Right Click n Copy Disabled

Ads block

Banner 728x90px

আমার কবিতা -12


আমার কবিতা 🌿 page no.🌿 আমার কবিতা

বিমর্ষ বেলা
-- নজরুল জা‌মিল
ক‌য়েকটা শিউ‌লির বোঁটায়
বই‌য়ের মলা‌টে ডলতে থাকা পৌ‌ষের
শৈশব ভীষণ গাঢ় র‌ঙে মুখ‌রিত।
গাঢ় কমলার রঙটাই
বু‌কের ভেত‌রের সব উচ্ছাস
বাঁ‌চি‌য়ে রাখতে পারত।
গাঢ় কমলায় খাতার ক‌য়েকটা পৃষ্ঠা ভরা,
বাংলা বই‌য়ের কিছু সাদা কা‌লো ছ‌বির
মুখ, পোষাকে র‌ঙিন সম্পাদনা,
আর সস্তা সাইন পে‌নের
লাল সবুজ কা‌লি‌তে আঁকা জাতীয় পতাকায়
অনা‌বিল সুখ পাওয়া যেত।
প্রকৃ‌তির সব সবুজ ঐ পতাকার ম‌ধ্যে
ঘুর পাক খে‌য়ে
পড়ার টে‌বিল থে‌কে লা‌ফি‌য়ে লা‌ফি‌য়ে
স্কু‌লের বে‌ঞ্চি‌তে ‌গি‌য়ে গড়াত।
এক টাকার চানাচু‌রে এক পয়সার
লবনটা কি রকম তৃ‌প্তি আ‌নে,
তা ঐ বয়সটাই জা‌নে।
আর আ‌মি জা‌নি।

এখনকার দিনগু‌লি কেবল দিন লি‌পির
‌নিয়‌মে চ‌লে।
‌সেই আ‌মিতে চানাচু‌রে অরু‌চি,
কমলায় উথা‌লি পাথা‌লি নৃত্য ক‌রে না,
গাঢ় সবু‌জে চোখ পু‌ড়ে যায়।
অ‌ফি‌সের চেয়ার থে‌কে নীল তোয়া‌লে
প্রায়শ মে‌ঝে‌তে খ‌সে প‌ড়ে,
ফেরার প‌থের ‌মো‌ড়ে বিল‌বোর্ড,
মু‌দি ম‌নোহা‌রির সব সাইন‌বোর্ড
বাসার শয্যা ঘ‌রের চাদ‌রের বুননে
নীল নকশা ঘু‌রে বেড়ায়।
প্রকৃ‌তির মা‌ঝেও এখন
নীল ‌নোনা জ‌লের গন্ধ।
বু‌কের চারপা‌শটায় নীল র‌ঙের
ভারী কাপ‌ড়ের আ‌স্তিন
জাপ‌টে ধ‌রে।

অসম‌য়ের ডাক
-- নজরুল জা‌মিল


চন্দ্র গ্রহণ কা‌লে তোমার সা‌থে
আমার দেখা,
‌সেখা‌নে আ‌লো দি‌য়ে তুমি
দীপ জ্বালা‌তে চাও!
এতটা উদ্যম তোমার হা‌তে!

পদ্মভুক স‌র্পের বসবাস
আমার দী‌ঘির মিঠা জ‌লে,
সেখা‌নে ছোট্ট ডি‌ঙি নি‌য়ে
ওপা‌রে যা‌বে!
অসম সাহস কি তোমার আ‌ছে!

নষ্ট উই‌পোকায় সয়লাব
আমার ঘ‌রের আড়,
দমকা বাতা‌সে নড়বড়
প্র‌তিটা খিলান ।
এক খন্ড কাঠ দি‌য়ে
সব জু‌ড়ে ফেল‌বে!
এত শক্ত বু‌কের পাটা তোমার!

‌বাগা‌নের সব গোলাপ মৃতপ্রায়
শুকনো গুল্মগু‌লো ঝো‌পের আড়াল
মা‌টি ভর দি‌য়ে গু‌টিসু‌টি খায়।
‌সেখা‌নে এক অঞ্জলী জল সিঞ্চ‌নে
লাল ফুল ফোটা‌বে!
‌এমন নির্মল জ‌লের বেসা‌তি
তোমার উষ্ণ স‌রোব‌র!

