন্য উপলব্ধ সিকিউরিটিজের আয়ের বিবরণীতে নেট আয়ের পরিমাণে প্রতিফলিত হয় না। কিন্ত বিশদ আয় বিবরণী তৈরীর ক্ষেত্রে উল্লেখিত দফাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার কোম্পানি যদি অন্য একটি কোম্পানিতে স্টক বিনিয়োগ করে। এই লেনদেনটি কোম্পানির ব্যালেন্স শীটে ক্রয় মূল্যে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং স্টক বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত এই মূল্যে এগিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে বিস্তৃত আয় নির্ণয়ে এই স্টকের বিদ্যমান বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য করে এবং ব্যালেন্স শীটের ইক্যুইটি বিভাগে পার্থক্য (এই উদাহরণে লাভ) উল্লেখ করে এটিকে সংশোধন করবে। বিস্তৃত আয় বিবরণীতে নিম্নোক্ত খাতসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়: ১) অপ্রাপ্ত লাভ ও লোকসান ২) বিনিয়োগকৃত স্টকের বর্ধিত বাজার মূল্য ৩) পুনঃনির্ধারিত উদ্বৃত্ত অর্থের পরিবর্তন ৪) বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ের সমণ্বয় ৫) পেনশন বা অবসর পরবর্তী সুবিধা পরিকল্পনা ৬) পেনশন বা অবসর পরবর্তী সুবিধা পরিকল্পনা পূর্ব সেবা খরচ বা লাভ ইত্যাদি। সমন্বয় দাখিলা: কোন নিদিষ্ট হিসাবকালের সাথে সংশ্লিষ্ট বকেয়া আয়-ব্যয়, অগ্রিম আয়-ব্যয় ও বাদ পড়া দফাগুলো হিসাবভুক্ত করার জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমন্বয় দাখিলা বলে। **সমন্বয় দাখিলা দেয়া হয় হিসাবকাল শেষে। হিসাবকাল বলতে সাধারণত ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর সময়কে বুঝায়। মূলত একটি নিদিষ্ট হিসাবকালের সঠিক আর্থিক ফলাফল নির্ণয়ের জন্য সমন্বয় দাখিলা দেওয়া হয়। হিসাবকাল ধারনা, বকেয়াভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান, আয় স্বীকৃত নীতি, মিলকরণ নীতির উপর ভিত্তি করে সমন্বয় দাখিলা দেওয়া হয়ে থাকে। সমন্বয় দাখিলার প্রকারভেদ: প্রধান বা মৌলিক সমন্বয় দাখিলা ৪ প্রকার। যেমন: ১. বকেয়া খরচ / প্রদেয় খরচ (Accrued Expense / Expense Payable) ২. বকেয়া আয় / প্রাপ্য আয় ( Accrued Revenue / Revenue Receivable) ৩. অগ্রিম খরচ (Prepaid Expense) ৪. অগ্রিম আয় / অনুপার্জিত আয় ( Prepaid Revenue / Unearned Revenue) ব্যাসেল চুক্তি: ব্যাসেল চুক্তি হচ্ছে ব্যাংকিং তদারকি সম্পর্কিত ব্যাসেল কমিটি কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা ও সুপারিশসমুহ (ব্যাসেল ১, ব্যাসেল ২ এবং ব্যাসেল ৩) যেগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ব্যাংকের পুঁজির গুণগত মান এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। অর্থাৎ, ব্যাসেল চুক্তি হল ব্যাংকিং শিল্পে নিয়মকানুনের জন্য ব্যাসেল কমিটি কর্তৃক একগুচ্ছ প্রস্তাবিত নীতিমালা যা বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক পরিপালিত হয়।ব্যাসেল কমিটি হচ্ছে ব্যাংকিং তদারকি সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষ যা গ্রুপ অব টেন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের দ্বারা ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যাসেল কমিটির সদরদফতর ব্রাসেল্সের ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টে এবং এই কমিটি সাধারণত সেখানে সভা করে। সাধারনত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাসেল কমিটির সদস্য। ব্যাসেল কমিটি এখন পর্যন্ত ৩টি ব্যাংকিং পরিচালনা ও মূলধন সংরক্ষন সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যেগুলো হচ্ছেঃ • ব্যাসেল ১ (১৯৮৮) - ব্যাংকগুলির জন্য ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তার একটি সেট প্রকাশ করেছে। • ব্যাসেল ২ (২০০৪) - ব্যাঙ্কগুলির মুখোমুখি হওয়া আর্থিক ও কর্মক্ষম ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য কতটা মূলধনী ব্যাঙ্ক রাখা দরকার তা নিয়ন্ত্রণ করে এমন আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং মান সংশোধন করার উদ্দেশ্যে। • ব্যাসেল ৩ (২০১০) - ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি, উচ্চমানের তরল সম্পদের ধারণ এবং ব্যাঙ্ক লিভারেজ হ্রাসের মাধ্যমে ব্যাংকের মূলধন প্রয়োজনীয়তা জোরদার করার উদ্দেশ্যে। উদ্বর্তপত্র বহির্ভূত বিষয়াদি: উদ্বর্তপত্র বহির্ভূত বিষয়াদি হলো সেসব সম্পদ এবং দায় যা প্রতিষ্ঠানের উদ্বর্তপত্রে প্রদর্শিত হয় না। তবে এই সম্পদ এবং দায়বদ্ধতাগুলি কোন সংস্থার অন্তর্ভুক্ত যদিও তা সরাসরি কোন সংস্থার সাথে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। এ ধরণের বিষয়গুলোকে অফ ব্যালেন্স শিট ফাইনান্সিং নামেও অভিহিত করা হয়। যদিও উদ্বর্তপত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়না, তবুও এগুলো কোম্পানির সম্পদ এবং দায়। সাধারণত যে সমস্ত বিষয়ে কোম্পানি সরাসরি মালিকানাধীন নয় বা কোম্পানির সরাসরি বাধ্যবাধকতা থাকে না সে সকল বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোন ঋণকে জামানত হিসেবে রেখে তা বিনিয়োগ হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হয়, তখন এই সুরক্ষিত ঋণকে প্রায়ই ব্যাঙ্কের হিসাব বইয়ের বাইরে রাখা হয়। উল্লেখযোগ্য উদ্বর্তপত্র বহির্ভূত বিষয়াদি হলো: পরিচালন ইজারা, প্রাপ্য হিসাব, ব্যাংক গ্যারান্টি, লেটার অফ ক্রেডিট, ব্যাংক রেমিটেন্স, যৌথ উদ্যোগ, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি। নগদ ও বকেয়াভিত্তিক হিসাব (Cash vs Accrual basis Accounting system) :- বকেয়াভিত্তিক হিসাব : এ পদ্ধতি দু' তরফা দাখিলা পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গরূপ কারণ এ পদ্ধতিতে হিসাবকালের লেনদেনের ক্ষেত্রে আয়ের অধিকার জন্মের সাথে সাথে তা আয় বলে গণ্য হয়। এই আয় কখন পাওয়া যায় বা যাবে তা বিবেচ্য নয়। অনুরূপভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে দায় সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে তাকে হিসাবে গণ্য করা হয়। বস্তুত এই পদ্ধতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল মুনাফা সংক্রান্ত হিসাব এবং স্থিতিপত্র প্রস্তুতকালে হিসাবকালের প্রাপ্ত এবং প্রাপ্য ও প্রদত্ত এবং প্রদেয় ব্যয়সমূহ যথাযথভাবে হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মুনাফা এবং আর্থিক অবস্থা যথাযথভাবে হিসাবে প্রদর্শিত হবে। এ পদ্ধতিতে সকল সম্পত্তি আলাদা আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়। নগদভিত্তিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে কেবলমাত্র নগদ অর্থ প্রাপ্তি বা প্রদান সাপেক্ষেই লেনদেন হিসাবভুক্ত করা হয়। যে কোনো লেনদেনের বিপরীতে যখন নগদ অর্থ পাওয়া যায় বা নগদ অর্থ প্রদান করা হয় কেবলমাত্র তখনই লেনদেনটি হিসাবের বহিতে লিপিবন্ধ করা হয়। বাস্তবক্ষেত্রে নগদের পাশাপাশি বকেয়া আয় অথবা বায় সংঘটিত হলেও এ পদ্ধতিতে বকেয়া আয় অথবা ব্যয়কে হিসাবভুক্ত করা হয় না। ফলে নগদভিত্তিক ধারণায় প্রায়শঃই আর্থিক বিবরণী অসম্পূর্ন আছে। কেননা যে সকল আয় অর্জিত হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি, তা নগদ ভিত্তি পদ্ধতিতে হিসাবভুক্ত হয় না। যা আয়ের চিহ্নিতকরণ নীতির পরিপন্থী। আবার বকেয়া বা অগ্রিম ব্যয়সমূহ আয়ের বিপরীতে মিলকরণ করা হয় না, যা আয়ব্যয় সংযোগনীতি (Matching principle) অনুসারে আয়ের বিপক্ষে ব্যয়ের সঠিক লিখন করার পরিপন্থী। যা হিসাববিজ্ঞানের সর্বজন স্বীকৃত নীতিমালার (GAAP) পরিপন্থী। এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানে নগদ তহবিল ব্যতীত কোনো সম্পদ থাকে না। ধরা যাক, কোনো প্রতিষ্ঠানের ডিসেম্বর মাসের ভাড়া বাবদ বকেয়া রয়েছে ৩,০০০ টাকা। মোট প্রদত্ত ভাড়ার সাথে আরও ৩,০০০ বকেয়া যোগ করে মোট ভাড়া বাবদ ৩৩,০০০ + ৩,০০০ = ৩৬,০০০ টাকা হিসাবভুক্ত করতে হবে। রক্ষণশীলতার নীতি (Conservatism principle): হিসাববিজ্ঞানের রক্ষণশীল নীতি নির্দেশ করে যখন কোন ব্যয় বা দায় সৃষ্টি হয় তা অনতিবিলম্বে হিসাবভুক্ত করতে হবে এবং যখন কোন আয় বা সম্পদ সৃষ্টি হয় তা আদায়যোগ্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হিসাবভুক্ত করতে হবে। যখন কোন একটি লেনদেন হিসাবভুক্ত করার ক্ষেত্রে দুটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প থাকবে তখন রক্ষণশীলতার নীতি অবলম্ভন করে হিসাব রক্ষক এমন বিকল্প পদ্ধতির অনুসরন করবেন যাতে করে অপেক্ষাকৃত কম মুনাফা প্রদর্শিত হয়। রক্ষণশীলতা নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো কারবারের মূলধনের সুরক্ষা। কারণ প্রদর্শিত আয় আদায় না হলে এবং উক্ত আয় প্রদর্শনের কারণে সৃষ্ট মুনাফা বন্টন হয়ে গেলে কারবারের মূলধন হ্রাস পাবে। অপরদিকে উক্ত আয় বর্তমান বছরে না দেখানোর কারণে মুনাফা কিছু কম প্রদর্শিত হলেও মূলধন হ্রাস পাওয়ার তথা কারবারের ভিত দূর্বল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে রক্ষণশীলতার নীতি অনুসরণ করে যেখানে কম মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে কম মুনাফা প্রদার্শন করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, আয় বা