* অ‌দেখা চিরকুট
-- নজরুল জা‌মিল
বু‌কের ম‌ধ্যে জমে থাকা একটা কথা
কোন ‌এক নি‌শি রা‌তে তার হাত
ধ‌রে বলার ছিল,
‌চিরকু‌টে লেখা জমা‌নো হাজার
লাইন কথার ই‌তি টে‌নে
‌যেখা‌নে তাহার নাম প্র‌থিত,
‌সেখা‌নে আনম‌নে, মৃদু লোক
লজ্জার অন্তরা‌লে কাগজ থে‌কে
নাম মু‌ছে দিলাম,
নামটা দি‌য়ে কি হ‌বে!
শুধু - ভালবা‌সি তা‌কে,
এটাই যেন হাজার লাইন‌কে
‌ডি‌ঙি‌য়ে, অ‌নেক রা‌তের ঘুম জাগা
সল‌তে পোড়া‌নো আ‌লো বি‌লোয় ।

অবাক করা সব কা‌লির রং,
কাগ‌জের মণ্ড পা‌কি‌য়ে, কাঁপা কাঁপা
হা‌তের আঙু‌লের অগ্রভাগে,
‌চিন্তা শ‌ক্তির দৈন্যতা অ‌তিক্রম ক‌রে
একটা লাইন আ‌মি লিখ‌তে
‌পে‌রে‌ছিলাম- তা‌কে ভালবা‌সি।

আকাশ ভেদ ক‌রে, মাঝ রা‌তে
যখন অশান্ত বৃ‌ষ্টিগু‌লো ঝরা
শুরু করত,
ম‌নে কেবল প্রচন্ড ইচ্ছাগু‌লো
আ‌ন্দো‌লিত হয়,
‌চিরকু‌টের শেষ পৃষ্ঠাটা হা‌তের
ফাঁ‌কে লু‌কি‌য়ে, একবার ছু‌টে য‌দি যাই!
‌দেখুকনা একবার, আ‌মি লি‌খে‌ছি,
অত সময় ক‌রে পড়‌তে হ‌বে না।
‌শে‌ষের লাইনটাতেই আছে
-তা‌কে ভালবা‌সি।

বৃ‌ষ্টি গড়া‌তে গড়া‌তে রাত
গভীরতর, সুনসান হয়
‌ঢেউ টি‌নের চাল গ‌ড়ি‌য়ে
এক সমূদ্র পা‌নি, আমার দ‌রিদ্র
কু‌টি‌রের পাশ দি‌য়ে
ঝি‌রি ঝি‌রি বর্ষ‌ণে যখন হাও‌রের
বুক ভ‌রে দেয়,
আমার বু‌কের ম‌ধ্যে উজার করা
গভীর মমতা আর্তনাদে কাতরায়,
যাইনা ছু‌টে একবার!
এপাড়ার শেষ মাথায় তার ঘর।
‌চিরকুটটা একবার দেখুক,
বৃ‌ষ্টির জলে ভিজ‌তে দেই‌নি,
আমার জ‌ল লে‌গে জ্বর হোক,
‌চিরকু‌টের কাগজটা ঠিক
সিনার ভাঁ‌জে আগ‌লে এ‌নে‌ছি,
তা‌কে যে ভাল‌বে‌সে‌ছি,
একবার সে দেখুক, লেখা আ‌ছে
‌শেষ লাই‌নে- তা‌কে ভালবা‌সি।

শী‌ত জড়া‌নো রা‌তের শি‌রিষ বনে
‌ঝোঁ‌প ঝা‌রের শেয়ালগু‌লো
একটা গরম কম্ব‌লের দা‌বি‌তে,
যখন গোটা মহল্লার ঘুমন্ত
মানু‌ষের নীরবতা ভাঙে,
‌মি‌ছি‌লে শোর‌গোল ক‌রে,
রাত গভীরতর হ‌লে শি‌শি‌রের
অশ্রু আ‌রো ভারী হ‌য়,
আমার গা হিম হ‌য়ে আ‌সে।
কাগজটা চাদ‌রের ভাঁ‌জে লু‌কি‌য়ে
একবার দৌ‌ড়ে য‌দি যাই ও‌দিকটায়!
কনক‌নে ঠান্ডার দাপু‌টে
শ‌ক্তি দি‌য়ে জাপ‌টে ধ‌রে বলেই ফেলি!
একবার চোখ মে‌লে দেখুকনা!
চিরকুটটাতে সব লেখা
আ‌ছে, শেষ লাই‌নে- তা‌কে ভালবা‌সি।