সম্পদের আদায়যোগ্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সত্বেও রক্ষণশীলতার নীতির ভিত্তিতে উক্ত আয় প্রদর্শন না করার সুযোগ নেই। এ নীতি অনুসারে শুধুমাত্র তখনই কম মুনাফা দেখানোর সুযোগ আছে যখন অপেক্ষাকৃত কম মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুযোগ ব্যয় (Opportunity cost) : বিকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে সুযোগ সুবিধা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাকে সুযোগ ব্যয় বলে। ব্যবস্থাপকের হাতে যখন একাধিক বিকল্প থাকে তখন তিনি একটি বিকল্প গ্রহণ করে অন্যান্য বিকল্পগুলোকে বাতিল করেন। যেই বিকল্পটি তিনি গ্রহণ করেন সেই গৃহীত বিকল্পের একটি সুযোগ ব্যয়ের সৃষ্টি হবে। বাতিল করা বিকল্পের সর্বাধিক মূল্যটাই গৃহীত বিকল্পের সুযোগ ব্যয় । মনে করি, কোনো একটি বস্ত্র প্রতিষ্ঠান যদি সুতা বিক্রয় করে তবে সে দশ লক্ষ টাকা মুনাফা করতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যদি সুতা বিক্রয় না করে কাপড় তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাহলে কাপড় তৈরির সুযোগ ব্যয় হবে দশ লক্ষ টাকা। সুযোগ ব্যয় যেহেতু নগদ খরচ নয়, সেহেতু এটাকে হিসাবে লিপিবদ্ধ করার প্রশ্নও ওঠে না। বিকল্প মূল্যায়নের জন্য সুযোগ ব্যয়ের বিশ্লেষণ খুবই প্রয়োজন। সুযোগ ব্যয় কখনো রাজস্ব হিসাবে আবার কখনো লাভ হিসাবে প্রকাশ করা হয়। সহজ কথায় বলা যায়, বর্জিত বিকল্পের মূল্যই গৃহীত বিকল্পের সুযোগ ব্যয় । 3/10, n/30 : 3/10, n/30 এর অর্থ হলো, চালানের তারিখ হতে ১০ দিনের মধ্যে বিক্রয় মূল্য পরিশোধ করা হলে মোট চালান মূল্যের উপর ৩% বাট্টা মঞ্জর করা হবে। n/30 এর অর্থ হল, চালানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রয় মূল্য প্রদেয়। 3/10 হলো বাট্টা মঞ্জুরীর সময় এবং n/30 হল বিক্রয় মূল্য পরিশোধের সময়। 3/eom, n/60 এর অর্থ হল চালানী মাসের শেষ তারিখের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করলে মোট চালানী মূল্যের উপর ৩% হারে বাট্টা প্রদান করা হবে। n/60 এর অর্থ হল চালানে উল্লেখিত তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে মোট চালানী মূল্য পরিশোধ করতে হবে। স্থির ব্যয় ও পরিবর্তনশীল ব্যয় (Fixed cost & Variable cost: স্থির ব্যয় (Fixed cost) : যে ব্যয় কোনো নির্দিষ্ট র্কাযস্তর পর্যন্ত উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয় না তাকে স্থির ব্যয় বলে। গ্যারিসন ও নরেন-এর ভাষায়, স্থায়ী ব্যয় হলো এমন একটি ব্যয় যা একটি প্রাসঙ্গিক সীমার মধ্যে উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তিত হলেও মোট পরিমাণ স্থির থাকে। (A fixed cost is a cost that remains constant, in fixed, regardless of changes in the level of activity within the relevant range). Chartered Institute of Management Accountants (CIMA), London - এর মতে “উৎপাদনের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি হবার ফলেও যে সকল ব্যয় স্থিতিশীল থাকে তাকে স্থির বা স্থায়ী ব্যয় বলে। স্থায়ী ব্যয়ের অধিকাংশই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। যেমন: যন্ত্রপাতির অবচয়, উৎপাদন তদারককারী ও ব্যস্থাপকের বেতন ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে একক প্রতি স্থায়ী ব্যয় হ্রাস পায় এবং উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাসে একক প্রতি স্থায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পায়, কেননা উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হয় আবার উৎপাদন হ্রাস পেলে উৎপাদন ক্ষমতা অলস পড়ে থাকে। পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable cost) : যে সকল ব্যয় উৎপাদনের পরিমাণের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রত্যক্ষভাবে এবং সমানুপাতিক হারে পরিবর্তিত হয় তাদেরকে পরিবর্তনশীল ব্যয় বলে। Chartered Institute of Management Accountants (CIMA), London Gi g‡Z, Variable cost is a cost which in aggregate trends to vary in direct proportion to change in the volume of output or sales. মোট কথা হলো, পরিবর্তনশীল ব্যয় এমন একটি ব্যয়, যার মোট পরিমাণ কার্যমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে সরাসরি আনুপাতিক হারে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে এ ব্যয়ের পরিবর্তন ঘটলেও একক প্রতি পরিবর্তনশীল ব্যয় স্থির বা অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক একক দ্রব্য উৎপাদন করতে যদি ৫ কেজি কাঁচামাল লাগে তবে ১০ একক দ্রব্য উৎপাদন করতে ৫০ কেজি কাঁচামাল লাগবে। এখানে একক প্রতি কাঁচামাল ব্যয় একই থাকবে। হিসাব বিজ্ঞানের নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা : নৈতিকতা হলো একটি মান যা হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলির সততা বা অসততা, ঠিক বা বেঠিক, স্বচ্ছতা বা অস্বচ্ছতা, বৈধ বা অবৈধ বিচার করে তাকে হিসাব বিজ্ঞানের নৈতিকতা বলে। হিসাব বিজ্ঞানের নৈতিকতা হল বিভিন্ন হিসাব সংস্থার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নির্দেশিকা যা হিসাবরক্ষকদের আর্থিক তথ্যের অপব্যবহার থেকে বিরত রাখে। হিসাব বিজ্ঞানের নীতিশাস্ত্রের মধ্যে মূল্যবোধের কতগুলো মানদন্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা প্রত্যেক হিসাবরক্ষককে পরিপালন করতে হয়, যেমন যোগ্যতা এবং সততা। একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পরিচালক এবং বা প্রধান হিসাব কর্মকর্তাকে শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এবং আর্থিক তথ্য পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাশিত নিরীক্ষার মানগুলির বিশদ বিবরণ দিতে হয় । নিরীক্ষকগন অননুমোদিত পক্ষের কাছে কোনো আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করতে অ্যাকাউন্টিং নৈতিকতার দ্বারা দায়বদ্ধ। আর্থিক তথ্যের অপব্যবহার রোধ করতে তারা নিরীক্ষায় নিষ্ঠা ও সততা প্রয়োগ করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। হিসাব চক্র (Accounting cycle): যে চক্রের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ আবর্তিত হয়, তাকে হিসাবচক্র বলে। চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা (Going concern concept) অনুসারে একটি কারবার অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে বিশ্বাস করা হয়। ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা জানার জন্য এ অনির্দিষ্ট সময়কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়কারে ভাগ করা হয়। এ সময়ে সকল হিসাবকাল একটি সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবর্তিত হয়। আবর্তিত এ ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হিসাব চক্র । নির্দিষ্ট হিসাব কাল শেষে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীর ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় হিসাব র্কাযক্রম সম্পন্ন করতে হয়। যেমন- • লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ; • শ্রেণীবদ্ধকরণ; • সংক্ষিপ্তকরণ; • চুড়ান্ত হিসাব প্রণয়ন; ও • ফলাফল বিশ্লেষণ। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যতদিন সচল থাকবে, ততদিন হিসাবের এই সুনির্দিষ্ট র্কাযক্রম চলতে থাকবে। হিসাবের এই সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যেভাবে র্পযায়ক্রমে আবর্তিত হয় তাকে হিসাবচক্র বলে। Work Sheet বা কার্য বিবরণী: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরুপন করার জন্য ব্যবসায়ের হিসাবভুক্ত এবং হিসাব থেকে বাদ পড়া বা অধিক হিসবভুক্ত লেনদেনগুলোকে একত্রে একটি তালিকায় বা ছকে উপস্থাপন করে ব্যবসায়ের যে আয় বিবরণী এবং বৈষয়িক বিবরণী তৈরী করা হয় উক্ত তালিকাকে Work Sheet বা কার্য বিবরণী বলে। Work Sheet ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন স্থায়ী হিসাব রক্ষণ নয়।এটি ব্যবসায়ের কোন জার্ণাল বা সাধারণ খতিয়ানের অংশ নয়। Work Sheet তৈরী করা হয় হিসাবের সমণ্বয়গুলোকে সহজে উপস্থাপন এবং আর্থিক বিবরণী তৈরী করার সুবিধার্থে । বৃহৎ আয়তনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেখানে অধিক মাত্রায় আর্থিক লেনদেন সংগঠিত হয় এবং অসংখ্য সমমণ্বয়ের প্রয়োজন পড়ে Work Sheet মূলত সে সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীত দাখিলা (Reversing entries) :- হিসাব চক্রের শেষ ধাপে পরবর্তী হিসাবকালের লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধ করার সুবিধার্থে চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত ও সকল হিসাব বই বন্ধ করা হয়। নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে যে সমন্বয় দাখিলা দেওয়া হয়, পরবর্তী হিসাবকালের প্রথম বা পহেলা তারিখে তার বিপরীত দাখিলা দেওয়া হয়। হিসাব প্রক্রিয়ার এটি একটি ঐচ্ছিক ধাপ। কোনো প্রতিষ্ঠান তার হিসাব কোড সংখ্যা কমানোর জন্য বিশেষত কম্পিউটারাইজ হিসাব পদ্ধতিতে বিপরীত দাখিলা দিয়ে থাকে। সাধারণত, নিম্নবর্ণিত সমন্বয় দাখিলার ক্ষেত্রে বিপরীত দাখিলা দেখানো যেতে পারে। (i) প্রদেয় বা বকেয়া খরচ এবং প্রাপ্য বা বকেয়া আয়ের ক্ষেত্রে। (ii) অগ্রিম প্রদত্ত খরচ যা শুরুতেই খরচ হিসাবে লিখা হয়েছে এবং অগ্রিম প্রাপ্ত আয় যা প্রাথমিকভাবে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। সুতরাং কোনো আর্থিক সময়কাল বা কোনো আর্থিক বছর শেষে নগদ টাকায় সম্পাদিত মুনাফা জাতীয় আয়ব্যয়ের বকেয়া বা অগ্রীমের যে সমন্বয় জাবেদা হয় পরবর্তী বছরের শুরুতে উক্ত আর্থিক আয়বায়ের বকেয়া অগ্রীমের সমন্বয় জাবেদার যে বিপরীত জাবেদা বা দাখিলা রেকর্ড করা হয় তাকে বিপরীত দাখিলা বলে। সামঞ্জস্যশীলতা বা ধারাবাহিকতার নীতি (Consistency Principle) সামঞ্জস্যশীলতার নীতি নির্দেশ করে যখন কোন প্রতিষ্ঠান কোন একটি হিসাব নীতি গ্রহণ করবে বা কোন একটি হিসাব পদ্ধতির প্রয়োগ করবে ভবিষ্যতেও একই হিসাব নীতি বা পদ্ধতির প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ প্রত্যেক বছর ধারাবাহিকভাবে একই নীতির প্রয়োগ করবে। একেক বছর একেক নীতি বা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারবে না। সামঞ্জস্যশীলতা নীতি প্রয়োগ করা হলে এক বছরের আর্থিক বিবরণী অন্য বছরের সাথে তুলনা যোগ্য হয়। এককেক বছর একেক নীতি বা পদ্ধতির প্রয়োগ করা হলে বিভিন্ন বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যেও সমতা থাকে না বিধায় একেক বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যে তুলনা করা যায় না। বাট্টাকৃত বিলের উপর রেয়াত (Rebate on Bills Discounted): বাট্টাকৃত বিলের উপর রেয়াত বলতে অগ্রিম গৃহীত বাট্টা, মেয়াদ অনুত্তীর্ণ বাট্টা, বাট্টা প্রাপ্ত কিন্তু অর্জিত হয়নি ইত্যাদি বুঝায়। এই ধরণের রেয়াতকে অগ্রিম গৃহীত সুদের মতই গণ্য করা হয়। আদেষ্টা বা বিলের ধারককে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের পূর্বেই বিলের মূল্য পরিশোধে উৎসাহিত করতে আদিষ্ট বা দেনাদার এক ধরণের বাট্টা দিয়ে থাকে। এই বাট্টা বিলের রেয়াত নামে পরিচিত। তাই কোন বিলের পরিশোধের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণর তারিখের নির্দিষ্ট সুদের হারের ভিত্তিতে বাট্টাকৃত বিলের উপর রেয়াত হিসাব করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন গ্রাহক ১ লা মার্চ ২০২১ তারিখে ৩0,000 টাকা মূল্যের একটি বিল ছাড় করে ১২% হারে ৩ মাসের জন্য, এটি নিম্নরূপ গণনা করা হবে: ব্যাংক ৯২ দিনের জন্য ১২% হারে বাট্টা অর্জন করবে অর্থাৎ = টাকা 30,000 *12/100 * 92/365 = ৯০৭ টাকা । তবে এই বাট্টার পরিমাণ মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসের জন্য। যেহেতু প্রতি বছর ৩১ শে মার্চ হিসাব তৈরি করা হয়, এপ্রিল এবং মে মাসের জন্য ৬১ দিনের (৩০+৩১) জন্য প্রাপ্ত বাট্টা আসলে অর্জিত হয় না। এভাবে, ৬১ দিনের ডিসকাউন্ট অর্থাৎ, ৬০১ টাকা কে বাট্টাকৃত বিলের উপর রেয়াত ধরা হয়। সুতরাং, প্রকৃত আয় ৩০৬ টাকা (অর্থাৎ, 907 – 601 টাকা)। আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি (Matching Principle) হিসাব বিজ্ঞানে আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি একটি গুরুত্বপূর্ন নীতি। হিসাবকাল ধারণা অনুসারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বা সময় কালের জন্য হিসাব প্রস্তুত করে থাকে। আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি অনুসারে প্রতিটি হিসাবকালের আয়ের বিপরীতে সে হিসাবকালের ব্যয় হিসাবভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ এক হিসাব কালের ব্যয় অন্য হিসাবকালের আয়ের বিপরীতে দেখানো যাবে না। কেননা হিসব বিবরণী প্রস্তুতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কারবারের ব্যবসায়িক ফলাফল নিরূপণ করা। আয়ের বিপরীতে সংগঠিত ব্যয় দেখানো না হলে সঠিক ফলাফল নিরূপণ করা যাবে না। প্রতিটি আয় এবং ব্যয় যদি সংশ্লিষ্ট হিসাব কালের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শন করা হয়, সে ক্ষেত্রেই কেবল সম্ভব ব্যয় সমূহ সংশ্লিষ্ট আয়ের বিপরীতে প্রদর্শন করা এবং সঠিক আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করা। মালিকানা স্বত্ব ========== মালিকানা স্বত্ব : ব্যবসায় সম্পত্তির বিপরীতে মালিকের/ শেয়ারহোল্ডার/ অংশীদারদের দাবিকে মালিকের মূলধন বা মালিকানা স্বত্ব বলা হয়। অর্থাৎ, ব্যবসায়ের তৃতীয় পক্ষের দাবি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই মালিকানা স্বত্ব। এটি ব্যবসায়ের অন্তর্দায়। স্বত্বাধিকার =. মালিকের বিনিয়োগ + ব্যবসায়ের আয় - ব্যবসায়ের খরচ - মালিকের উত্তোলন । অথবা, মালিকানা স্বত্ব = সাধারণ শেয়ার + অগ্রাধিকার শেয়ার + শেয়ার অধিহার + জমাকৃত মুনাফা + মূলধন সঞ্চিতি + সাধারণ সঞ্চিতি + অন্যান্য সঞ্চিতি বা তহবিল+নীট লাভ- উত্তোলন- নিট ক্ষতি- সমন্বয় সংক্রান্ত উত্তোলনের সুদ পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতির কারণে কোন লেন-দেনের বা লেন-দেনসমূহের সঠিক হিসাব খাত চুড়ান্ত করা না গেলে রেওয়ামিল সাময়িকভাবে মেলানোর জন্য অথবা লেনদেনটি সাময়কিভাবে হিসাবভুক্ত করার জন্য যে হিসাব খোলা হয় তাকে অনিশ্চিত হিসাব (Suspense Account) বলে। সাধারণত দুইটি ক্ষেত্রে Suspense Account বা অনিশ্চিত হিসাব খোলা হয়ঃ ১. রেওয়ামিল বা ট্রায়াল ব্যালেন্স না মিললেঃ রেওয়ামিলের দুটি পক্ষ ডেবিট ও ক্রেডিট সমান না হলে অনিশ্চিত হিসাব খোলা যায়। এক্ষেত্রে রেওয়ামিলে ডেবিট কম থাকলে যত টাকা কম থাকবে অনিশ্চিত হিসাবের ব্যালেন্স হবে তত টাকা ডেবিট। ক্রেডিটের ক্ষেত্রেও একইভাবে হিসাব লিপিবদ্ধ করা যায়। .তবে এ পদ্ধতি আধুনিক ব্যবসায়ে ব্যবহার করা যায়না। বর্তমানে এটি একটি অকার্যকর পদ্ধতি। ২. হিসাবের খাত সাময়িক অজানা থাকলেঃ অনিশ্চিত হিসাব খোলার এ পদ্ধতি হিসাব মান অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য। একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের বাবদ ২ লক্ষ টাকা অগ্রীম উত্তোলণ করা হল। এই টাকা দিয়ে যাতায়াত খরচ, খাবার খরচ, ডেকোরেশন খরচ প্রদান এবং টেবিল ও কিছু ফার্নিচার কেনা হবে। যেহেতু এখানে খরচের খাত ৩টি এবং স্থায়ী সম্পদের খাত ১টি তাই কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে তা না জানা পর্যন্ত সঠিক খাতে লিপিবদ্ধ করা যাবে না। এমতাবস্থায় সাময়িকভাবে অনিশ্চিত হিসাব ডেবিট করা যাবে। পরবর্তীতে হিসাবের খাত জানার সাথে সাথে অনিশ্চিত হিসাব ক্রেডিট করে সংশ্লিষ্ট খরচ ও সম্পদের খাতে ব্যায়িত অর্থ ডেবিট করতে হবে। সমাপনী দাখিলা : হিসাব বইয়ের কোন একটি হিসাব বন্ধ করার জন্য যে দাখিলা প্রয়োজন হয় তাকে সমাপনী দাখিলা বলে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয় বাচক হিসাব চলতি হিসাব বছরের সাথে সম্পৃক্ত । এ ধরণের হিসাবের উপযোগ সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরেই শেষ হয়ে যায়। এ সমস্ত হিসাব আয় বিবরণীতে প্রদর্শিত হয় এবং এর প্রভাব স্বল্প মেয়াদী। তাই এ ধরণের হিসাব চলতি হিসাব বছরেই বন্ধ করে দেয়া হয়। আয় ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য যে জাবেদা এন্টির মাধ্যমে আয় বিরণীতে স্থানান্তর করা হয় তাকে সমাপনী দাখিলা বলে। সমাপননী দাখিলা প্রণয়নের পর এই হিসাবের জের শুন্য হয়ে যায়। অবচয় ও নিঃশেষকরণ (Depreciation & Depletion): কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পত্তি ব্যবহার, কালের আবর্তন, অপ্রচলন, সরাসরি ভোগ, বাজার মূল্যের স্থায়ী পতন ইত্যাদি দৃশ্যমান বা অদৃশ্য কারনে সম্পত্তির গুণ, পরিমাণ ও মূল্যের যে হ্রাস ঘটে তাকে অবচয় বলা হয়। অর্থাৎ সময়ের বিবর্তন ও ব্যবহার জনিত কারণে স্থায়ী সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পেলে হ্রাসকৃত মূল্যটুকুকে অবচয় বলে। সুতরাং অবচিতির ফলে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে সম্পত্তির আসল মূল্য কমতে থাকে । এ নির্দিষ্ট হারকে অবচয় হার বলে। পরবর্তী বছর এ হ্রাসপ্রাপ্ত সম্পওির মূল্য অবচয় নির্ণয়ের জন্য আসল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে অবচয়কে একটি বণ্টন প্রক্রিয়া বলা হয়। সম্পত্তির মূল্য হতে ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে সম্পত্তির কার্যকর জীবনকালের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হল অবচয়। অন্যান্য খরচের মত অবচয়ও একটি খরচ এবং এটি প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান হিসাবে ডেবিট করা হয়। * হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় যে সকল সম্পত্তি অবাস্তব,ধরা,ছোঁয়া বা দেখা যায় না,সময়ের ভিত্তিতে ঐ সকল সম্পত্তির মূল্য কমিয়ে দেওয়াকে অবলোপন বলে। যেমন: সুনাম, প্রাথমিক খরচ, গবেষণা ব্যয়। এটি প্রায় অবচয়ের মতো। পার্থক্য হলো অবচয় দৃশ্যমান সম্পদের উপর ধরা হয়,আর অবলোপন অদৃশ্যমান ও অবাস্তব সম্পদের উপর ধরা হয়। দেনাদারের নিকট হতে সন্দেহজনক পাওনার সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য মুনাফার কিছু অংশ সরিয়ে রাখাকে কুঋণ অবলোপন বলে।এটি একটি নিশ্চিত ক্ষতি।