২৮ জুলাই, ২০১৮

স্ব‌প্নে জে‌গে থা‌কি
-- নজরুল জা‌মিল


আ‌মি নদী‌কে ভালবাস‌তে বাস‌তে
সাগর‌কেও ভালবে‌সে ফে‌লি।
সাগ‌রের লবন জ‌লে নে‌মে
দু‌বেলা আনন্দ স্নান শুরু ক‌রি।
বেলাভূ‌মি‌তে দিনমান হেলান
‌দি‌য়ে প্রবাল পাথ‌রের গান শু‌নি,
সূর্য রশ্মির মৃদু উত্তাপ শু‌ষি।
দূর সমূ‌দ্রের ঢেউগু‌লো বু‌কের ম‌ধ্যে
আছ‌ড়ে পড়ে গহী‌নে লু‌কো‌তে দে‌খি।
‌দিগন্ত বিস্তৃত আ‌লোক রেখা
আমার নীল চোখের ক‌র্নিয়া‌য়
দাপ‌টে বেড়া‌নোর স্ব‌প্নে জে‌গে থা‌কি।

মোহনা থে‌কে গ‌ড়ি‌য়ে আসা
‌মরা নদীর পি‌ঠে ভর ক‌রে
শুধু ‌একটা স্বপ্ন ডিঙা আ‌সে না।
তাতার বেদুই‌নের দল ছে‌ড়ে আসা
কোন যুবাও ওপা‌রে যাওয়ার আশায়
আকন্ঠ জ‌লে না‌মে না।

সমা‌রোহ
-- নজরুল জা‌মিল
তোমার জন্য প্রতীক্ষা ছিল,
একটা স্বপ্ন ছিল।
এক ধর‌ণের কামনার ইন্দ্রজাল
‌ভেতর থে‌কে পুড়‌ছিল।
‌তোমার জন্য মায়াবতীর
হৃদয় নিংড়ানো
একটা মায়া ছিল,
সব‌কিছুর জন্য একটা ভীষণ যুদ্ধ
অপ‌রিহার্য হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছিল।
আমার আন্ত‌রিক অ‌পেক্ষা ছিল
‌বিজয়‌বে‌শে তোমার আগম‌নের।

সমা‌রোহ
-- নজরুল জা‌মিল
তোমার জন্য ভীষণ অপেক্ষায় আছি।
এক সহস্র বছর ধরে
উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছি।
অনেক উঁচুতে থাকা দাম্ভিক মেঘ
চুড়ায় আটকে আছে,
লেপ্টে থাকা বরফ কখন গলবে
কখন পাহাড় চুয়ে ঝর্ণার জল বেরোবে
আমি অপেক্ষায় আছি।

আমি একান্ত নির্জনতম দিন ও রাত কাটাচ্ছি
আমার এখানে যান্ত্রিকতার ছোঁয়া একদমই নেই
এখানে শুধু মেঘ, কুয়াশা আর বরফ গলা নদী।
আমি নিজেও প্রচন্ড রকম অযান্ত্রিক মানুষ।
কেবল অপেক্ষায় থাকি।
আমার রাজ্যের সভ্যতায় জাকারবার্গ কিংবা এডিসনের
আবিষ্কার পৌছোতে পারেনি ।
অসময়ের প্রেম, অসময়ের দেখা, অপরিনত ভাল লাগা
সমূহ নিয়ে বেঁচে থাকি।

ক্ষুধা তৃষ্ণা আমারো হয়
বরফ গলা নদীর জল এক আজলা ভরে নেই
আমার ওষ্ঠের কিনারা খুব সামান্য ভেজানোর অবসর হয়
মুহুর্তের মধ্যে আঙুলের ফাঁক বেয়ে সবটুকু চুইয়ে পড়ে।

এজন্য আমার আফসোস নেই
কারণ আমার জল রাখার কোন পাত্র নেই,
আমি অযান্ত্রিক যাযাবর মানুষ।
প্রকৃতির করুণায় বৃষ্টি মেঘ হইতেই
আমার বুকের মধ্যে জমে থাকা মরুভুমিতে একদিন
অঝোরে বৃষ্টির ধারা নামবে,
প্লাবিত হবে বুকের গভীরতম স্থান
আমি সেই অপেক্ষায় থাকি।

No comments:

Post a Comment

to drop Your valuable Comment please mention your name (Click to arrow sign and select name/url)