কুঋণ অবলোপন আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে প্রাপ্য হিসাব থেকে বাদ যায়। প্রাকৃতিক সম্পদ বা ক্ষয়শীল সম্পদের যে অংশ প্রতি বছর ব্যবহার করে অবলোপন করা হয় তাকে নিশেঃষকরণ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অবক্ষয় বলতে ভুমি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন কাঠ, খনিজ এবং তেল আহরণের ব্যয় নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত একটি সঞ্চিত হিসাব পদ্ধতিকে বোঝায়। অবচয়ের মতোই অবক্ষয় একটি অনগদ ব্যয়। এটি পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত আয়ের উপর খরচ ধার্যর মাধ্যমে কোন সম্পদ আহরণে উৎপাদন ব্যয় কমায়। ক্রমাগত ব্যবহারের কারণে সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায় বলে এক্ষেত্রে কোন ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচনা করা হয় না। অস্পর্শনীয় সম্পদ (Intangible Assets): যেসব সম্পত্তি দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না বা যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই কিন্তু আর্থিক অবস্থার বিবরণী সম্পত্তি হিসাবে দেখানো হয় তাকে অদৃশ্য বা অস্পর্শনীয় সম্পত্তি বলে। যেমন-সুনাম, প্যাটেন্ট স্বত্ব, ট্রেড মার্ক, মুদ্রণ স্বত্ব, ব্রান্ড নাম, লিজ হোল্ডার, ফ্রেঞ্জাইজ ইত্যাদি। অদৃশ্য সম্পত্তির মধ্যে অধিকাংশ সম্পত্তির আয়ুস্কাল দীর্ঘ মেয়াদি হয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসব সম্পত্তি থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। তবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু চলতি সম্পত্তি থাকে যার কোনো বাহ্যিক অবস্থান বা অস্তিত্ব নেই কিন্তু তাকে অদৃশ্য সম্পত্তি বলা যাবে না। যেমনবিবিধ দেনাদার, অগ্রিম খরচ। আর্থিক সেবায় হিসাব বিজ্ঞান: সংক্ষিপ্ত টীকা - দ্বিতীয় অংশ (২০১৫-২০২২) প্রবণতা বিশ্লেষণ (Trend Analysis): প্রবণতা বিশ্লেষণ হল কোম্পানির আর্থিক বিবৃতি তুলনা করার মাধ্যমে বাজারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করা বা অতীতের কর্মক্ষমতার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের বিশ্লেষণ, এবং এটি বিশ্লেষণকৃত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বছরের আর্থিক বিবরণীর বিভিন্ন দফাসমূহ পাশাপাশি সাজানো হয়। পূর্বের একটি সাধারণ বছরকে ভিত্তি বছর ধরে প্রতি বছরেরর উৎপাদনের পরিবর্তন হার তুলে ধরা হয়।ব্যবসায় সঙ্কোচন বা সম্প্রসারণের জন্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রবণতা বিশ্লেষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আর্থিক চাপ/ঝুঁকি পরীক্ষা (Stress Testing): স্ট্রেস টেস্টিং হল একটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ কৌশল যা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আর্থিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগ পোর্টফোলিওগুলির স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের পরীক্ষা প্রথাগতভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং সম্পদের পর্যাপ্ততা পরিমাপ করতে এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ও নিয়ন্ত্রণ মূল্যায়ন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। একটি কোম্পানির অর্থনৈতিক দুর্যাগ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট মূলধন, শক্তিশালী সম্পদ এবং কার্যকর পরিকল্পনা রয়েছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য স্ট্রেস পরীক্ষাগুলি কার্যকর বিশ্লেষণধর্মী হাতিয়ার হতে পারে। প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার প্রেক্ষাপট হিসেবে ঐতিহাসিক, অনুমানমূলক, বা পুণঃ পুণঃ সংঘটিত ঘটনাগুলো ব্যবহার করা যায়। ফলাফলসমূহ একটি প্রতিষ্ঠানকে তার শক্তি, দুর্বলতা এবং সুযোগের ক্ষেত্রগুলি আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ডেবিট নোট ও ক্রেডিট নোট: ধারে ক্রয়কৃত পন্য ফেরত প্রদানের সময় মালের সাথে পণ্য ফেরতের কারণ, পণ্যের পরিমাণ ও মূ্ল্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ লিখে ক্রেতা বিক্রেতার কাছে যে পত্র পাঠায় তাকে ডেবিট নোট বলে। অনেক সময় ক্রেতা ক্রয়কৃত মালের চালানের ভুল সংশোধন করে অথবা নিম্নমানের মালের জন্য মূল্যর উপর রেয়াত চেয়ে বিক্রেতার নিকট ডেবিট নোট পাঠায়। বিক্রিত পণ্য কোন কারণে ক্রেতা বিক্রেতার নিকট ফেরত পাঠালে বিক্রেতা উক্ত মালের বিবরণ, পরিমাণ, দর ও মূল্য লিখে যে বিবরণী ক্রেতার নিকট পাঠায় তাকে ক্রেডিট নোট বলে। মূলত এ পত্রের মাধ্যমে বিক্রেতা ক্রেতাকে জানিয়ে দেয় যে তাদের হিসাবখাত ক্রেডিট করা হয়েছে। বিক্রয় ফেরতের ক্ষেত্রে ক্রেডিট নোট ব্যবহৃত হয়। কার্যকরী মূলধন (Working Capital): মূলধনের যে অংশ প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে চলতি কার্যকরী মূলধন বলে। যে সব সম্পদ নগদ টাকা থেকে কাঁচামালে, কাঁচামাল থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যে, উৎপাদিত পণ্য থেকে প্রাপ্য দেনার এবং পরিশেষে প্রাপ্য দেনা থেকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত হয়ে ব্যবসায়ের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে সচল রাখে তাকে কার্যকরী মূলধন বলে। কোন প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য যেসব সল্পমেয়াদি সম্পদাদি, নগদ অর্থ, সল্পমেয়াদি সিকিউরিটিজ, মজুদ মাল ও প্রাপ্য বিল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় তাকে সম্মিলিতভাবে কার্যকরী মূলধন বলে। কার্যকরী মূলধন স্বল্পমেয়াদী। এ ধরণের মূলধরণের জীবনকাল মোটামুটি এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কার্যকরী মূলধনের কাম্য ব্যবহার ও সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করা যায়। বিলম্বিত ব্যয়: যেসব ব্যয় মুনাফাজাতীয় হওয়া সত্ত্বেও নির্দিষ্ট হিসাব বছরে সীমাবদ্ধ না থেকে একাধিক বছরে সুবিধা পাওয়া যায়, সেসব ব্যয়কে বিলম্বিত মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। এ ধরণের ব্যয়ের প্রভাব একটি হিসাবকালে নিঃশেষ না হয়ে পরবর্তী কয়েকটি হিসাবকালে নিঃশেষ হয়ে থাকে। এরূপ মুনাফাজাতীয় ব্যয়ের পরিমাণ সাধারণত বড় অঙ্কের হয়ে থাকে। যেমন: ব্যবসা স্থাপনের প্রাথমিক খরচাবলী, অবলেখকের দস্তরি/কমিশন, ব্যবসার স্থানান্তর ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাবদ এককালীন বড় অঙ্কের ব্যয়, নতুন পণ্যের গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়, বড় ধরনের কারখানা মেরামত খরচ ইত্যাদি । বিলম্বিত ব্যয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল: এই ব্যয় কয়েকটি হিসাবকালের জন্য ভাগ করে একত্রে দেওয়া হয় এবং এই যাতীয় খরচ প্রতিটি হিসাবকালে একই হারে খরচ হিসাবে ডেবিট করা হয়, বাকি অংশ উদ্বৃত্তপত্রে সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়। হিসাব বিজ্ঞানের কর্মপন্থা বা কার্যণালী: (Accounting Policy) হিসাব বিজ্ঞানের কার্যপ্রণালী হল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত নির্দিষ্ট নীতি এবং পদ্ধতি যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবৃতি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে যেকোন হিসাব পদ্ধতি, পরিমাপক পদ্ধতি এবং কোন দলিলপত্র উপস্থাপনের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত। হিসবিবিজ্ঞানের কার্যপ্রণালী হিসবিবিজ্ঞানের নীতিগুলির থেকে আলাদা। নীতিমালা হল হিসাববিজ্ঞানের নিয়ম এবং কর্মপন্থা হল সেই নিয়মসমূহ মেনে চলার জন্য প্রতিষ্ঠানের উপায় বা কৌশল৷ হিসবিবিজ্ঞানের পলিসি বা কার্যপ্রণালী হল নিয়ম বা নির্দেশিকা যা কোম্পানিকে তার আর্থিক বিবৃতি প্রস্তুত এবং উপস্থাপন করার সময় মেনে চলতে হয় এবং তাই প্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করার জন্য একটি কাঠামো বা নমুনা হিসাবে কাজ করে। এই পলিসিগুলি বিশেষ করে জটিল হিসাব পদবধতির অনুশীলনে যেমন: অবচয় পদ্ধতি, সুনামের স্বীকৃতি, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) খরচ নির্ণয়, মজুদ মাল মূল্যায়ন এবং আর্থিক হিসাব একীভুতকরণের জন্য অনুসৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোন প্রতিষ্ঠানে মজুদ মালের মূল্যায়ন করার জন্য ভারযুক্ত গড় পদ্ধতি, ফিফো বা লিফো এর যে কোন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করার অনুমোদন দেওয়া হয়। চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা (Going Concern Concept): চলমান ব্যবসা ধারণা বা চলমান ব্যবসা রীতি অনুসারে অনুমান করা হয় যে উক্ত ব্যবসা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বা অন্তত দীর্ঘ মেয়াদে বা উহার লক্ষ্যার্জন পর্যন্ত চলমান থাকবে। অর্থাৎ চলমান ব্যবসায় ধারণা অনুসারে অনুমান (Assumption) করা হয় প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর থাকবে এবং নিকট ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিকট ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুতের ক্ষেত্রে চলমান ব্যবসায় ধারণা প্রয়োগ করা হয় না, বরং সমাপন (Gone concern) ধারণা অনুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুত করা হয়। সার্বজনিন হিসাব নীতির মধ্যে এ নীতিটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ন। এ ধারণার অনুপস্থিতিতে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অগ্রীম পরিশোধ করা বা বকেয়া ব্যয় হিসাবভুক্ত করা, দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার যোগ্য সম্পদের মূল্য হতে অবচয় বাদ দিয়ে উদ্বৃত্তপত্রে সম্পদ হিসাবে প্রদর্শন, দায় সৃষ্টি এবং তা উদ্বৃত্তপত্রে প্রদর্শন সম্ভব নয়। FASB : ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (FASB) হল একটি স্বাধীন অলাভজনক সংস্থা যা সর্বজন স্বীকৃত হিসাব বিজ্ঞান নীতিমালা (GAAP) অনুসরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এবং অলাভজনক সংস্থাগুলির জন্য হিসাব এবং আর্থিক প্রতিবেদনের মান প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্ব পালন করে। FASB ১৯৭৩ সালে গঠিত হয়। এফএএসবি নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে: ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (FASB) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানি এবং অলাভজনক সংস্থাগুলির জন্য হিসাব বিজ্ঞানের বিভিন্ন রকম নিয়ম প্রণয়ন করে। এফএএসবি হল একটি সরকারি হিসাব মান সম্পর্কিত সংস্থা, যা আমেরিকায় রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারের জন্য হিসাবের নিয়ম নির্ধারণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, FASB আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (IASB) এর সাথে বিশ্বব্যাপী সামঞ্জস্যপূর্ণ মান স্থাপনের জন্য কাজ করছে। অনুপার্জিত আয় (UNEARNED Revenue): ভুমির মালিক কোন বাড়তি পরিশ্রম ও বিনিয়োগ ছাড়াই যে অতিরিক্ত আয় হয় তাকে অনুপার্জিত আয় আয় বলে। যেমন – বিশ্বরোড বা এশিয়ান হাইওয়ে নামে একটি অবহেলিত গ্রাম বা জনপদ দিয়ে নির্মিত হলো সেখানে জমির চাহিদা বেড়ে যায় এবং তার দাম বাড়ে। অথবা ধরা যাক, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের ফলে কোন বিশেষ অঞ্চলের জমির দাম হঠাৎ বেড়ে গেল। এর ফলে জমির মালিকরা আশাতীত আয় লাভ করতে পারে। অনুপার্জিত আয় উদ্ভবের প্রধান কারণসমূহ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি উন্নয়ন কর্মসূচি ও দ্রুত নগরায়ন । সমচ্ছেদ বিন্দু (break-even point): ব্রেক ইভেন পয়েন্ট বা সমচ্ছেদ বিন্দু বলতে কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অথবা বিক্রয় মাত্রার ঐ অবস্থান কে বুঝায় যেখানে মোট বিক্রয় মোট ব্যয়ের সমান হয় । মোট ব্যয় রেখা মোট বিক্রয় রেখাকে যে বিন্দুতে ছেদ করে উক্ত ছেদ বিন্দুকে ব্রেক ইভেন পয়েন্ট বলে । ব্রেক ইভেন বিন্দুতে মোট আয় ও মোট ব্যয় এর সমতা অবস্থা নির্দেশ করে । এই বিন্দু হল উৎপাদনের সর্বনিম্ন পর্যায় যেখানে মোট ব্যয় উদ্ধার হয় এবং এরপর থেকে লাভ শুরু হয়। আবার বিক্রয় যখন সমচ্ছেদ বিন্দুর নিচে নেমে যায় তখন লোকসান হতে শুরু করে। সমচ্ছেদ বিন্দুকে টাকায় অথবা এককে প্রকাশ করা যায়। সমচ্ছেদ বিন্দু (একক)= মোট স্থায়ী খরচ/ একক প্রতি অনুদান সমচ্ছেদ বিন্দু (টাকা)= মোট স্থায়ী খরচ / অনুদান প্রান্ত অনুপাত (contribution margin ratio) সম্ভাব্য দায় (contingent liabilities) : হিসাবকালে সংঘটিত যে সকল ঘটনার কারণে আর্থিক বিবরণী তৈরীর পরবর্তীতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যতে দায় সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেগুলোকে সম্ভাব্য দায় বলা হয়। GAAP এর প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে, ”সম্ভাব্য দায় হ'ল সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ব্যয় যা কোন দোদুল্যমান ঘটনার উপর নির্ভর করে যা তাকে প্রকৃত ক্ষতিতে রূপান্তর করে।” উদাহরণ : বাট্টাকৃত বিনিময় বিল মেয়াদপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত, বিচারাধীন মামলার দাবি, জামিন সংক্রান্ত দেনা, চুক্তিভঙ্গের খেসারত দেয়ার সম্ভাবনা, ইত্যাদি। যেহেতু সম্ভাব্য দায়ের ধারণাটি অস্পষ্টতার উপর সীমাবদ্ধ এবং কোন ঘটনাটি সম্ভাব্য ব্যয় হিসাবে স্বীকৃত হবে সে বিষয়ে বিবেচনাগুলি অস্পষ্ট, তাই সম্ভাব্য দায় নিয়ে কাজ করার জন্য দুটি মানদণ্ড রয়েছে: ১) ঘটনাটি ভবিষ্যতে ৫০% বা তার বেশি পরিমাণে হবে কিনা? ২) এবং ঘটনাটি অর্থ মূল্যে প্রকাশযোগ্য কিনা? উল্লেখিত দুটি মানদন্ড পূরণ হলে সম্ভাব্য দায় হিসাবভুক্ত করা হয়। সম্বাব্য দায় প্রথমে লাভ ক্ষতি হিসাবে খরচ হিসাবে এবং এরপর উদ্বর্তপত্রের দায় পাশে দেখানো হয়। হিসাববিজ্ঞানের পূর্ণ প্রকাশ নীতি অনুসারে সম্ভাব্য দায়কে সাধারণত উদ্বৃত্তপত্রের ফুটনোটে দেখানো হয় (মূল অংশে দেখানো হয় না)। অদৃশ্য লেনদেন: যেসব লেনদেন প্রতক্ষ দেখা যায় না বা দৃষ্টিগোচর হয় না কিন্তু উক্ত লেনদেনের ফলে কারবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে । যেমন: অবচয়, সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি, অনাদায়ী পাওনা, বাট্টা ও প্রভিশন। ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী (Bank reconciliation): ব্যাংক সমন্বয় হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি ধাপ যার মাধ্যমে গ্রাহকের নগদান বই ও ব্যাংক বিবরণীর মধ্যকার পার্থক্য বা গরমিল সমন্বয় বা মিল করা হয়। ব্যাংক সমন্বয় প্রক্রিয়ায় সাধারণত গ্রাহক কর্তৃক একটি বিবরণী প্রস্তুত করা হয় যেটিতে ব্যাংক বিবরণী ও নগদান বইয়ে গরমিল বা পার্থক্যের কারণ বা হিসাবসমুহ লিপিবদ্ধ করা হয় সেটিই ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী নামে পরিচিত। ব্যাংকসমূহ একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর গ্রাহকদের ব্যাংক বিবরণী প্রদান করে থাকে। এই ব্যাংক বিবরণী গ্রাহক তার লিপিবদ্ধ নগদান বইয়ের সাথে মিলিয়ে নেয়। তখন গ্রাহক যদি ব্যাংক বিবরণী ও নগদান বইয়ের মাঝে কোন গরমিল পায় তবে সেটি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ পূর্বক মিল বা সমন্বয় করা হয়। ব্যাংক বা গ্রাহকের ভুলে বা সময়ের পার্থক্যের কারণে এই দুই পক্ষের হিসাবে যে অমিল দেখা দেয় তা মিল করার জন্য যে বিবরণী তৈরী করা হয় তাকে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী বলে। নিয়ন্ত্রণ হিসাব : নিয়ন্ত্রণ হিসাব হল একটি সাধারণ খতিয়ান হিসাব যা একটি নির্দিষ্ট ধরণের সমস্ত সহায়ক হিসাবকে সংক্ষিপ্ত ও একত্রিত করে। অন্য কথায়, এটি একটি হিসাব খাতের সারমর্ম যা সাবসিডিয়ারি বা সহায়ক হিসাবের যোগফলের সমান এবং সাধারণ খতিয়ানরেক সহজ ও সুসংগঠিত করতে ব্যবহৃত হয়। একটি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ খতিয়ানে সম্পদ এবং দায় হিসাব থেকে শুরু করে আয় এবং ব্যয় হিসাব পর্যন্ত শত শত হিসাব থাকতে পারে। অধিকন্তু, প্রতিটি হিসাবের আওতায় শত শত ছোট হিসাব থাকতে পারে যাকে সাবসিডিয়ারি হিসাব বলা হয়। যদি প্রতিটি একক হিসাব সাধারণ খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে এটি খুব বড়, অবিন্যস্ত এবং ব্যবহার করা কঠিন হবে। এই কারণেই বিপুল সংখ্যক সম্পর্কিত হিসাব থেকে উপাত্ত সংক্ষেপ করতে নিয়ন্ত্রণ হিসাবসমূহ ব্যবহৃত হয়। যেমন: দেনাদার নিয়ন্ত্রণ হিসাব , পাওনাদার নিয়ন্ত্রণ হিসাব , এবং মজুদ মাল নিয়ন্ত্রণ হিসাব ইত্যাদি। বিশদ উদাহরণ: একটি কোম্পানির বর্তমান প্রাপ্য হিসাবের জের এ শত শত বা হাজার হাজার গ্রাহক থাকতে পারে। এই সমস্ত হিসাবের জের আলাদাভাবে A/R সাবসিডিয়ারি হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে এই সমস্ত হিসাবের জের মোট প্রাপ্য হিসাব-নিয়ন্ত্রণ (A/R Control Account) এ নিয়ে যাওয়া হয়, যা সাধারণ খতিয়ান এবং আর্থিক বিবৃতিতে প্রদর্শিত হয়। ধারণাগত কাঠামো (Conceptual Framework): ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে হোক কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল বহিঃপ্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে হোক ব্যবসায় সংক্রান্ত আর্থিক হিসাবের যাবতীয় তথ্য সরবরাহের সুনির্দিষ্ট কৌশল স্বরুপ একটি মান নির্ধারণ করাই ধারণাগত কাঠামো।যা জ্ঞান ও বিচক্ষণতা প্রসূত হবে, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য ও ব্যবসায়ের নীতির মৌলিকতা বজায় রাখবে এবং সার্বিক প্রয়োজন মিটানোর উপায় বলে দেবে। এক কথায় বলা যায়, কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঘটনাগুলো হিসাবচক্রের মাধ্যমে আর্থিক বিবরণীতে উপস্থাপন পূর্বক আর্থিক অবস্থা প্রকাশের মাধ্যমে হিসাব রক্ষণ তথ্য তৈরীর যে নির্দেশিকা তাই হচ্ছে আর্থিক হিসাবের ধারণাগত কাঠামো। হিসাব বিজ্ঞানের ব্যবহার ও প্রয়োগকে সাবলীল ও সর্বাঙ্গ সুন্দর করে সর্বজন গ্রাহ্য করতেই ধারণাগত কাঠামোর সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের FASB তিনটি স্তরে ধারণাগত কাঠামোকে উপস্থাপন করেছে: ü প্রথম স্তরে আর্থিক প্রতিবেদন এর উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। ü দ্বিতীয় স্তরে হিসাব বিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্য এবং আর্থিক বিবরণীর উপাদানগুলো আলোচনা করা হয়েছে। ü এবং তৃতীয় স্তরে হিসাব কার্য পরিচালনা সম্পর্কে নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ জাবেদা (Special Journal): হিসাব রক্ষণ ও হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হচ্ছে দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে লেনদেনকে লিপিবদ্ধকরণ। এই লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনকে পরবর্তী পর্যায়ে শ্রেণীবদ্ধকরণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্রবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়। কিন্তু লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের এই সাধারণ পদ্ধতিতে বেশি সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় দ্রুততার সাথে অর্থাৎ সময় ও শ্রম সাশ্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসার বিশেষ কতগুলো সমজাতীয় লেনদেনের জাবেদা এবং একই সঙ্গে লেনদেনগুলোর সাধারণ এবং সহায়ক খতিয়ান তৈরী করা হয়, সেগুলোকেই বিশেষ জাবেদা বলে। অর্থাৎ যে লেনদেনগুলো ব্যবসায় বারবার বা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হয় সেসব লেনদেনগুলোর পৃথক শিরোণামে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করাকে বিশেষ জাবেদা বলে। ক্রয়- বিক্রয়কারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই বিশেষ জাবেদাকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে – 1. বিক্রয় জাবেদা (Sales Journal)- ধারে বিক্রয় লিপিবদ্ধ করার জন্য। 2. ক্রয় জাবেদা (Purchase Journal)- ধারে ক্রয় লিপিবদ্ধ করার জন্য। 3. নগদান প্র্রাপ্তি জাবেদা (Cash Receipt Journal)- নগদ প্রাপ্তি লিপিবদ্ধ করার জন্য। 4. নগদান প্রদান জাবেদা (Cash Disbursement Journal)- নগদ প্রদান লিপিবদ্ধ করার জন্য। উল্লেখ্য এক্ষত্রেও একটি সাধারণ জাবেদা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। যেসব লেনদেন বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না সেসব বিবিধ লেনদেনসহ সমণ্বয়, ভুল সংশোধনী ও সমাপনী দাখিলা এই সাধারণ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পুঞ্জীভুত অবচয়/ অবচয় সঞ্চিতি (accumulated Depreciation): অবচয় সঞ্চিতি হল কোন সরঞ্জামের সম্ভাব্য প্রতিস্থাপন খরচ মটোনোর জন্য একটি ব্যবসায়িক তহবিল যা সম্পদের সমগ্র জীবনকাল ব্যাপী প্রতি বছর জমা করা হয়। কোন সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে অপ্রচলিত এবং অবমূল্যায়িত হয়ে গেলে তা সহজেই প্রতিস্থাপন করা যায়। এটি ব্যালেন্স শীটে উল্লিখিত সমস্ত উৎপাদনশীল সম্পদের বিরুদ্ধে ধার্যকরা মোট অবচয়। অবচয় সঞ্চিতিকে পুঞ্জীভুত অবচয়ও বলা হয়। উৎপাদনশীল সম্পদের মূল্যর বাস্তবসম্মত হ্রাস এবং সম্পদের জন্য করা বিনিয়োগের করমুক্ত পুনরুদ্ধারের জন্য এ ধরণের সঞ্চিতি ধার্য করা হয়। এক কথায়, অবচয় ব্যয় বাবদ প্রতি বছর নিট মুনাফা হতে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরিয়ে সঞ্চয় করে রাখা হয়,তাকে পুঞ্জিভূত অবচয় বলে। ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ (Wasting Assets): যে সব সম্পদের জীবনকাল সীমিত এবং ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে নিঃশেষিত হয় তাদের বলা হয় গচ্ছিত সম্পদ। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হয় বলে এদের আরেক নাম ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ। অপচয়কারী সম্পদ হল সেই সম্পদ যেগুলোর জীবন সীমিত এবং তাই সময়ের সাথে সাথে মূল্য হ্রাস পায়। একটি অপচয়কারী সম্পদ প্রায়শঃই যতক্ষণ না কিছুই অবশিষ্ট থাকে ততদিন ধরে ব্যবহার করা হয়। অপচয়কারী সম্পদকে ভোগকৃত সম্পদ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। অতিরিক্ত রাজস্ব উপার্জন করার জন্য অপচয়কারী সম্পদ পুনর্ব্যবহৃত করা যায় না। যেমন: কারখানার যন্ত্রপাতি, যানবাহন, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও কয়লা ক্ষনি। কিছু স্থায়ী সম্পদ সময়ের সাথে সাথে মান বৃদ্ধি পেতে পারে, কিন্তু এখনও অবমূল্যায়ন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় বাজারের অবস্থার পরিবর্তন অনুসারে একটি দালানের বাজার মূল্য বাড়তে পারে। হিসাব বিজ্ঞানে স্লিপ ব্যবস্থা: এটি দুই তরফা দাখিলা নীতির অধীনে রক্ষিত বইগুলিতে দ্রুত এন্ট্রি করার একটি পদ্ধতি। এই ব্যবস্থার অধীনে, জাবেদা বা নগদান বই থেকে নয়, স্লিপ থেকে পোস্ট করা হয়। স্লিপ হল জাবেদার আলগা পাতা এবং এগুলি গ্রাহকদের দ্বারা বা ব্যাঙ্কের কর্মীদের দ্বারা সরবরাহ করা হয়। ব্যাঙ্ককে নিশ্চিত করতে হয় যে গ্রাহকদের বা আমানতকারীদের লেজার হিসাবগুলি সর্বদা হালনাগাদ রয়েছে। যার ফলে অর্থপ্রদানের জন্য যখন একটি চেক ব্যাঙ্কের কাছে উপস্থাপন করা হয়, তখন ব্যাঙ্ক অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে পারে চেকটি পাশ বা প্রত্যাখাত হবে কিনা । তাই ব্যাংকের লেনদেন অবিলম্বে লিপিবদ্ধ করা বা অনলাইনে আপডেট করা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে লেজার পোস্টিং এ স্লিপ ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এই ব্যবস্থার অধীনে কোন প্রকার সহায়ক বই বা জাবেদা ছাড়াই খতিয়ানে থাকা গ্রাহকদের (ব্যক্তিগত) হিসাবে সরাসরি বিভিন্ন স্লিপ হইতে এন্ট্রি দেওয়া হয়, এবং তারপর একটি দৈনিক হিসাব বই লেখা হয়। পরবর্তীকালে, গ্রাহকদের হিসাবের দাখিলা সমূহ ডে বুকের সাথে মিলিত হয়। এভাবে সময় নষ্ট না করে খতিয়ান হিসাবে পোস্টিং এবং ডে-বুক লেখার কাজ একই সঙ্গে করা যায়। একটি স্লিপকে ভাউচারও বলা হয়। সাধারণভাবে, ব্যাঙ্ক এর হিসাব রক্ষণে যে ধরনের স্লিপ ব্যবহার করা হয় তা হল: পে-ইন-স্লিপ, চেক বা তোলার ফর্ম। এই স্লিপগুলি গ্রাহকদের দ্বারা পূরণ করায় ব্যাংকের কর্মচারীদের অনেক সময় এবং শ্রম সাশ্রয় হয়। হিসাব মান (Accounting Standards): হিসাব মান হল কতগুলো সাধারণ নীতি, আদর্শ এবং পদ্ধতির একটি কাঠামো যা আর্থিক হিসাব বিজ্ঞানের কার্যক্রম এবং প্রয়োগের ভিত্তিকে সংজ্ঞায়িত করে। হিসাব মান সব দেশে আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা উন্নত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থাগুলিতে আর্থিক বিবৃতি প্রস্তুত করার জন্য সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (GAAP) ব্যাপকভাবে গৃহীত ও ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান (IFRS) অনুসরণ করে থাকে যার সকল নির্দেশিকা আন্তর্জাতিক হিসাব মান সংস্থা (IASB) কর্তৃক নির্ধারিত হয়। বিশ্বের বাকি অংশ প্রাথমিকভাবে IFRS ব্যবহার করে। বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে এই মানগুলি ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (IASB) আর্থিক বিবৃতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হিসাব মানসমূহ প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাখ্যা করে। প্রচলিত আন্তর্জাতিক হিসাব মানগুলোর মধ্যে ১২ টি আইনগত এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে বাংলাদেমে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না। এছাড়া বাকিগুলো বাংলাদেশের পেশাদার হিসাব বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠান ICAB এবং ICMAB এসব মানগুলো মোটামুটি অনুসরণ করে চলে। সমণ্বয় দাখিলা (Adjusting Entries): সমণ্বয় কথাটির অর্থ হল, মিলানো বা সামঞ্জস্য বিধান করা বা কোন দফাকে ঠিকঠাকভাবে প্রকাশ করা। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কোন একটি নির্দিষ্ট বছরে যে লেনদেন সম্পন্ন হয় তার সম্পূর্ণই চলতি বছরের নয়। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানের চলতি বছরের হিসাব করলে তিন বছরের লেনদেন জড়িত থাকে: ১) পূর্ববর্তী বছর ২) চলতি বছর এবং ৩) পরবর্তী বছর। সমগ্র হিসাব বছরে যে লেনদেনগুলো অধিক হিসাবভুক্ত হয়ে যায় এবং যে লেনদেনগুলো আদৌ হিসাবভুক্ত হয়নি সেগুলে সমণ্বয় করার জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমণ্বয় দাখিলা বলে। বিশদভাবে বলতে গেলে, চলতি বছরের হিসাব থেকে পূর্ববর্তী বছরের আয় ব্যয় বাদ দেয়া, চলতি বছরের বকেয়া আয় ব্যয় হিসাবভুক্ত করা ও অন্যান্য অঘটিত বিষয়সমূহ যেমন: অনাদায়ী সঞ্চিতি, অবচয় ইত্যাদি হিসাবভুক্ত করা এবং পরবর্তী বছরের আয় ব্যয় চলতি বছরে সমণ্বয় করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকেই সমন্বয় দাখিলা বলে। প্রাপ্য হিসাব (Accounts Receivable): Account Receivable বা প্রাপ্য হিসাব শব্দ দুটির পৃথক অর্থ হলো- ১. হিসাবসমূহ এবং ২. প্রাপ্য। অর্থাৎ বিবিধ হিসাব থেকে প্রাপ্য অর্থকে একত্রে প্রাপ্য হিসাব বলে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাদের নিকট পাওনা রয়েছে তাদের সমণ্বিত রূপকে প্রাপ্য হিসাব বলে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ধারে পণ্য বিক্রয় এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমেই প্রাপ্য হিসাবের সৃস্টি হয়। যে সমস্ত ব্যক্তির নিকট ধারে পণ্য বিক্রয় করা হয় তাদের িসাথে শুধু বিক্রয়ের লেনদেন করা হয় না। বছরব্যপী পৃথক পৃথকনিামে খোলা ব্যক্তি হিসাব থেকে উক্ত বিক্রিত পণের অর্থ আদায় করা হয়। এরূপ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ধারে বিক্রয়ের নগদ আদায়ের পরবর্তী অবশিষ্ট প্রাপ্য টাকাকে একত্রে প্রাপ্য হিসাব বা Account Receivable বলে। সুনাম (Goodwill): সুনাম একটি অস্পৰ্শনীয় সম্পত্তি। সাধারণ অর্থে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা অধিক মুনাফা অর্জনের ক্ষমতাকে সুনাম বলে । এরিক এল, কোহলার এর মতে, "ক্রীত অস্পৰ্শনীয় নীট সম্পত্তির বহিমূল্য অথবা হিসাবকৃত মূল্য বা স্থিরকৃত মূল্য অপেক্ষা ব্যবসায়ের পরিশোধিত মূলা বেশি হলে এ অতিরিক্ত মূল্যকে সুনাম বলে।" সুনাম একটি প্রতিষ্ঠিত কারবারে মত সম্পত্তির বাহিরে অতিরিক্ত বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তি যাহা উক্ত উপার্জন করতে সাহায্য করে । এটি একটি অদৃশ্য ও অস্পর্শনীয় সম্পত্তি, তবে কাল্পনিক সম্পত্তি নহে কারণ ইহার বাজার মূল্য রয়েছে। মোট কথা হলো, পণ্যের উৎকৃষ্ট মান, প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক অবস্থান, কর্মচারীদের দক্ষতা, মালিকের ব্যক্তিগত সুখ্যাতি, ব্রান্ড নাম, প্রভৃতি বহু উপাদানের সমষ্টিগত ফলাফলই সুনাম। সুনাম ক্রয়কৃত অথবা অভ্যন্তরীনভাবে সৃষ্ট উভয় ধরণেরই হতে পারে। মূলধণী ব্যয় / মূলধন জাতীয় ব্যয় (Capital Expenditure): সাধারণ অর্থে স্থায়ী সম্পদ অর্জনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। সাধারণত, এ ধরণরে ব্যয় সমূহ অনিয়মিত হয়, টাকার অংকে তুলনামূলক বড় হয় এবং এক বছররে অধিক সময়ের জন্য সুবিধা ভোগ করা যায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, মূলধনজাতীয় ব্যয় বলতে ঐ ব ব্যয়কে বুঝায় যার মাধ্যমে একটানা দীর্ঘদিন মুনাফা অর্জনের লক্ষে কোন স্থায়ী সম্পত্তি অর্জিত হয় বা বৃদ্ধি ঘটে এবং যার মাধ্যমে ব্যবসায়ের মুনাফার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেমন: সুনাম র্অজনের ব্যয়, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ভুমি ক্রয় ইত্যাদি। নিরাপত্তা প্রান্ত (Margin of Safety): মোট বিক্রয় ও সমচ্ছেদ বিন্দুতে অর্জিত বিক্রয়ের পার্থক্যকে নিরাপত্তা প্রান্ত (Margin of Safety) বলে। মোট বিক্রয় সমচ্ছেদ বিন্দুর বিক্রয় থেকে যত বেশি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রান্ত বা নিরাপত্তা সীমাও তত বেশি। সুতরাং সমচ্ছেদ বিক্রয়ের অতিরিক্ত প্রকৃত বা বাজেটীয় বিক্রয়কে নিরাপত্তা প্রান্ত বা Margin of Safety বলে। পণ্যের বাজার চাহিদা হ্রাস পেলেও কোম্পাণীর পক্ষে ক্ষতি স্বীকার না করে উৎপাদন ও বিক্রয় চালু রাখা সম্ভব কি না তা Margin of Safety থেকে বুঝা যায়। সাধারণত স্থির ব্যয়ের পরিমাণ এবং বিক্রয় অবদানের হারের উপর Margin of Safety কত বেশী হবে তা নির্ভর করে। Garrison and Noreen বলেন, Margin of Safety is the excess of budgeted of actual sales over the break even volume of sales. ন্যায্য মূল্য (Fair Value): ন্যায্য মূল্য বলতে কোন সম্পদ যেমন: পণ্য, স্টক বা সিকিউরিটি প্রভৃতির প্রকৃত মূল্য বোঝায় - - যা সেচছায় বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয়ের দ্বারা সম্মত হয়। ন্যায্য মূল্য এমন একটি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যা সাধারণ অবস্থার অধীনে বাজারে বিক্রি বা লেনদেন করা হয় - এবং যা বাতিল করা হয়নি। বিক্রেতাকে কোন ক্ষতির মধ্যে না ফেলে ক্রেতার কাছে ন্যায্য মূল্য বা পরিমাণ বলে বিবেচিত হয় এমনভাবে ধার্য করার জন্যই ন্যায্য মূল্য নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানি A তার স্টক কোম্পানি B এর কাছে প্রতি শেয়ার 30 টাকায় বিক্রি করে। কোম্পানি B এর মালিক মনে করেন যে তিনি শেয়ার প্রতি 50 টাকায় বিক্রি করতে পারেন যদি একবার তিনি এটি অর্জন করেন এবং তাই মূল মূল্যে এক মিলিয়ন শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কোম্পানি B-এর জন্য প্রচুর লাভের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, বিক্রয়কে ন্যায্য মূল্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এই মূল্যে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছিল এবং তারা উভয়ই বিক্রয় থেকে উপকৃত হবে। একটি পণ্য বা আর্থিক বিনিয়োগের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে, একজন ব্যক্তি বা ব্যবসা সম্পদের জন্য একই ধরণের সম্পদের প্রকৃত বাজার লেনদেন দেখতে পারে, সম্পদ হইতে প্রত্যাশিত উপার্জন অনুমান করতে পারে এবং সম্পদ প্রতিস্থাপনের জন্য খরচ নির্ধারণ করতে পারে। ট্রেজারি স্টক : ট্রেজারি স্টক, ট্রেজারি শেয়ার বা পুনঃঅর্জিত স্টক নামেও পরিচিত,। ট্রেজারি স্টক হল পূর্বের বকেয়া স্টককে বোঝায় যা ইস্যুকারী কোম্পানি কর্তৃক স্টকহোল্ডারদের কাছ থেকে পুনরায় কিনে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ফলে খোলা বাজারে মোট বকেয়া শেয়ারের সংখ্যা কমে যায়। এই শেয়ারগুলি ইস্যু করা হয় কিন্তু আর বকেয়া থাকে না এবং লভ্যাংশ বন্টন বা শেয়ার প্রতি আয়ের হিসাব (ইপিএস) এর অন্তর্ভুক্ত থাকে না। ট্রেজারি স্টক হল একটি বিপরীত ইক্যুইটি হিসাব যা উদ্বর্ত পত্রের শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি বিভাগে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেহেতু ট্রেজারি স্টক খোলা বাজার থেকে পুনঃক্রয় করা শেয়ারের সংখ্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এটি স্টকের জন্য পরিশোধকৃত অর্থের সমপরিমাণ শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটিও হ্রাস করে। ট্রেজারি স্টক হিসাব রাখার দুটি সাধারণত পদ্ধতি হল খরচ পদ্ধতি এবং সমমূল্য পদ্ধতি। এক কথায়, কোম্পানি যখন নিজের শেয়ার নিজে ক্রয় করে তখন তাকে ট্রেজারি স্টক বলে। আইসি এবি ও আইসিএম এবি: ICAB এর পূর্ণ রূপ হল The Institute of Chartered Accountants of Bangladesh . আইসি এবি হল বাংলাদেশের জাতীয় পেশাদার হিসাববিজ্ঞানীদের সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সংস্থা যারা অ্যাসোসিয়েট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদবী প্রদানের অধিকার রয়েছে। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে একমাত্র আইসিএবি এর সনদপ্রাপ্ত হিসাব বিজ্ঞানী বা সিএ ডিগ্রি প্রদান করার জন্য অনুমোদন রয়েছে। আইসিএবি’র সদস্যগন দুই স্তরে সদস্য পদ লাভ করে থাকে: এসোসিয়েট ও ফেলো। বাংলাদেশের সমস্ত সনদ প্রাপ্ত হিসাব বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠান বা সিএ ফার্মগুলো দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্য ভুমিকা পালন করে থাকে। আইসি এবি দেশের ভেতরে হিসাবরক্ষকদের পেশা এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলির নিয়ন্ত্রক করে থাকে। ICMAB এর পূর্ণ রূপ হল The Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh. ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আইসিএমএবি বাংলাদেশে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট হিসাব বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত পেশাদার সংস্থা হিসাবে পরিচালিত হয়। শিক্ষার পাশাপাশি, এটি বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞানীদের পেশা নিয়ন্ত্রন ও প্রসারে নিযুক্ত রয়েছে। আইসিএমএবি সদস্যরা তাদের মনোনীত পদবী ACMA এবং FCMA সহ CMA হিসাবে পরিচিত। তারা বাংলাদেশে হিসাববিজ্ঞান ও অর্থায়ন পেশায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আইসি এবি ও আইসিএম এবি এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে পেশাদার হিসাবরক্ষক তৈরি করছে। বাংলাদেশে হিসাববিজ্ঞান ও অর্থায়ন পেশায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আইসি এবি ও আইসিএমএবি যোগ্যতা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অনেক পেশাদার সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত। মুনাফা জাতীয় ব্যয় : যেসব ব্যয় ব্যবসায়ের দৈনন্দিন র্কাযক্রম পরিচালনার জন্য পুনঃ পুনঃ সংঘটিত হয় এবং যে সমস্ত ব্যয়ের ফলাফল স্বল্প সময়ে অর্থাৎ একটি হিসাব সনের মধ্যে শেষ হয়ে যায় সেগুলোকে মুনাফা জাতীয় ব্যয় বলে। যেমন: কর্মচারীর বেতন, যাতায়াত খরচ, পরিবহন খরচ, মজুরী, পণ্য ক্রয়, ভাড়া, অবচয়, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। এ ধরনের ব্যয় ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য ব্যয়িত হয়। এর ফলাফল স্বল্প কালের অর্থাৎ এক হিসাব সনের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যায়। এ ব্যয় হিসাব সনে বার বার সংঘটিত হতে পারে বা হয়ে থাকে। মুনাফা জাতীয় ব্যয় ক্রয়-বিক্রয় হিসাব বা লাভ-ক্ষতি হিসাবে ডেবিট করা হয়। আর যদি এ ব্যয় বকেয়া থাকে তাহলে তা উদ্বর্তপত্রের দায়ের দিকে দেখানো হয়। উল্লেখ্য, স্থায়ী সম্পদ চালু রাখার জন্য যে ব্যয় হয় তাও মুনাফা জাতীয় ব্যয় । যেমন, যন্ত্রপাতি মেরামত খরচ, অবচয় ইত্যাদি। অনলাইন ব্যাংকিং: দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এবং বছরে ৩৬৫ দিন যে কোন স্থান থেকে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে একাউন্টে লগইন এর সুবিধা, একাউন্টের ব্যালেন্স জানা, এক একাউন্ট হতে অন্য একাউন্টে টাকা আদান-প্রদান করা যায়। ATM বুথে সচরাচর আমরা 24/7 লিখা দেখি। কথাটির অর্থ হল দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাবে।সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার যায়। চেক বইয়ের জন্য অনুরোধ, চেক বইয়ের পেমেন্ট বাতিল করা যায়। বিভিন্ন ডিপোজিট স্কিম করা যায়। ইন্টারনেট ব্যাংকিং সফটওয়্যার এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা হয়ে থাকে বলে এটি খুব দ্রুত এবং সুবিধাজনক। Provisions and Reserves: Provisions and Reserves দু'টো পরিভাষাই অর্থের সংরক্ষণ কে নির্দেশ করে। তবে Provisions কথাটির দ্বারা আইনগত বাধ্যবাধকতার আলোকে যে অর্থ সংরক্ষণ করা হয় তাকে বুঝায়। যেমন- কর প্রদানের জন্য, কুঋণ বাবদ ক্ষতি পূরণের জন্য আইন অনুযায়ী লাভের অর্থ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সংরক্ষণ করতে হয়। এটি হচ্ছে Provisions । অন্যদিকে Reservesকথাটির দ্বারা ভবিষ্যতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যে অর্থ সংরক্ষণ করা হয়, তাকে বুঝায়। কল মানি: কল মানি খুব স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন যা দাবি করা মাত্রই সম্পূর্ণ ফেরতযোগ্য। অন্যান্য মেয়াদী ঋণের মত এই ঋণের মত এর কোন মেয়াদকাল ও পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা থাকে না, এমনকি ঋণদাতা পরিশোধের জন্য কোন প্রকার অগ্রিম নোটিশ প্রদান করতে হয়কে না। এরূপ ঋণ এক দিন থেকে পনের দিনের মধ্যে মেয়াদপূর্তি হয়। আন্তঃ ব্যাংক লেনদেনের জন্য এই ঋণ ব্যবহৃত। এই বাজারে একদিনের জন্য যে অর্থ লেনদেন হয় তা "কল মানি" হিসাবে পরিচিত এবং এটি একদিনের বেশি হলে, "নোটিশ মানি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে ন্যূনতম নগদ ব্যালেন্স বজায় রাখতে হয় যা নগদ সংরক্ষিত অনুপাত(সিআরআর) হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সময়ে সময়ে নগদ অনুপাত পরিবর্তন করে, যা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কর্তৃক ঋণ হিসাবে দেওয়া উপলব্ধ তহবিলের পরিমাণ প্রভাবিত করে। সুতরাং বলা যায়, কল মানি সুদ সমেত পরিশোধযোগ্য একটি স্বল্প মেয়াদী ঋণ যার মাধ্যমে ব্যাংকসমূহ একে অপরের কাছে অর্থ প্রদান করে যাতে নগদ সংরক্ষিত অনুপাতটি বজায় রাখতে সক্ষম হয়। কল মানির উপর প্রদেয় সুদের হার কল রেট হিসাবে পরিচিত। এটি একটি অত্যন্ত অস্থির হার যা দিন-দিন পরিবর্তিত হয় এবং মাঝে মাঝে এমনকি ঘন্টা থেকে ঘন্টা পর্যন্তও। অগ্রদত্ত খুচরা নগদান বই (Imprest system Petty Cash Book): হিসাবের প্রাথমিক বহির ন্যয় চলতি খুচর, েছোট খাট খরচ সমূহ যে বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খুচরা নগদান বই বলে। সাধারণ খুচরা নগদান বহি ও অগ্রদত্ত খুচরা নগদান বই এর ডেবিট ক্রেডিট এবং কলাম তৈরীতে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। কেবল অগ্রদত্ত নিয়মে হিসাবের প্রারম্ভিক ও সমাপনী কালে খচরা নগদের উদ্বৃত্তকে একই পরিমাণ গণ্য করা হয়। অর্থাৎ খুচরা নগদান বইয়ে মোট ব্য্য় ও মোট জমার পার্থক্যকে ব্যালেন্স নামে প্রকাশ করা হয। কিন্তু অগ্রদত্ত নিয়মে মাস শেষের ব্যালেন্স তৈরী করার পূর্বে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট আদায় পূর্বক মাস প্রথমের ব্যালেন্সকেই মাস শেষের ব্যালেন্স হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এক্ষত্রে খুচরা ক্যাশিয়ার তার সমস্ত মাসের ব্যয়কৃত অর্থের হিসাব প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট উপস্থাপন করে ব্যয়কৃত তৎক্ষনাৎ আদায় করে নেয়। নগদ বাট্টা ও কারবারি বাট্টা: * নগদ বাট্টা : ধারে বিক্রয় করা পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে আদায়ের জন্য বিক্রেতা ক্রেতাকে প্রাপ্য টাকা থেকে যে পরিমাণ অর্থ কম বা মওকুফ করে দেয়, তাকে নগদ বাট্টা বলে । নগদ টাকা তাড়াতাড়ি আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীগণ এরপ নগদ বাটা মঞ্জুর করে থাকে । এটি নামিক হিসাব । তিনঘরা নগদান বহিতে প্রদত্ত নগদ বাট্টা ডেবিট পার্শ্বে বাট্টার ঘরে এবং প্রাপ্ত নগদ বাটা ক্রেডিট পার্শ্বে বাট্টার ঘরে লিখা হয়ে থাকে । উদাহরণ : বর্তমান সময়ে নগদ বাট্টা প্রদানের একটি বহুল প্রচলিত শর্ত হলো -"2/10, N/30 এই শর্ত বুঝায় যদি কোন দেনাদার পণ্য বিক্রয়ের ১০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে তবে তাকে ২% নগদ বাট্টা প্রদান করা হবে এবং উক্ত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে নগদ বাট্টা দেওয়া হবে না । কিন্তু অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে । এ জাতীয় বাট্টা প্রদানের কারন হল দেনাদারকে তার দেনা পরিশোধে উৎসাহিত করা । * কারবারি বাট্টা : বড় বড় কারবারি বা উৎপাদনকারি সর্বত্র একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করবার জন্য একটি ছাপানো মূল্য তালিকা রাখে । এরুপ ছাপানো মূল্য হতে উৎপাদনকারী বা পাইকারী ব্যবসায়ীগণ যে অর্থ কম রাখে তাই কারবারি বাট্টা । অর্থাৎ, বড় বড় কারবারি বা উৎপাদনকারীগণ খুচরা বিক্রয়ের তার বিক্রয় মূল্য বা নির্দিষ্ট মূল্য হতে সকল ক্রেতার নিকট থেকে সমহারে যে পরিমাণ অর্থ কম নেয়া হয় তাকে কারবারী বাট্টা বলে । উদাহরণ : একটি মোবাইলের মূল্য ২০০০ টাকা লিখা আছে । এই মূল্যে সাধারণত দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় । এই ক্ষেত্রে পাইকারী ব্যবসায়ী যদি ২০০০ টাকা মূল্যে খুচরা ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করে তবে, খুচরা ব্যবসায়ীর কোন লাভ থাকে না । এক্ষেত্রে পাইকারী ব্যবসায়ী খুচরা ব্যবসায়ীকে ১০% বাট্টা মঞ্জুর করে থাকে । এই বাট্টাই হল কারবারি বাট্টা । বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি (Statutory Reserve): বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি হল তরল সম্পদের পরিমাণ যা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন একটি বীমা কোম্পানী বা একটি ব্যাঙ্ককে অপরিবর্তিত বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য আলাদা করে রাখতে হয়। যে তরল সম্পদ দিয়ে রিজার্ভ তহবিল তৈরি করা হয় তা নগদ হতে পারে বা বিক্রয়যোগ্য সিকিউরিটিজের মতো নগদে সহজেই রূপান্তরযোগ্য কিছু হতে পারে। ব্যাঙ্ক এবং ক্রেডিট ইউনিয়নগুলির জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দ্বারা নির্ধারিত হয়। বিভিন্ন উপায়ে গণনা করা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতেও দাবি পরিশোধ করতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতির প্রয়োজন হয়৷ সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত হারে যে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে থাকে, তাকে বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি বলে। অফসেটিং (offsetting) --------------------------------- দেনাদার অথবা গ্যারান্টার-এর ঋণ পরিশোধের অক্ষমতার জন্য তাদের ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থ seize করে ঋণ হিসাবের সাথে সমন্বয় করাকে অফসেটিং (offsetting) বলে। এছাড়াও, স্থায়ী সম্পত্তির বিপরীতে সঞ্চিত অবচয়কে স্থায়ী সম্পত্তি হতে বাদ দেওয়াকে অফসেটিং বলে। চেক কাইটিং ও ল্যাপিং: চেক কিটিং : চেক কিটিং চেকসহ অন্যান্য আর্থিক দলিলাদির জালিয়াতির একটি ধরণ। এতে কোন একটি চেকিং হিসাবে অস্তিত্বহীন অর্থ ব্যবহার করার জন্য ফ্লোটিং পিরিয়ড অর্থাৎ একটি চেক ক্লিয়ারিং হতে যে সময় লাগে তা ব্যবহার করা হয়। মোটকথা, কাইটিং একটি খারাপ চেককে অননুমোদিত ঋণে পরিণত করে এবং এটি ব্যাঙ্কের জন্য খারাপ খবর বয়ে আনে। কিটিং চক্র প্রায় অবিরত চলতে পারে অথবা যতক্ষণ না হিসাবধারী প্রক্রিয়াটি ব্যাহত করার জন্য একটি আসল চেক পান। উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোক পেচেক না পাওয়া পর্যন্ত তাদের হিসাবটি ইতিবাচক রাখতে হিসাবে চেক কিটিং ব্যবহার করে। এবং চেক কিটিংকে সুদ-মুক্ত ঋণের একটি অবৈধ উপায় হিসেবে ব্যবহার করে। ল্যাপিং : ল্যাপিং তখনই ঘটে যখন একজন কর্মচারী নগদ চুরি আড়াল করার জন্য প্রাপ্য হিসাবের রেকর্ড পরিবর্তন করে। এটি এক গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ সরানোর মাধ্যমে করা হয় এবং এরপর চুরি লুকানোর জন্য অন্য গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ সরিয়ে প্রথম গ্রাহকের প্রাপ্য অর্থ শোধ করা হয়। এই ধরনের প্রতারণা চিরস্থায়ীভাবে পরিচালিত হতে পারে। যেহেতু নতুন অর্থপ্রদান ক্রমাগত পুরানো ঋণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই প্রতারণার সাথে কোনও প্রাপ্য জড়িত হয়না এত পুরানো বলেও মনে হয় না। অর্থাৎ ল্যাপিং পরিকল্পনা হল একটি প্রতারণামূলক চর্চা যাতে একজন কর্মচারী চুরি হওয়া নগদ লুকানোর জন্য প্রাপ্য হিসাবের পরিবর্তন করে।
No comments:
Post a Comment
to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)